কুড়িগ্রাম: প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার পর অবশেষে ১২সেপ্টেম্বর রোববার দেশব্যাপি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো খুলে দেয়া হচ্ছে। কুড়িগ্রাম জেলার ৯ উপজেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে খোলার প্রস্তুতিমূলক কর্মযজ্ঞ ধোয়া-মোছা সহ অন্যান শিক্ষা বান্ধব এবং করোনা মোকাবেলায় স্বাস্থ্যবান্ধব পরিবেশ গঠনে গৃহীত নানা কর্মকান্ড হয়েছে সম্পন্ন। এরপরও উদ্বেগের বিষয় হলো চলতি বন্যায় নদী ভাঙ্গনে বিলিীন হয়েছে ৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ভাঙ্গনের মুখে ১৫টি বিদ্যালয়। আর বন্যার কারণে পাঠদানের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে ৮০টি বিদ্যালয়। মাঠ পর্যায় থেকে এসব হিসাব পাওয়া গেলেও সরকারি দপ্তরে সঠিক কোন তথ্য না থাকায় সঠিক ভাবে বলা মুস্কিল কত সংখ্যাক শিক্ষার্থী স্কুল খুললেও ঠিক এই সময়ে যেতে পারবে না।কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শহিদুল ইসলাম জানান, জেলায় করোনাকালীন সময়ে ১৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদী গর্ভেবিলীন হয়েছে। ভাঙ্গনের মুখে ১৫টি এবং বন্যাকবলিত আছে ৪৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। অথচ চলতি বছর উলিপুর উপজেলায় ৩টি, রৌমারীতে ৪টি ও রাজারহটে ১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়াগেছে। কুড়িগ্রামে তীব্র নদীর ভাঙ্গনে বিলিন হচ্ছে একের পর এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। হুমকির মুখে রয়েছে বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে হাজারো শিক্ষাথর্ীর ভবিষ্যৎ। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঠিকতা নিয়ে রয়েছে শিক্ষা বিভাগে ভিন্ন মত। দেশের উত্তরের বৃহত নদ-নদী বেষ্টিত জেলা কুড়িগ্রামে রয়েছে ১৬টি নদ-নদী। চলতি বর্ষা মৌসুমে বন্যার তেমন প্রভাব না পড়লেও থেমে নেই ভাঙ্গনের তীব্রতা। এতে করে বিলিন হচ্ছে ঘরবাড়ি আর ফসলি জমির পাশাপাশি একের পর এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নদীর পানি বৃদ্ধি-হ্রাসের সাথে ভাঙ্গন আরও ভয়াবহ রূপ নেয়ায় হুমকিতে পড়েছে বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তিস্তা,ধরলা,ব্রহ্মপুত্র,দুধকুমার এবং গঙ্গাধর নদীর পেটে গেছে ৪ উপজেলার ৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেগুলো হলো-উলিপুর উপজেলার পশ্চিম বজরা,চেরাগের আলগা,বগুলা কুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। নাগেশ্বরীর-আকবর আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,রাজারহাটের গতিয়াশাম বগুড়া পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,রৌমারীতে-গত বছর ভাঙ্গনের স্বীকার হয়ে স্থান্তারিত হলে চলতি বন্যাতেও ফলুয়ার চর এবং ঘুঘুমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আবারও ভাঙ্গনের স্বীকার হয়। এছাড়াও ঝুঁকিতে রয়েছে আরও ৭টি উপজেলার ২২টি বিদ্যালয়। এরমধ্যে ভূরুঙ্গামারীতে-১১টি,রাজিবপুরে-৩টি,উলিপুরে-২টি এবং সদর, নাগেশ্বরী,রাজারহাট, চিলমারী একটি করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ উলিপুরে-১টি মাদ্রাসা এবং ১টি উচ্চ বিদ্যালয়।
