মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী: রাজশাহী মহানগরীতে অটোরিক্সা ছিনতাইয়ের অভিযোগে ছিনতাইকারী চক্রের ৮ জন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। দল বেঁধে অটোরিক্সা ছিনতাই করতেন তারা! মঙ্গলবার (৯ মে) রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মোঃ রফিকুল আলম।
গ্রেফতারকৃতরা ছিনতাইকারীরা হলো: ১। মোঃ মুকুল হোসেন (৩৫), ২। মোঃ রাব্বী আলী (২৮), ৩। মোঃ শিহাব আলী (২১), ৪। মোঃ নাজমুল ইসলাম (২৪), ৫। মোঃ নাজিউর রহমান মৃদুল (২২), ৬। মোঃ রকি (২৮), ৭। মোসাঃ সুমাইয়া আক্তার রিমা (২৪) ও ৮। মোঃ আশরাফ আলী (৫৪)।
মোঃ মুকুল হোসেন রাজশাহী মহানগরীর পবা থানার মারিয়া এলাকার আসলাম আলীর ছেলে, বর্তমানে সে কাটাখালী থানার শ্যামপুর থান্দারপাড়ার বাসিন্দা, মোঃ রাব্বী আলী কাটাখালী থানার শ্যামপুর থান্দারপাড়ার মৃত নাসের আলীর ছেলে এবং একই এলাকার মৃত পালানের ছেলে শিহাব আলী। মোঃ নাজমুল ইসলাম মতিহার থানার চরশ্যামপুর এলাকার মোঃ শুকচাঁদের ছেলে এবং ডাসমারী পূর্বপাড়ার মোঃ মুনছুর রহমানের ছেলে মোঃ নাজিউর রহমান মৃদুল। মোঃ রকি কাটাখালী থানার শ্যামপুর থান্দারপাড়ার মোঃ আশরাফ আলীর ছেলে এবং রকির স্ত্রী মোছাঃ সুমাইয়া আক্তার রিমা ও সমসাদীপুর এলাকার মৃত মোতালেব আলীর ছেলে মোঃ আশরাফ আলী।
আরএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) রফিকুল আলম জানান, মতিহার থানাধীন পশ্চিম বুধপাড়া এলাকার অটোরিক্সা চালক শাহাজ উদ্দিন (৪৫) গত ৬ মে রাতে রাজশাহীর সাহেববাজার রহমানিয়া হোটেলের সামনে ভাড়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এসময় তিন ছিনতাইকারী যাত্রীবেশে তাকে কাটাখালি থানার মাহেন্দ্রা পুলিশ ফাঁড়ী এলাকায় ভাড়ায় যাওয়ার কথা বলেন। পরে চালক ওই তিনজনকে নিয়ে রওনা হন। তারা মাহেন্দ্রা বাইপাস মহাসড়ক এলাকায় পৌঁছালে ছিনতাইকারীরা তাকে থামতে বলে। সেখানে তারা অটোরিক্সা থেকে নেমে একটি দোকান থেকে সিগারেট নিয়ে আবার ফিরে আসে। হঠাৎ যাত্রীবেশে অটোরিক্সা পেছনে বসে থাকা দুইজন ছিনতাইকারী চালক শাহাজ উদ্দিনকে গামছা দিয়ে দুই হাত বেঁধে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কিল ঘুষি মারতে থাকে।
এ সময় তারা তাকে খুন করার ভয় দেখিয়ে নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন জোর করে কেড়ে নিয়ে দৌঁড়ে হরিয়ানের দিকে চলে যায়। অটোরিক্সা সামনে যাত্রীবেশে বসে থাকা তাদের অপর সহযোগী অটোরিক্সা নিয়ে বেলপুকুরের দিকে চলে যায়। পরে তিনি এ ঘটনায় কাটাখালি থানায় অভিযোগ করেন।
এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশের একটি টিম আসামিদের গ্রেপ্তার ও অটোরিক্সা উদ্ধারে অভিযানে নামে। কাটাখালি থানার টিম আরএমপি সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সহায়তায় অপরাধীদের সনাক্ত করে। এরপর সোমবার (৮ মে) বিকাল পোনে চারটায় গোপন তথ্যের ভিত্তিতে মহানগরীর কাটাখালী থানার শ্যমপুর থান্দারপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছিনতাইকারি শিহাব আলীকে গ্রেফতার করা হয়। এসময় শিহাবের কাছ থেকে ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোনটি উদ্ধার হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শিহাব জানায়, তার অপর দুইজন সহযোগী মুকুল ও রাব্বী। তারা তিনজন এক সঙ্গে এ ছিনতাইয়ের ঘটনাটি ঘটায়। শিহাবের দেওয়া তথ্য মতে পুলিশ শ্যামপুর থান্দারপাড়া থেকে মুকুল ও রাব্বীকে গ্রেপ্তার করে।
জিজ্ঞাসাবাদে তারা তিনজন ছিনতাইয়ের ঘটনা স্বীকার করে। তারা আরও জানায় ছিনতাইকৃত অটোরিক্সাটি বিক্রির জন্য তাদের সংঘবদ্ধ চক্রের সহযোগী নাজমুল হোসেন, নাজিউর রহমান মৃদুল, রকি ও সুমাইয়া আক্তার রিমাকে দিয়েছে। তারা অটোরিক্সাটি খুলে ছোট ছোট অংশে বিভক্ত করার জন্য সুমাইয়া আক্তারের বাড়িতে রেখেছে বলেও জানায়।
তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ সুমাইয়া আক্তার রিমা ও তার স্বামী রকি এবং ভাই নাজমুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে। এসময় সেখান থেকে অটোরিক্সার ব্যাটারিগুলো পাওয়া যায়নি। তবে বিভিন্ন অংশ জব্দ করা হয়। এরপর অপর সহযোগী মৃদুলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা জানায়, তারা একটি ছিনতাইকারী চক্র। তারা দল বেঁধে ছিনতাই করে। অটোরিক্সার ব্যাটারিগুলো তাদের সহযোগী আশরাফ আলীর মোটর পার্টসের দোকানে বিক্রির জন্য দিয়েছে। এরপর পুলিশের আশরাফকেও গ্রেপ্তার করে। পরে ছিনতাই হওয়া অটোরিক্সার চারটি ব্যাটারি উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামিরা সকলে সংঘবদ্ধ ছিনতাই চক্রের সদস্য। তাদের বিরুদ্ধে কাটাখালী থানায় একটি ছিনতাই মামলা রুজু করা হয়েছে।