শাহীন রহমান, পাবনা
পুরো ক্ষেত জুড়ে থোকায় থোকায় সাদা ফুল। যেন সাদা ফুলের বিছানা। সেই ফুলে মধু নিতে ছুটছে মৌমাছিরা। পরম আদরে সেই ফুলের যত্ন নিচ্ছেন চাষীরা। কারণ দেখতে সাদা ফুল হলেও, এতে রয়েছে কালো সোনা। ফুল থেকে হয় কালো বীজ। বাজারে যার দাম অনেক। তাইতো পেঁয়াজের বীজকে বলা হয় কালো সোনা।
এ চিত্র পাবনার চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলা ইউনিয়নের কাটেঙ্গা গ্রামের। এই গ্রামের কৃষক হায়দার আলী দীর্ঘ বছর ধরে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন করে আসছেন। বর্তমানে তার জমিতে পেঁয়াজের ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে। কিছুদিন পর জমি থেকে সংগ্রহ করবেন বীজ। তাই পেঁয়াজ ফুলের জমি যত্ন নিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি।
জানা গেছে, ভাল ফলন পেতে মৌসুমের শেষ পর্যায়ে এসেও উপজেলার পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনকারী কৃষকেরা পেঁয়াজ ক্ষেতের বাড়তি যত্ন নিচ্ছেন। বীজ উৎপাদনের জন্য কন্দ লাগানো পেঁয়াজ ক্ষেতগুলো এখন সাদা ফুলে ভরা। আগামি কয়েকদিনের মধ্যে চাষীরা পেঁয়াজ ফুল থেকে বীজ সংগ্রহের কাজ শুরু করবেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পেঁয়াজ বীজের ভাল ফলন পাওয়ার আশা করছেন কৃষকরা।
চাটমোহর কৃষি অফিস সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে চাটমোহর উপজেলায় ১ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ৪৯০ হেক্টর জমিতে চারা পেঁয়াজ এবং ৬৪০ হেক্টর জমিতে কন্দ পেঁয়াজ চাষ হয়েছে।
এছাড়া বীজ উৎপাদনের জন্য কিছু কৃষক কন্দ পেঁয়াজ লাগিয়েছেন। ইতিমধ্যেই জমি থেকে কন্দ পেঁয়াজ তুলেছেন কৃষকেরা। আগামি কয়েকদিনের মধ্যে চারা পেঁয়াজ তোলা শুরু হবে। বীজ উৎপাদনের জন্য লাগানো কন্দ থেকে বীজ সংগ্রহের কাজও শুরু হবে কয়েকদিন পরেই। কন্দ পেঁয়াজের ফলন পাওয়া গেছে হেক্টর প্রতি প্রায় ১৪ মেট্রিক টন।
পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন কারী কৃষক হিসেবে ইতিমধ্যে সফলতা দেখিয়েছেন উপজেলার কাটেঙ্গা গ্রামের কৃষক হায়দার আলী। গত প্রায় বিশ বছর যাবৎ পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন করে আসছেন তিনি। চলতি মৌসুমে তিনি দুই বিঘার বেশি জমিতে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন করছেন।
আলাপকালে কৃষক হায়দার আলী জানান, জমিতে কন্দ পেঁয়াজ লাগানোর পূর্বে সাত থেকে আটবার চাষ দিয়ে মাটি প্রস্তত করতে হয়। জমি প্রস্তুতের সময় টিএসপি ও পটাস সারসহ বালাইনাশক প্রয়োগ করতে হয়। কন্দ লাগানো, দফায় দফায় সেচ, আগাছা পরিস্কার, পরিচর্যা, নিয়মিত বিভিন্ন রকমের বালাইনাশক স্প্রে বাবদ দুই বিঘা জমিতে সবমিলিয়ে তার প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রাকৃতিক দূর্যোগ না ঘটলে বিঘা প্রতি একশ কেজি পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
হায়দার আলী আরো জানান, পেঁয়াজ বীজের স্বাভাবিক দাম দেড় থেকে দুই হাজার টাকা কেজি । কোন কোন বছর বেশি দাম পেলে অধিক লাভবান হন পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনকারী কৃষকেরা। কোন কোন বছর প্রতি কেজি পেঁয়াজ বীজের দাম পাঁচ হাজার টাকাও হয়। এ বছর তিনি দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা লাভ করতে পারবেন বলে আশা করছেন।
এ বিষয়ে চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ এ মাসুম বিল্লাহ জানান, আমরা পেঁয়াজ চাষ সম্প্রসারণে কাজ করছি। চাটমোহরে সাধারণত তাহেরপুরী এবং কলসনগর জাতের পেঁয়াজ চাষ হয়ে থাকে। চলতি মৌসুমের আবহাওয়া পেঁয়াজ চাষের অনুকূলে থাকায় কন্দ পেঁয়াজ ভাল ফলন হয়েছে।
মাসুম বিল্লাহ জানান, পেঁয়াজের ভাল দাম পাওয়ায় কৃষক লাভবান হচ্ছেন। পেঁয়াজ বীজ চাষীরাও ভাল ফলন পাবেন আশা করছি। অল্প কিছুদিনের মধ্যে মাঠ থেকে বীজ উৎপাদনকারী কৃষকেরা পেঁয়াজ বীজ সংগ্রহের কাজ শুরু করবে।