ঢাকা : দেশের সব মানুষের তথ্য নিয়ে অন্যান্য দেশের মতো একটি জাতীয় জনসংখ্যা রেজিস্টার (এনপিআর) তৈরি করতে চায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। এখানে সবার ব্যক্তিগত সব তথ্যই থাকবে। শূণ্য বছর থেকে শুরু করে সকল নাগরিকদের জনতাত্বিক ও বায়োমেট্রিক তথ্য সংরক্ষণ করা হবে এই রেজিষ্টারের মাধ্যমে।
এ সংক্রান্ত অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেছেন, বিদেশি সংস্থাগুলো আমাদের তথ্য নিয়ে বাণিজ্যিক ব্যবহার করছে। এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। মানুষের প্রাইভেসি রক্ষার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেছেন, সময়, খরচ ও জটিলতা এড়াতে ধীর স্থিরভাবে বসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই রেজিস্টার যাতে শক্তিশালী হয়। তথ্য সঠিক না হলে পরিকল্পনা সঠিক হবে না। দ্বৈততা পরিহার করতে হবে।
শেরেবাংলা নগরস্থ এসইসি সম্মেলন কক্ষে রোববার জাতীয় জনসংখ্যা রেজিস্টার (এনপিআর) তৈরি উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক কর্মশালায় মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী এই মন্তব্য করেন। পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে কর্মশালায় বক্তব্য প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান ও বিশেষ অতিথি পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম। বক্তব্য রাখেন পরিকল্পনা সচিব মোহাম্মদ জয়নুল বারি, আইএমইডির সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী, বিবিএসের মহাপরিচালক তাজুল ইসলাম, মন্ত্রিপরিশদ বিভাগের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন সংস্থার ব্যক্তিরা। মূল উপস্থাপনা তুলে ধরেন বিবিএসের পরিচালক (সেন্সাস উইং) ও যুগ্ম-সচিব ড. মো. শাহাদাত হোসেন।
বিবিএস বলছে, বাংলাদেশে ১৮ বছরের বেশি বয়সী নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে। কিন্তু তার কম বয়সী জনগোষ্ঠীর কোনো তথ্যভাণ্ডার নেই। আবার ১৮ ঊর্ধ্ব নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলেও এর মাধ্যমে পারিবারিক ধারা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। সবার তথ্য নিয়ে অন্যান্য দেশের মতো একটি জাতীয় জনসংখ্যা রেজিস্টার (এনপিআর) তৈরি করতে চায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। এনপিআরের মাধ্যমে পারিবারিক ধারা প্রস্তুত করা হবে। এতে ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রশাসনিক জটিলতা দূর হবে। এতে প্রত্যেককে জন্মের পরপরই অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং মৃত্যুর পরও তার তথ্য মুছে ফেলা হবে না।
বিবিএসের পরিচালক ড. মো. শাহাদত হোসেন বলেন, নতুন এনপিআরে শূন্য থেকে শুরু করে সব বয়সী বাসিন্দার জনতাত্ত্বিক ও বায়োমেট্রিক তথ্য স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা হবে। পাশাপাশি প্রত্যেকের জন্য একটি স্বতন্ত্র শনাক্তকরণ নম্বর দেয়া হবে। এর ফলে প্রত্যেককে সহজেই চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। এই তথ্যভাণ্ডারের মাধ্যমে সব ধরনের জনমিতিক পরিসংখ্যান, আগমন-বহির্গমন, জন্ম-মৃত্যু, বিবাহ-তালাক প্রভৃতি তথ্য-উপাত্ত প্রস্তুত করা সম্ভব।
পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, যে প্রেজেন্টেশন দেখলাম তাতে মনে হচ্ছে, এটা একটা কঠিন কাজ।এ ধরনের রেজিস্টার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটাকে সাজিয়ে গুছিয়ে উপস্থাপন করাটাই বড় চ্যালেঞ্জ। রেজিস্টার খাতে অভারলেপিং না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এতে সময় ও অর্থের অপচয় ঘটে। অর্থের অপচয় আমরা কোনো ভাবেই মানতে পারি না।
ড. শামসুল আলম বলেন, এটা একটি মাইলফলক হবে। এখানে নাগরিকদের সব তথ্যেই থাকবে। এটা জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে ডুপ্লিকেশন, ওভারলেপিং বা এ ধরনের বিষয়গুলো যাতে না হয়। বেইজ ইয়ার ডাটা দ্রুত ঠিক করা দরকার। জনশুমারির করছি এটা এক ধরনের শুমারি। আমাদের হাউজ হোল্ড ডাটা বেজ করেছি। সেখানেও কিছু তথ্য নেয়া হয়েছে। হাউজ হোল্ড ডাটা বেজ, এনআইডি ডাটা বেজ, জনশুমারি এবং এনপিআর সবগুলোই কিন্তু কাছাকাছি।
তিনি বলেন, আজ আমরা একটি মাইলফলকের সামনে দাঁড়িয়ে। এনপিআর ইউরোপের অনেক দেশ ও ভারতের অনেক রাজ্যেই রয়েছে। নেদারল্যান্ডসে এই এনপিআরের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়েছিল। সেখানকার নাগরিকরা তাদের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা চেয়ে ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তার জন্য আইন পরিবর্তন করতে বলেছিল। বলা হয়েছে, ব্যক্তিগত তথ্য বাণিজ্যিক করা হবে না। আমাদের এখানেও হয়তো আইনের পরিবর্তন করা লাগতে পারে। তিনি বলেন, জটিলতা ও সময় বাঁচাতে সব অথরিটির সাথে বসে সমন্বয় করতে হবে।