উত্তরকোণ ডেস্ক : স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, দেশে করোনার সংক্রমণ কমে এসেছে। এখন করোনা হার ২ দশমিক ৭ ভাগ। মৃত্যুর হারও কমে এসেছে। তবে করোনার সংক্রমণ বাড়তে তো সময় লাগে না। অনেক দেশে করোনার সংক্রমণ আবার বাড়ছে। এ কারণে আমাদেরকে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই দৈনন্দিন কাজ এবং আচার-অনুষ্ঠান করতে হবে। আজ শনিবার দুপুরে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় গড়পাড়া এলাকায় শুভ্র সেন্টারে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। দেশে করোনায় মৃত্যু কম কোনো যাদুর ছোঁয়ায় হয়নি, এর পেছনে অনেক শ্রম লেগেছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। স্বাস্থ্য খাতে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশে করোনার পরীক্ষার জন্য মাত্র একটি ল্যাব ছিল। এখন দেশে ৮০০টি ল্যাব হয়েছে। এখন করোনার চিকিৎসার জন্য দেশের হাসপাতালগুলোতে ১৮ হাজার শয্যা রয়েছে। করোনা আক্রান্ত জটিল রোগীদের জন্য কেন্দ্রীয় অক্সিজেন খুবই প্রয়োজন। দেশের সব বড় হাসপাতালেই এই কেন্দ্রীয় অক্সিজেন লাইন রয়েছে। যথাযথ চিকিৎসা পাওয়ায় দেশে করোনায় মানুষের মৃত্যুর হার কম। আমেরিকায় ৭ লাখ, ভারতে ৫ লাখ মানুষ করোনায় মারা গেছেন। আর ঘনবসতিপূর্ণ আমাদের দেশে ২৭ হাজার মানুষ মারা গেছেন। একটি মৃত্যুও আমরা চাই না। কোনো যাদুর ছোঁয়ায় মৃত্যু কম হয়নি, এর পেছনে অনেক শ্রম দিতে হয়েছে। সরকার বিনামূল্যে চিকিৎসা দিয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা সবচেয়ে বেশি ছোঁয়াচে রোগ। দেশে অনেক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছিল। শত বছরের মধ্যে এ ধরনের মহামারি আসেনি। সারা বিশ্বে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ মারা গেছেন। এই সময়ে আমাকে দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে কাজ করতে হয়েছে। করোনা নতুন একটি ভাইরাস, নতুন তার গতিবিধি। প্রথমে করোনা চিকিৎসা কেউ জানেন না, কীভাবে সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে তাও কেউ জানেন না। সেই অবস্থা থেকে আমরা করোনা মোকাবিলা শুরু করি। মন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা সদর এবং সাটুরিয়া উপজেলায় শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে সব পূজামণ্ডপ পরিচালনা কমিটির নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় ও অনুদান প্রদানে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।এ সময় জাহিদ মালেক বলেন, প্রতিটি ধর্মই শান্তি ও মানবসেবার কথা বলে। করোনার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে দুর্গাপূজা উদযাপন করতে হবে। প্রতিটি পূজামণ্ডপের আয়োজকদের স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের ব্যবস্থা করতে হবে। ধর্মীয় আচার-আচরণ পালন করতে হবে। তবে তা যেন অতিরঞ্জিত না হয়। কারণ এতে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। অপ্রীতিকরণ ঘটনা ঘটে।
জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আবদুল লতিফের সভাপতিত্বে এবং সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আফসার উদ্দিন সরকারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবদুল মজিদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুলতানুল আজম খান, সাংগঠনিক সম্পাদক সুদেব সাহা, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইসরাফিল হোসেন, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব সাহা এবং সাধারণ সম্পাদক অনির্বান কুমার পাল প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের হাতে এখন অনেক ভ্যাকসিন। দেশে প্রায় ২৫ ভাগ মানুষকে দুই ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। ১২ ভাগ মানুষকে প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে প্রায় ৫ কোটি ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। ৭০ থেকে ৮০ ভাগ মানুষকে টিকা দেওয়া গেলে পুরো দেশেই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ এসে যায়। যে পরিমাণ ডোজ অর্ডার দেওয়া হয়েছে, তাতে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ মানুষকে দেওয়া যাবে। জাহিদ মালেক বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের প্রায় ৫০ ভাগ মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। এ ছাড়া আগামী বছরের এপ্রিলের মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভাবনা রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদ্যালয়ের ১২ থেকে ১৭ বছরের শিশু শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করা হবে। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনে ৮০ লাখ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। এক দিনে একসঙ্গে কোনো দেশ এত পরিমাণ টিকা দিয়েছে বলে আমার জানা নেই। অনুষ্ঠান শেষে সদর এবং সাটুরিয়া উপজেলার ১৭৬টি পূজামণ্ডপের প্রত্যেকটিতে সরকারি অনুদান হিসেবে ৫০০ কেজি চাল দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।