ডাকসুর ভিপিকে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেওয়া হয়েছে কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন যিনি ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত, তাকে কি ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেওয়া হয়েছে? বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার দোকানগুলোতে জরিমানা আদায়ের অধিকার কি তার রয়েছে? এরপরও কিন্তু তিনি জরিমানা আদায় করেছেন। সেই টাকা যাচ্ছে জামায়াতের বায়তুলমালে। এটার কি কোনও আইনগত ভিত্তি রয়েছে? রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ: নাগরিক ও জাতিবাদী জাতীয়তাবাদের সংকট’ শীর্ষক বইয়ের আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। জামায়াত ও শিবিরকে ইঙ্গিত করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বরাবরই আমরা দেখছি তাদের কর্মকা- হলো রাষ্ট্রের মধ্যে আরেকটা রাষ্ট্র করা। আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে লোহার খাট দিয়েছে। এটা কী রাজনৈতিক কোনও সংগঠন কিংবা ডাকসুর দায়িত্ব? সর্বোচ্চ শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ে উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় এতিমখানা নয়, এখানে ১০০ লোহার খাট দেবেন, খাবারের ডাইনিং টেবিল দেবেন। রুহুল কবির রিজভী বলেন, ৫ আগস্টের পর বিভাজনের অনেক সুর শোনা যাচ্ছে। অমুক খারাপ আমরা ভালো। বালু মহালের সঙ্গে বিএনপি জড়িত থাকলে, জামায়াতও জড়িত রয়েছে। সেটাও গণমাধ্যমে আসছে। কিন্তু সেটা বেশি করে ফলাও করে প্রচার হচ্ছে না। সিলেটের পাথর লুটের সঙ্গে জামায়াতের নাম পাওয়া যাচ্ছে। নারীঘটিত ঘটনার বিষয়েও জামায়াত নেতাদের নাম আসছে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিএনপি বিএনপি করছে। কিন্তু বিএনপি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, সেটা ফলাও করে বলছে না। তিনি আরো বলেন, বিএনপি একটা বড় রাজনৈতিক দল, বড় পরিবার। একটা পরিবারের মধ্যে দুষ্টু ছেলে থাকতে পারে। সেই ছেলেকে বাবা-মা শাসন করছে কিনা সেটা দেখতে হবে। এসব নিয়ে প্রথমে সরকারের এক উপদেষ্টা শুরু করলেন। এরপর একটি রাজনৈতিক দল পেছনে লেগেছে। খুব কায়দা করে নানাভাবে বিএনপির বিরুদ্ধে বয়ান তৈরি করা হচ্ছে। এসব বয়ান তৈরি করে কি বিএনপিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করা যাবে? বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, বিগত সরকার যে পরিমাণ লুটপাট করেছে, তা দিয়ে ১০০টি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যেত। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশের পাঁচ বছরের বাজেটের সমান বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, দেশের ধনিক শ্রেণি দুর্নীতির মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছে। এই দুর্নীতি সাধারণ মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে, আর একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী ফুলেফেঁপে উঠছে। মঈন খান বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান একজন সৎ ও আদর্শবান নেতা ছিলেন। তার বির“দ্ধে দুর্নীতি বা অসততার অভিযোগ আওয়ামী লীগও কোনোদিন আনতে পারেনি। তার সততা ছিল প্রশ্নাতীত। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন একটি সুস্থা রাজনৈতিক পরিবেশ এবং জবাবদিহিমূলক শাসন ব্যবস্থাা। জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো উন্নয়নই টেকসই হতে পারে না। মূল প্রবন্ধে ৭ নভেম্বর প্রজন্মের সদস্য ইয়াছির ওয়াদাদ তন্ময় বলেন, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ: সংকট উত্তরণের একমাত্র দর্শন। আমরা মনে করি, এমন বহুমুখী সংকটে সমাধানের একমাত্র পথ হলো বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। এটি বিভেদ নয়, বরং ভূখ-, সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্যকে শক্তিশালী করে। বিদেশি প্রভাবমুক্ত স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণের পথ প্রশস্ত করে। গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ, অর্থনৈতিক পুনর্গঠন ও জনগণের ক্ষমতায়নকেই এর মূল লক্ষ্য হিসেবে ধারণ করে। অভ্যন্তরীণ বিরোধ মেটাতে ও বহিঃশক্তির চাপ প্রতিহত করতে এ জাতীয়তাবাদই সক্ষম দর্শন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বিএনপির কুমিল্লা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো সেলিম ভূঁইয়া। এ ছাড়া আরও বক্তব্য দেন- ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আহসানুল হক শুভ্র, স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় কমিটির মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা সম্পাদক হারুন উর রশিদ, স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক নুরুল হুদা বাবু প্রমূখ।