উত্তরকোণ ডেস্ক : আমি প্রতিবন্ধি, আমার একটি হাত নেই। দুই মেয়ে মানুষের বাসায় কাজ করে যা ইনকাম করে সেটা দিয়েই সংসার চালাতে হয়। করোনার সময় এক মেয়েকে আবার কাজ থেকে ফেরত পাঠিয়েছে। এখন আমাদের রোজগার কমলেও বাজারে পণ্যের দাম বাড়ছে। আমরা যেগুলো খাই সেগুলার দামই বেশি বাড়ছে। কেমনে চলবো? ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের মাটিকাটা পানির পাম্প বস্তির আবুল কাশেম গণমাধ্যমকে এ কথা বলছিলেন। করোনার এই দুঃসময়ে আবুল কাশেমের মত নিম্ন আয়ের মানুষের কমেছে আয়।
সংসার চালাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন তারা। বাজারে পা রেখেই নিত্যপণ্যের আগুন দামে অসহায় হয়ে পড়ছেন ক্রেতারা।
আজ শুক্রবার রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন বাজারে গত সপ্তাহে পেঁয়াজের কেজি ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, আজ বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি। বড় দানার মসুর ডাল ছিল ৮৫ থেকে ৮৮ টাকা, আর এখন ৮৮ থেকে ৯০ টাকা। খোলা সয়াবিন তেল ছিল প্রতি লিটার ১২৭ থেকে ১৩০ টাকা, আজ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩০ থেকে ১৩৩ টাকা। ব্রয়লার মুরগি ছিল ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা আজ হয়েছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি। মাটিকাটা বাজারে বাজার করতে আসা ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের সিনিয়র শিক্ষক শফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, দফায় দফায় যে হারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে তাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজারে আসলে এখন পরিমাণে কম কিনতে হয়। সবজি, মাছ-মুরগি সব কিছুরই দাম বাড়তি। এই যে হঠাৎ করেই পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেল। কোনো মানে হয়? বাজারের কোন জিনিসটার দাম বাড়েনি বলেন? যে যেভাবে পারছে দাম বাড়াচ্ছে। এগুলো দেখার কেউ নাই? যেখানে সরকারি হিসাবেই পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে তারপরও বাজারে বেড়েছে দাম। হুট করেই দাম বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। হিমাগারে আলুর কেজি ১০ টাকা হলেও খুচরা বাজারে কিনতে হচ্ছে ২০ টাকায়। খোলা চিনির সপ্তাহ দুয়েক আগের বাড়তি দাম এখনো নামেনি।
চিনির দাম ৭৪ টাকা বেঁধে দেওয়া হলেও বিক্রি হচ্ছে ৭৮ থেকে ৮০ টাকা কেজি। আটা-ময়দার দামও বেড়েছে কেজিপ্রতি এক-দুই টাকা। বিভিন্ন সময় দাম বেঁধে দেওয়া হলেও সেই দরে বিক্রি হচ্ছে কি না সেটার তদারকিও নেই বাজারে। প্রতি কেজি আমদানি করা রসুন ১০ টাকা বেড়ে ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি জিরা ২০ টাকা বেড়ে ৪২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। খোলা ময়দা কেজিতে ৩ টাকা বেড়ে ৪৩ টাকায় বিক্রি হয়ে হয়েছে পাশাপাশি প্রতি কেজি ছোট দানার এলাচ ২০০ টাকা বেড়ে ৩৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
বিক্রেতারা বলছেন, অনেক দিন লোকসানে থাকায় অনেক খামারি উৎপাদন বন্ধ রেখেছেন। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে সামাজিক অনুষ্ঠান। ফলে হঠাৎ উৎপাদনের চেয়ে চাহিদা বেড়েছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজারের এমন অবস্থায় তদারকি বাড়ানো প্রয়োজন। নতুন একটা মূল্য কমিশন গঠন করতে হবে। তার আগ পর্যন্ত বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে তদারকি বাড়াতে হবে।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খুচরা বাজারে আকার ভেদে লাউ ৬০-৮০ টাকা, ফুলকপি ৪৫-৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি ঝিঙা ৮০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, পটোল ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, আকার ভেদে বেগুন ৬০-৮৫ টাকা, শিম ১০০ থেকে সর্বোচ্চ ১৪০ টাকা, টমেটো ১৪০-১৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া কাঁচামরিচ ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এদিকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার গণমাধ্যমকে বলেছেন, বাজারে পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তদারকি জোরদার করা হয়েছে। যৌক্তিক দামে পণ্য বিক্রি হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কোনো অনিয়ম পেলেই শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে।