বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আমাদের প্রত্যেকটি মানুষ, শহীদ জিয়া এবং দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার প্রত্যেকটি সৈনিককেই অত্যন্ত সচেতন থাকতে হবে, কেউ যেন আমাদের নাম ব্যবহার করে, এই দলের নাম ব্যবহার করে, বিএনপি’র নাম ব্যবহার করে তাদের ব্যক্তি স্বার্থ হাসিল করতে না পারে। কেউ যেন আমাদের নাম ব্যবহার করে জনগণের মধ্যে আমাদের সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়াতে না পারে, এই ব্যাপারে আপনাদের প্রত্যেককে দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে, আপনাদের প্রত্যেককে কর্তব্য পালন করতে হবে যাতে করে দলের সম্পর্কে জনগণের মাঝে দলের কোনো বিভ্রান্তি কেউ ছড়াতে না পারে। শনিবার বিকালে কিশোরগঞ্জ পুরাতন স্টেডিয়ামে জেলা বিএনপি’র ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তারেক রহমান এসব কথা বলেন। সম্মেলনে তিনি ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা সকলে প্রত্যাশা করছি, বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যাশা করছে। বিগত ১৬ বছর ধরে মানুষের যে অধিকার আদায়ের জন্য বাংলাদেশের মানুষ সংগ্রাম করে এসেছে, গণতন্ত্রে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলো দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে, বিগত ১৬ বছর ধরে যে স্বৈরাচার এ দেশের মানুষের টুঁটি চেপে ধরেছিল, সেই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে, সংগ্রাম করেছে ঐক্যবদ্ধভাবে। স্বৈরাচার বিদায় হয়েছে। বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ পরিচালনা করছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিছু সংস্কারের প্রস্তাবনা দিয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন যে সংস্কারগুলো প্রস্তাব দিয়েছে, এই প্রস্তাবগুলো প্রায় ৯০-৯৫ শতাংশ প্রস্তাবনা বিএনপি আরও আড়াই বছর আগে দেশের সামনে দেশের মানুষের সামনে উপস্থাপন করেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বিভিন্ন বিষয়ে মতামত উপস্থাপন করেছে, বিএনপি তার মতামত দিয়েছে, কোনো কোনো বিষয় হয়তো অন্যান্য কারো সঙ্গে আমাদের মতপার্থক্য আছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক অধিকার, ভোটের অধিকার এবং বাংলাদেশের মানুষের নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারের প্রশ্নে বিএনপি’র কারো সঙ্গে কোনো আপত্তি নেই, দ্বিমত নেই। তারেক রহমান যোগ করেন, অর্থাৎ বিএনপি এই কাজগুলো করতে চায় এবং কাজগুলো যদি করতে হয়, দেশের ভবিষ্যত সন্তান আজ যারা শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ যারা, তাদের শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য যা করা প্রয়োজন, দেশের নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য নারীদেরকে স্বাবলম্বী করার জন্য যা প্রয়োজন, দেশের কিশোর যুবক যেকোনো মানুষ যারা এই মুহূর্তে কর্মসংস্থান নেই, সেটি দেশে হোক, সেটি বিদেশে হোক, তাকে প্রশিক্ষণ দেয়ার মাধ্যমে তাকে স্কিলড একজন শ্রমিক হিসেবে গড়ে তুলে তার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। ছোট ছোট উদ্যোক্তা যারা তাদেরকে সহযোগিতার মাধ্যমে তাদের সেই উদ্যোগকে সফল করা। কৃষকের পাশে গিয়ে দাঁড়ানো, কৃষককে সঠিক সময় তার সার, বীজ, কীটনাশক সরবরাহের প্রস্তুতি গ্রহণ করা। মানুষের চিকিৎসা জন্মগত অধিকার। সেই অধিকার গ্রামের মানুষ থেকে শুরু করে শহরের মানুষ প্রত্যেকে যাতে সেই সুবিধা পায়। এই কাজগুলোকে যদি আমাদের সম্পাদন করতে হয়, তাহলে অবশ্যই জনগণের রায়, জনগণের রায়ে, জনগণের মতামতের ভিত্তিতে, জনগণের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে একটি সরকার প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। যেই সরকার জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে। নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনা