1. nobinbogra@gmail.com : Md. Nobirul Islam (Nobin) : Md. Nobirul Islam (Nobin)
  2. bd.momin95@gmail.com : sojibmomin :
  3. bd.momin00@gmail.com : Abdullah Momin : Abdullah Momin
  4. bd.momin@gmail.com : Uttarkon2 : Uttar kon
রাজশাহী-মুর্শিদাবাদ নৌপথে শুরু হচ্ছে বাণিজ্য - Uttarkon
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৩:১৬ পূর্বাহ্ন

রাজশাহী-মুর্শিদাবাদ নৌপথে শুরু হচ্ছে বাণিজ্য

  • সম্পাদনার সময় : শুক্রবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ১২ বার প্রদশিত হয়েছে

মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী: বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে রাজশাহী থেকে নৌপথে পণ্য পারাপার করা হতো। ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদীঘি থানার ময়া নামক এলাকা থেকে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ পর্যন্ত পণ্য আনা-নেওয়া হতো। বাংলাদেশ থেকে পাঠানো হতো পাট ও মাছ। ভারত থেকে আসতো বিভিন্ন পণ্য। আবারও নৌপথে শুরু হচ্ছে বাণিজ্য। দীর্ঘ ৫৯ বছর পর চালু হচ্ছে নৌপথের এই রুট। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আগপর্যন্ত সুলতানগঞ্জ-ময়া ও গোদাগাড়ী-ভারতের লালগোলা নৌঘাটের মধ্যে নৌপথে বিপুল বাণিজ্য কার্যক্রম চালু ছিল। এরপর থেকে এই রুটটি বন্ধ হয়ে যায়। নৌ প্রটোকল চুক্তির আওতায় নৌবন্দরটি আবারো চালু হতে যাচ্ছে। নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় ও অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপ (বিআইডব্লিউটিএ) সুলতানগঞ্জ নদী-বন্দর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের বিষয়টি চূড়ান্ত করেছেন।
উদ্বোধনের পর রাজশাহীর সুলতানগঞ্জ ঘাটটি নদী বন্দরের মর্যাদা পাবে। সুলতানগঞ্জ নদী বন্দরের মাধ্যমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদবাদ জেলার সাগরদিঘি থানার ময়া ঘাট বা নদী বন্দরের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য শুরু হবে।
জানা গেছে, প্রাথমিক পর্যায়ে এই পথে ভারত থেকে সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল, পাথর, মার্বেল, খনিজ বালু ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের খাদ্য সামগ্রী বাংলাদেশে আসবে। এই পথে বাংলাদেশ থেকে বস্ত্র, মাছ, পাট ও পাটজাত পণ্য ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের কৃষিপণ্য ভারতে যাবে। এসব পণ্য মূলত বিভিন্ন স্থলবন্দরের মাধ্যমে সড়ক ও রেলপথে বাংলাদেশে আমদানি করা হয়।
সুলতানগঞ্জ নৌবন্দরের মাধ্যমে এসব পণ্য ভারত থেকে আমদানিতে সময় ও খরচ কমে যাবে। এতে উপকৃত হবেন বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, বছরে এই নৌপথে দুই দেশের মধ্যে হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হবে।