ভাঙনের কবলে পড়া স্কুল গুলোর মালামাল পড়ে আছে খোলা আকাশের নিচে। স্কুল নিমার্ণের জমি না পাওয়ায় কোমল মতি শিশুদের লেখাপড়া নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। বিলিন হওয়া স্কুল নিমার্ণের জন্য নতুন করে জমি না পাওয়ায় দুশ্চিন্তায় শিক্ষক,অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে ঝুঁকিপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রক্ষার জন্য বালু ভর্তি জিও ব্যাগ এবং জিও টিউব ফেলে হলেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না ভাঙ্গনের তীব্রতায়। বিলিন হওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশে পাশে কোন স্কুল না থাকায় কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর লেখাপড়া নিয়ে অনিশ্চতায় পড়েছেন অভিভাবক বৃন্দ। করোনায় দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা বঞ্চিত। অপরদিকে নদী ভাঙ্গনে বিদ্যালয় বিলিন হয়ে যাওয়া সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বাড়তি দুশ্চিন্তায় অভিভাবক মহল।
সরেজমিনে দেখাযায়, ভূরুঙ্গামারী ২নং পাইকেরছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি দুধকুমার নদীর ভাঙ্গন থেকে মাত্র ২০ফুট দূরে রয়েছে। বিদ্যালয়ের আসবাব পত্র সবকিছুই জরাজীর্ণ অবস্থায় তালা বদ্ধ হয়ে পড়েছে। কোন শিক্ষকের নেই খোঁজ।
ওই এলাকার বাসিন্দা জলিল মিয়া বলেন,এই স্কুল ভেঙ্গে গেলে হামার সন্তানের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাবে। সরকার যদি দ্রুত ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা না নেয় তাহলে স্কুলও ভাঙ্গবে পাশাপাশি গ্রামটাও বিলীন হবে।
নাগেশ্বরী উপজেলার ১১৮বছর বয়সের রঘুরভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও গঙ্গাধর নদীর ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে। শতবর্ষের উপর এই বিদ্যালয় থেকে নদী মাত্র ৫০মিটার দূরে রয়েছে। দ্রুত ভাঙ্গন রোধে কার্যকরি পদক্ষেপ না নিলে বিদ্যালয়টি যেন কোন মূহুর্তে বিলিন হবার শংকা রয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লস্কর আলীর বলেন,স্কুল ঘর ভেঙ্গে সরঞ্জামাদি বাড়ির আঙ্গিনা এবং রাস্তার পাশে ফেলে রাখা হয়েছে। এখন পর্যন্ত স্কুল পূর্ণ নির্মাণের জায়গা না পাওয়ায় স্কুলটি র্নিমাণে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
নাগেশ্বরী উপজেলার বল্লভের খাস ইউপি চেয়ারম্যান আকমল হোসেন বলেন,প্রত্যন্ত এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিলিন হয়ে গেলে সন্তানদের পড়ালেখা বন্ধ হবে এবং অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ার শংকা করেন তিনি।
জেলা শিক্ষা অফিসার শহিদুল ইসলাম বলেন, ভাঙনে বিলীন স্কুল গুলো পুণর্নিমানের জন্য স্থানীয় ভাবে জায়গা নিধার্রণের নির্দেশ দেয়ার পাশাপাশি ভাঙনের মুখ পড়া স্কুল গুলো রক্ষার জন্য জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলীকে চিঠি দেয়া হয়েছে। আর স্কুল খুলেদেয়ার ব্যাপারে সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার রংপুর অঞ্চলের উপ-পরিচালক মোজাহেদুল ইসলাম কুড়িগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলের বিদ্যালয়ের বাস্তব অবস্থা সরেজমিন পরিদর্শনে আসছেন। এছাড়া শিক্ষা বিভাগের সকল কর্মকর্তাকে কমপক্ষে ৫টি করে বিদ্যালয় পরিদর্শনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শামছুল আলম বলেন, চলতি বন্যায় এখন পর্যন্ত মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা বিলিন হয়নি এবং নদী ভাঙ্গনের ঝুঁকিতেও নেই। জেলার মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজ মিলে ৩৭৪টি এবং ২২২টি মাদ্রাসা প্রস্তুত শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য।