দিয়ে তারেক রহমান বলেন, আপনারা জানেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগামী বছর ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। ফেব্রুয়ারি মাসে যে নির্বাচনটি হবে, এই নির্বাচনে যদি আমাদের যে ৩১ দফা এই কথাগুলো যা সংক্ষেপে আপনাদের সামনে মাত্র তুলে ধরলাম। এগুলোর পক্ষে যদি জনগণের রায় নিয়ে আসতে হয়, তাহলে আজকে এখানে যারা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের উপস্থিত আছেন, এক কথায় ধানের শীষের যে মানুষ উপস্থিত আছেন এবং সমগ্র বাংলাদেশে ধানের শীষ যে কয়জন নেতাকর্মী আজও বেঁচে আছে, আজও গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, আমাদের সামনে একটি লক্ষ্য থাকতে হবে, যেকোনো মূল্যে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই।
তারেক রহমান বলেন, আপনাদের নিশ্চয়ই অনেকের মনে আছে, স্বৈরাচার পালিয়ে যাবার কয়েকদিন পরে আমি জেলা-থানাসহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ভাগে ভাগে বসেছিলাম। আপনাদের অনেকেই সেদিন সেই মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন। সেই মিটিংয়ে আমি একটি কথা বলেছিলাম যে, স্বৈরাচার তো বিদায় হয়ে গিয়েছে, পালিয়ে গিয়েছে, কিন্তু অদৃশ্য শক্তি ধীরে ধীরে মাথা ছাড়া দিয়ে উঠছে। মনে আছে আপনাদের এই কথাটি আমি বিভিন্ন সময়ে বলেছি আজকে থেকে প্রায় এক বছর আগে, আপনারা বহু মানুষ সেদিন সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আজ আমার এক বছর আগের কথা কিন্তু ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। আজকে যদি দেশের স্বার্থের কথা আমরা বিবেচনা করি, দেশের মানুষের অধিকারকে, সেটি রাজনৈতিক অধিকার, দেশের মানুষের অর্থনৈতিক অধিকার যদি প্রতিষ্ঠিত করতে হয়, যা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান উন্নয়ন উৎপাদনের রাজনীতি শুরু করে গিয়েছিলেন, যে রাজনীতি দেশনেত্রী খালেদা জিয়া যে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নারী শিক্ষাসহ গণতন্ত্রের যে অগ্রযাত্রা শুরু করে গিয়েছিলেন, সেই অগ্রযাত্রাকে উন্নয়নে এবং শিক্ষা এবং গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে যদি ধরে রাখতে হয়, যদি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হয়, আমাদের আর আজকে বসে থাকার সময় নেই। বিএনপি’র প্রতিটা নেতাকর্মীকে আজ যেকোনো মূল্যে আমি জানি বিশাল দল আমাদের, স্বৈরাচারের আমলে প্রায় ৫০ লক্ষেরও বেশি নেতাকর্মীর নামে মিথ্যে মামলাই ছিল আমাদের দলে, পৃথিবীর অনেক দেশ আছে যেই দেশের টোটাল জনসংখ্যাও এর থেকে কম। এত সংখ্যক নেতাকর্মী আমাদের। থাকতেই পারে বিভিন্ন নেতাকর্মীর বিভিন্ন মতামত, থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দলের যখন একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়ে যাবে, আমাদের কাজ হচ্ছে দলের সিদ্ধান্তের পিছে এসে দাঁড়ানো। কারণ আপনারা ধানের শীষের কর্মী, জাতীয়তাবাদী শক্তির কর্মী আপনারা। কাজেই জাতীয়তাবাদী শক্তি ধানের শীষের পক্ষ থেকে যখন একটি সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে, আমাদের প্রত্যেকটি মানুষের দায়িত্ব হচ্ছে, যারা আমরা দেশনেত্রী খালেদা জিয়া, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাস করি, আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব হবে সেই সিদ্ধান্তকে যেকোনো মূল্যে বাস্তবায়ন করা। আজকের যেমন আপনারা সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে এই সম্মেলনকে সফল করলেন, আমরা যদি আগামী ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত প্রত্যেকটি নেতাকর্মী এ রকম ইস্পাতের মতো ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারি, আজ যেমন একটি সফল সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। ইনশাআল্লাহ আমরা একটি সফল জনরায় আমাদের পক্ষে আনতে সক্ষম হবো।