ঢাকা : দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) উদ্দেশ করে হাইকোর্ট বলেছেন, ‘ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে যদি আপনারা এভাবে ছুটেন তাহলে দেশের উন্নয়ন হবে কীভাবে। যারা দেশের বাইরে বেগমপাড়া করছেন, যারা মালয়েশিয়া, আমেরিকায় টাকা পাঠাচ্ছেন; এগুলো বড় বড় মানি লন্ডারিং। তাদের ধরেন।’
অর্থপাচার মামলায় দিনাজপুরের এক ব্যবসায়ীর আগাম জামিনের শুনানিকালে আজ রোববার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান। পরে ৪০ কোটি টাকা অর্থপাচার মামলায় দিনাজপুরের ব্যবসায়ী ও জেলা যুবলীগ নেতা খলিলুল্লাহ আজাদ মিল্টনকে আট সপ্তাহের জামিন দেন আদালত। তবে জামিনের শর্ত হিসেবে আসামিকে পাসপোর্ট জমা দিতে হবে এবং তিনি দেশত্যাগ করতে পারবেন না বলে আদেশে বলা হয়। এর আগে গত ১৯ সেপ্টেম্বর দিনাজপুরে জেলা যুবলীগের সাবেক নেতা খলিলুল্লাহ আজাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা দায়ের করা হয়। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) উপ-পুলিশ পরিদর্শক রোকনুজ্জামান বাদী হয়ে দিনাজপুরের কোতোয়ালি থানায় এ মামলা করেন। আসামি খলিলুল্লাহ আজাদ জেলা যুবলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক। তিনি খানসামা উপজেলার পূর্ববাসুলী গ্রামের হাবিবুল্লাহ আজাদের ছেলে। এ মামলায় খলিলুল্লাহ আজাদের মা রহিমা খানমসহ অজ্ঞাতনামা দু–তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। খলিলুল্লার বিরুদ্ধে গত বছরের ২০ অক্টোবর খানসামা থানায় প্রতারণা, টেন্ডারবাজি, বালুমহাল ও জলমহাল দখলের অভিযোগে তিনটি মামলা হয়। পরে ১৯ নভেম্বর ঢাকার মোহাম্মদপুরের একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। প্রায় চার মাস জেলহাজতে থেকে জামিন পান তিনি। খানসামা থানার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই মামলার তদন্ত শুরু করেন সিআইডি। তদন্ত শেষে আসামি খলিলুল্লাহ আজাদের অবৈধ সম্পদের সন্ধান পায় সিআইডি। এর ভিত্তিতেই মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের (৪)২ ধারায় ৩৫ কোটি ৪২ লাখ ৩৭ হাজার ৫৮৫ টাকা অবৈধ আয়ের কথা উল্লেখ করে মামলা করা হয়। এ টাকার বেশির ভাগ এখন তাঁর হিসাব নম্বরে পাওয়া যাচ্ছে না। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন–২০১২ ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা–২০১৯ অনুযায়ী অনুসন্ধান করে প্রাপ্ত তথ্য–উপাত্ত ও সাক্ষ্যপ্রমাণ এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের দেওয়া ব্যাংক হিসাবসংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় অভিযুক্তের নামে মামলা করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত অর্থ সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক দিনাজপুর শাখায় ১২টি হিসাব নম্বর, মেসার্স সর্দার হাসকিং মিলের নামে তিনটি, মেঘনা ব্যাংক লিমিটেড রংপুর শাখায় মারিয়া ডেইরি অ্যান্ড ফেটানিং সেন্টারের নামে একটি, সর্দার হাসকিং মিলের নামে রুপালী ব্যাংক চেহেলগাজী শাখায় একটি, সোনালী ব্যাংকের দুটি শাখায় তিনটি হিসাব নম্বরে জমা ও উত্তোলন করেছেন। এসব ব্যাংক হিসাব নম্বরগুলোতে ২০১৩ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত ৩৪ কোটি ৮৩ লাখ ২৯ হাজার ৮১১ টাকা জমা হয়। অভিযুক্ত খলিলুল্লাহ আজাদের মায়ের নামে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক দিনাজপুর শাখায় ২০২০ সালে খোলা হিসাব নম্বরে ৫৯ লাখ সাত হাজার ৭৭৪ টাকা জমা হয়। বর্তমানে এ টাকার বেশির ভাগের হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যাংক হিসাবগুলোতে যে টাকা আছে, তা খুবই সামান্য।
মামলার এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সখ্য ও যোগাযোগ রেখে বিভিন্ন নিয়োগ বাণিজ্য ও টেন্ডারবাজি, সরকারি চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে অবৈধ অর্থ আয় করেছেন খলিলুল্লাহ আজাদ।