বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, একজন আজিজ, বেনজীর নয়, হাজার হাজার আজিজ-বেনজীর তৈরি করেছে এই আওয়ামী লীগ। বুধবার রমনা ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব মন্তব্য করেন। দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৩তম শাহাদৎ বার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে বিএনপি।
নিউইয়র্কের একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা তথ্য তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদৎ এর দিনে ঢাকার অলি গলি ছিল নীরব, নিথর ও পুরো দেশে নেমেছিল শোকের ছায়া। যেদিন তার লাশ ঢাকায় আনা হয়েছিল সেদিন সেনা সদস্যরা কোনো প্রোটোকল মানেনি। তারা হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল। কান্নায় ভেঙে পড়েছিল সবাই। এমনকী দেখছি জানাজায় ইমামকে বলতে ‘আল্লাহ বাংলাদেশকে রক্ষা করো ।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জিয়াউর রহমান বাকশাল যোগ দিয়েছিলেন। এটি মিথ্যা কথা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, জিয়াউর রহমানকে একটি ফরম দিয়েছিল, তিনি সেই ফরম ফাইলের নিচে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ওই সময় চালু ছিল সরকারি সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের বাকশালে যোগ দেয়া বাধ্যতা ছিল, কিন্তু তিনি যোগ দেননি।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান জাতীয়তাবাদ এর নতুন ধারণা দিয়েছিলেন। এটা একটা নতুন সূচনা। মুসলিম ,হিন্দু, সকল ধর্মের জাতি ঐক্যবদ্ধ করতে সকল ভাষাভাষী মানুষের জন্য জাতীয়তাবাদ গড়ে ছিলেন। সেটি পরিচয় আমরা বাংলাদেশী।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের পুনর্জন্ম হয়েছিল জিয়াউর রহমানের হাত ধরেই । তিনি বলেছিলেন‘রাজনীতি হবে কৃষকের, শ্রমিক জনতার। তৃণমূল মূল থেকে রাজনীতিতে উঠে আসবে’। জিয়াউর রহমানের কৃতিত্ব কখনো জাতি অস্বীকার করবে না। আওয়ামী লীগ আজ এই মহান নেতাকে খলনায়ক বানানোর চেষ্টা করেছে। ক্ষণজন্মা মানুষটিকে নিয়ে তারা উল্টাপাল্টা কথা বলে।
জনগণ সিদ্ধান্ত নিবে কে কার বিচার করবে সরকারের প্রতি এমন প্রশ্ন রেখে মহাসচিব বলেন, ইতোমধ্যে বিচার হয়েই গেছে। নির্বাচন দেন না কেন? আমরা বলিনি, আমাদেরকে ক্ষমতায় বসিয়ে দাও। আমরা বলি, নিরপেক্ষ নির্বাচন দাও, জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে। তারা জানে, নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় তারা ১০ শতাংশ ভোটও পাবে না।
পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদ ও সেনা প্রধান আজিজ আহমেদ প্রসঙ্গ তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, বেনজীরকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পরও তাকে পুলিশ প্রধান বানিয়েছিল আওয়ামী লীগ। একজন আজিজ নয়, বেনজীর নয়, হাজার হাজার আজিজ, বেনজীর তৈরি করেছে এই আওয়ামী লীগ। এরা বর্গিতে পরিণত হয়েছে। টাকা পাচার করে দেশকে শূন্য করেছে। লুটপাট, লুণ্ঠন করে সব শেষ করেছে। এ দায় সরকারকেই নিতে হবে।
‘এই দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র চালু করেছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি জনগণের চাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা চালু করেছিলেন।’
মির্জা ফখরুল বলেন, বীরের যে আত্মত্যাগ ও মায়ের অশ্রুধারা কি বিফলে যাবে? না। আসুন আমরা সবাই বেরিয়ে পরি। যারা এ দেশের সংস্কৃতি দেশকে ধ্বংস করে এই দানবদের পরাজিত করতে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করি। সকলের প্রতি এ আহ্বান জানান তিনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, এই দেশটাকে রাঘব বোয়ালদের হাতে চলে যাচ্ছে, গিলে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ দেশের গণতন্ত্র নস্যাৎ করা হচ্ছে। এই অগণতান্ত্রিক যা করছে কোনোটাই দেশের পক্ষে যাচ্ছে না। তারা নিজের জন্য সব করে যাচ্ছে। এ সরকার কখনো মানুষের মঙ্গল চায়নি। এরা স্বাধীনতাও চায়নি। আর্মি জিয়াউর রহমানই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল। আর আওয়ামী লীগ সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে বাকশাল কায়েম করেছিল। নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগকে জিয়াউর রহমানই রাজনীতির করার সুযোগ করে দিয়েছিল। অথচ বাকশাল তারা বিলুপ্ত হয়েছিল।
সভাপতির বক্তব্যে মেজর অব: হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আজ এই দেশ চোরের দেশ। সেনাবাহিনীর প্রধান আর পুলিশ প্রধান চোর। এটাই হলো দেশ। মুক্তিযুদ্ধের সমস্ত স্বপ্ন ধূলিসাৎ করেছে আওয়ামী লীগ।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর অব: হাফিজ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ড মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, ডা: এজেডএম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম।
উপস্থিতি ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না, সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুন হাসান, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির, চেয়ারপারসনের প্রেস উইং কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার, মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান প্রমুখ।