কুড়িগ্রাম : ছিটমহল বিনিময় প্রাক্কালে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী দাসিয়ারছড়া ছিটমহলে নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের হিড়িক পড়ে।তারই অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়া যায় শেখ ফজিলাতুন্নেছা দাখিল মাদ্রাসা, এ মাদ্রাসার সন্নিকটে আমিনুল ইসলাম মিয়ার বাড়ি। তিনি উপজেলার মধ্য কাশিপুর দাখিল মাদ্রাসার একজন এমপিওভুক্ত সহকারী মৌলভী শিক্ষক হলেও সেই সময় তিনি শেখ ফজিলাতুন্নেছা দাখিল মাদ্রাসা সুপারের দায়িত্ব পালন করেন। মাদ্রাসার শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতিসহ অসংখ্য মানুষের নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা আত্মসাতের একপর্যায়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে অভিযোগ পৌঁছে জেলা প্রশাসনের নিকট। জেলা প্রশাসনের পক্ষে তৎকালীন জেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল কাদের কাজী দুই দফা তদন্ত সম্পন্ন করে তদন্তে তিনি আমিনুল ইসলাম মিয়া অসংখ্য ও দুর্নীতির প্রমাণ পান তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন । আমিনুল ইসলাম মাদ্রাসায় নিজেকে সুপার হিসেবে জাহির করার প্রক্রিয়া থাকলেও তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় তিনি জনসমক্ষে গত ৩০জুন ২০১৮ তারিখে স্বহস্তে লিখিত ইস্তেফা প্রদান করেন। একইভাবে তিনি নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে ৩২ লক্ষ ৩৮ হাজার টাকার ১২ জন ব্যক্তির নিকট থেকে গ্রহণ করেছেন মর্মে অঙ্গীকার নামা প্রদান করেন । জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবার বর্গের নামে যে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দেশে বিদ্যমান রয়েছে এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের ঘোষণা গত ১৪ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে। শেখ ফজিলাতুন্নেছা দাখিল মাদ্রাসা জাতীয়করণের একটি খসড়া তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি হবার পর আমিনুল ইসলাম পুনরায় মাদ্রাসা সুপার হবার জন্য তৎপর হন এবং এজন্য সব ধরনের ষড়যন্ত্র চালাতে থাকেন।
এমপিওভুক্ত সহকারী মৌলভী শিক্ষক হয়েও দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠানে বিনা ছুটিতে অনুপস্থিত থাকায় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ দুই দফা কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন,কিন্তু তিনি তার জবাব না দিয়ে এবং কর্মস্থলে উপস্থিত না থেকে বরং দাসিয়ারছড়া শেখ ফজিলাতুন্নেছা দাখিল মাদ্রাসায় নিজেকে সুপার পরিচয় দিয়ে আসা-যাওয়া করছেন এবং প্রভাব খাটিয়ে সুপারের পদ দখলের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে শেখ ফজিলাতুন্নেছা দাখিল মাদ্রাসা মাদ্রাসার বর্তমান সুপার শাহনুর আলম অভিযোগ করেছেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবরে। বর্তমান সুপার শাহনুর আলম ও পদত্যাগী সুপার আমিনুল ইসলামের মধ্যে মাদ্রাসার কর্তৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্বে এলাকার অভিভাবক শিক্ষক শিক্ষার্থী এবং স্থানীয় জনতার মধ্যে বিভাজন হয়ে গেছে। ক্লাস সহ বিভিন্ন দিবস অনুষ্ঠানে তাদের মধ্যে প্রায় দ্বন্দ্ব-সংঘাতের ঘটনা ঘটছে। ফলে নব্য সরকারি হওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি পাঠদান কার্যক্রম সহ প্রশাসনিক ব্যবস্থা ভেঙ্গ পড়ে প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।ইতিমধ্যে উপরোক্ত বিষয়ে চ্যানেল সহ অসংখ্য জাতীয় পত্রিকায় সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে।
মধ্য কাশিপুর দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি মনিরুজ্জামান মানিক জানান, আমিনুল ইসলাম মিয়া এই মাদ্রাসার সহকারি মৌলভী হিসেবে কর্মরত আছেন, তিনি দীর্ঘদিন থেকে এই প্রতিষ্ঠানে বিনা ছুটিতে অনুপস্থিত, তাকে একাধিকবার নোটিশ করার পরও সে নোটিস এর কোন জবাব দেয়নি, করোনাকালীন সময়ের জন্য আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারিনি, এখন মাদ্রাসা খুলেছে বিষয়টি আমরা দেখব ।
মধ্য কাশিপুর দাখিল মাদ্রাসার সুপার আবেদ আলী জানান, আমিনুল ইসলাম দীর্ঘদিন থেকে এ মাদ্রাসায় অনুপস্থিত একাধিকবার তাকে নোটিশ করার পরও সে কোনো জবাব দেয়নি।
আমিনুল ইসলাম মিয়া জানান, আমি এখনো চাকরী ছাড়িনি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ আমার বিরুদ্ধে আইনি যা করার করতে পারে।
উপজেলা মাধ্যমিক অফিসার আব্দুল হাই জানান, আমি আসার পর থেকে বিষয়টি নিয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ আমার বরাবর কোন অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি দেখা হবে।
এ ব্যাপারে জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ শামছুল আলম জানান, এক শিক্ষক দুই প্রতিষ্ঠান চাকরি করার কোনো বিধান নেই। বিষয়টি মহা পরিচালক মহোদয় অবগত আছেন, তিনি ব্যবস্থা নেবেন ।