এই রুটটি চালুর বিষয়ে বেশ সচেষ্ট ও আন্তরিক ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। তিনি ২০২০ সালে একবার রুটটি চালুর উদ্যোগও নিয়েছিলেন। কিন্তু করোনার কারণে তা আর সম্ভব হয়নি। গেল সিটি নির্বাচনে তার ইশতেহারে সুলতানগঞ্জ থেকে ভারতের ময়া পর্যন্ত নৌরুট চালুর প্রতিশ্রুতি ছিল। নৌ-রুট চালুর মধ্য দিয়ে তাঁর ইশতেহার বাস্তবায়িত হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এই নৌবন্দরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন নৌপরিবহণ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপরে চেয়ারম্যান কমোডর আফির আহমেদ মোস্তফাসহ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সুলতানগঞ্জ নৌবন্দরকে নতুন করে সাজানো হচ্ছে। বেশ জোরেসোরে চলছে কাজ। পণ্য আনা নেওয়ার জন্য তৈরি করা হচ্ছে রাস্তা। পল্টুনও তৈরি রাখা হয়েছে, চলছে রঙের কাজ। পাশেই রাখা হয়েছে বিশাল আকৃতির একটি ট্রলার। এই ট্রলার দিয়ে পরীামূলকভাবে ভারতে পণ্য পাঠানো হবে। নৌবন্দর ঘাটের পাশে রাখা আছে সারি সারি ইট। পলি মাটিতে এই ইট দিয়ে রাস্তা তৈরি করা হবে।
সেখানে সব কাজের তদারকি করছিলেন বিআইডব্লিউটিএ উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ শাহ আলম। তিনি জানান, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আমরা খুব দ্রুত কাজ শেষ করছি। আগামী সোমবার এই নৌবন্দরে উদ্বোধন করা হবে। আমাদের এই কাজ শনিবারের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। এখানে নৌ ও পরিবহন মন্ত্রণালয় বিশাল প্রজেক্ট ঘোষণা করবে। এখানকার জমি অধিগ্রহণ করা হবে। সরাসরি জাতীয় সড়কে উঠবে।
তিনি আরও বলেন, এই নৌরুটে নাব্যতা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। এখানে অনেক পানি থাকে। পণ্য পরিবহন শুরু হলে চর আর থাকবে না। আর চর জাগারও সম্ভাবনা নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুলতানগঞ্জ থেকে ময়া নৌঘাটের নদীপথে দূরত্ব মাত্র ১৭ কিলোমিটার। সুলতানগঞ্জ নৌঘাটটি রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়ক থেকে মাত্র এক কিলোমিটার ভেতরে পদ্মা মহানন্দার মোহনায় অবস্থিত। সারা বছর সুলতানগঞ্জ পয়েন্টে পদ্মায় গভীর পানি থাকে। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের ময়া নৌঘাটটি মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গিপুর মহকুমা শহরের কাছে ভারতীয় ৩৪নং জাতীয় সড়কের সঙ্গে যুক্ত। ফলে সুলতানগঞ্জ-ময়া পথে নৌবাণিজ্য শুরু হলে পরিবহণ খরচ অনেকাংশে কমবে।
এই নৌবন্দর চালুর বিষয়ে খুশি স্থানীয়রা। বীর মুক্তিযোদ্ধা আতাউর রহমান বলেন, এখানে নৌবন্দর চালু হলে স্থানীয় বহু মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। যা আমাদের জন্য হবে ইতিবাচক। এক সময় এখানে নৌবন্দর ছিল তা পরে বন্ধ হয়ে যায়। তখন আমরা ছোট ছিলাম, স্কুলে পড়তাম। স্বাধীনতা যুদ্ধের ছয় বছর আগে এই বন্দর বন্ধ হয়ে যায়। তখন বিশাল বিশাল জাহাজ আসতো এখানে। পানিতেও ভরে থাকতো সারাণ।
তিনি আরও বলেন, সুলতানগঞ্জ ঘাটের পশ্চিম দিকে বিশাল জায়গা আছে সেখানে এই বন্দরটি করলে আরও ভালো হতো। সেখানে সরকারি জায়গাও পড়ে আছে। আর কিছুদূরেই চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শুরু। সেখান থেকে সরাসরি সড়কে ওঠা যাবে।
স্থানীয়রা বাসিন্দারা বলেন, সুলতানগঞ্জ গোদাগাড়ী পৌরসভার মধ্যে। আর এই এলাকায় মাদক কারবারীরা বেশি সক্রিয়। তাদের দমন করা দরকার। স্থানীয় নেতারা বন্দর দখল নিতে মরিয়া হয়ে আছে। তারা যেন সফল হতে না পারে সেদিকে ল্য রাখতে হবে।
