মাগুরা সদর উপজেলার জগদল গ্রামে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে একই দিনে ৪ জন নিহতের ঘটনায় পালটা হামলার ভয়ে এলাকা পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকলেও জানমালের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় অনেকেই ঘরের মূল্যবান আসবাবপত্র থেকে শুরু করে লেপতোশক পর্যন্ত নিয়ে নিরাপদ স্থানে সরে পড়ছেন। এদিকে মাগুরায় নির্বাচনে প্রার্থিতা এবং সামাজিক দলাদলি নিয়ে একই দিনে ৪ জন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ২৪ ঘণ্ঠা পার হলেও এ ঘটনায় থানায় কোনো মামলা হয়নি। তবে আজ বিকাল ৫টার পর ময়নাতদন্ত শেষে লাশ নিহতদের পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এলাকাবাসী জানান, জগদল গ্রামে জগদল ইউনিয়নের বর্তমান ইউপি মেম্বার নজরুল ইসলামের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনের পূর্বে তিনি ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। কিন্তু বিগত নির্বাচনে সৈয়দ রফিকুল ইসলাম নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হওয়ার পর নজরুল মেম্বার বিএনপির রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে রফিক চেয়ারম্যানের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থাকা শুরু করেন। অন্যদিকে দক্ষিণ জগদল গ্রামের প্রভাবশালী মাতবর সবুর মোল্লা ও তার সমর্থকরাও অতীতে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও ওয়ান ইলেভেনের পর স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে মিশে যান। স্থানীয়রা জানান, আসন্ন ইউপি নির্বাচনে দক্ষিণ জগদল গ্রামের প্রভাবশালী মাতবর সবুর মোল্লা ও তার সমর্থকরা বর্তমান চেয়ারম্যান রফিক এবং নজরুল মেম্বারকে ছেড়ে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী জাহিদ হাসান এবং অপর মেম্বার প্রার্থী সৈয়দ আলিকে সমর্থন দিয়েছেন। এ ঘটনা নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই এলাকায় বেশ উত্তেজনা চলছিল; যার ধারাবাহিকতায় শুক্রবার সবুর মাতবরদের ওপর হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নজরুল মেম্বারের সমর্থকরা জগদল গ্রামের রাস্তার ধারে হাকিমের চায়ের দোকানের সামনে কুপিয়ে সবুর মাতবর, ছোট ভাই কবির মোল্লা, চাচাতো ভাই রহমান মোল্লাকে কুপিয়ে জখম করে। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথেই তাদের মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পর বিকাল ৫টার দিকে গ্রামের একটি মাছের ঘেরের মধ্যে নজরুল মেম্বারের সমর্থক ইমরান নামে এক যুবককে সড়কির আঘাতে খুন করা হয়। এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ গ্রামে পৌঁছলে সুবিধাজনক সময়ে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন নিহত সবুর মাতবরের ভাতিজা মাহফুজ মোল্লা। তিনি এ হত্যাকাণ্ডের জন্য বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ রফিকুল ইসলাম এবং নজরুল মেম্বারকে দায়ী করে বক্তব্য দেন। গত কয়েক দিন ধরে এলাকায় চলা বিরোধ মীমাংসার কথা বলে তাদের ডেকে নিয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
অন্যদিকে তাদের এ বক্তব্য অস্বীকার করেছেন জগদল ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ রফিকুল ইসলাম। এ ঘটনার সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে তিনি জানান। পাশাপাশি হামলার ভয়ে গ্রামের সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে দাবি করেন তিনি। এ বিষয়ে মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পরিস্থিতি পুরোপুরি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে। গ্রামের মানুষ মালামাল নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার ঘটনা সত্য নয়। সূত্র-যুগান্তর