বাংলাদেশের আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা জানান, বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন কাজের জন্য প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ পাকুড় ব্র্যান্ডের পাথর ও খনিজ বালুর প্রয়োজন হয়। বর্তমানে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও যমুনা রেলসেতুর মতো বড় বড় প্রকল্পে ব্যবহার হচ্ছে ঝাড়খণ্ডের পাকুর ব্র্যান্ডের পাথর; যা সড়ক ও রেলপথের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসছে। তবে সড়ক পথে এসব পণ্য আমদানিতে সময় যেমন বেশি লাগে, তেমনি খরচ বেশি পড়ে। নৌপথে এসব পণ্য আমদানি করা গেলে পরিবহণ খরচ বহুলাংশে কম পড়বে।
সুলতানগঞ্জ নৌবন্দর চালু প্রসঙ্গে বিআইডব্লিউটি এর চেয়ারম্যান কমোডর আরিফ আহমেদ মোস্তফা বলেন, বাংলাদেশ-ভারত নৌপ্রটোকলের আওতায় নদীপথে দুই দেশের মধ্যে কম খরচে বিপুল পরিমাণ বাণিজ্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। রাজশাহীর সুলতানগঞ্জে নৌবন্দরের কার্যক্রম চালু হলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার ময়া নৌবন্দরের সঙ্গে নদীপথে বাণিজ্য শুরু হবে। এর ফলে বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের ব্যবসায়ীরাই উপকৃত হবেন। সুলতানগঞ্জ-ময়া একটি লাভজনক ও চমৎকার নৌরুট হতে পারে। দুই পাড়েই অবকাঠামোগত কিছু সমস্যা এখনো রয়েছে। তবে সুলতানগঞ্জ বন্দর চালু হওয়ার পর পর্যায়ক্রমে সেগুলো ঠিক হয়ে যাবে। ভারত ময়া ঘাটও প্রস্তুত করেছে। উদ্বোধন হলে পণ্য আনা নেওয়া শুরু হবে।
এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ভারতের মুর্শিদাবাদের ধূলিয়ান থেকে গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ, রাজশাহী, পাকশী হয়ে আরিচাঘাট পর্যন্ত এই নৌরুটটি। দীর্ঘদিন এটির ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ ছিল না। আমি গত পাঁচ বছর আগে থেকে বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া, লেখা-লেখি বা ডিও লেটার দেওয়ার কাজ করেছি। এর ফলে এটা গতিশীল হয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ উভয়প-বিশেষ করে ভারত নৌপথে বাণিজ্য করতে আগ্রহী। বাংলাদেশ হয়ে ভারতের উল্টরপূর্ব সীমান্তের সাতটি প্রদেশ আছে। সেগুলোতে সুলভে মালামাল পৌঁছে দিতে তারা নৌপথে বাণিজ্য করতে চায়।
তিনি আরো বলেন, ভারতের প মুর্শিদাবাদের ধূলিয়ান, ময়া নৌবন্দর সম্পন্ন প্রস্তুত করে রেখেছে। সুলতানগঞ্জে একটি পল্টুন নিয়ে আসা হয়েছে। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে। পাঁচটি নৌযানের মধ্যেমে ট্রায়াল দেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে নদীর নাব্যতা ড্রেজিঙের মাধ্যমে বৃদ্ধি করা হবে। রাজশাহীর পশ্চিমে একটি নৌবন্দর হতে যাচ্ছে। যেটির খুব অল্প সময়ের মধ্যে কাজ শুরু হবে। নদী ড্রেজিং হচ্ছে আরিচাতেও। আরিচা থেকে উত্তরে ব্রহ্মপ্রত্র নদ হয়ে আসামের নৌবন্দরে মালামাল নিয়ে যেতে পারবে।
সুলতানগঞ্জ-ময়া নৌপথটি খুবই সম্ভাবনাময় একটি বাণিজ্য পথ। এই পথে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য শুরু হলে বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশই বিপুলভাবে লাভবান হবেন বলে তিনি আশাবাদী।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরও খবর
Copyright &copy 2022 The Daily Uttar Kon. All Rights Reserved.
Powered By Konvex Technologies