যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে মিসর ও জর্ডানে সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে অনড় অবস্থানে রয়েছেন। তিনি জোর দিয়ে বলছেন, জর্ডান ও মিসর গাজার ফিলিস্তিনিদের গ্রহণ করবে। শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের মিসর ও জর্ডানে চলে যাওয়া উচিত এই দাবিতে অনড় অবস্থানে রয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও মিসর ও জর্ডানের নেতারা বলেছেন যে তারা ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুতির বিষয়ে একমত নয়। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ফিলিস্তিনিদের গ্রহণের জন্য মিসর ও জর্ডানকে তিনি কিভাবে চাপ দেবেন জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা তাদের জন্য অনেক কিছু করি এবং তারা এটা করবে’। এদিকে গাজাবাসীকে আশ্রয় দিতে ট্রাম্পের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে জর্ডান ও মিসরের সরকার প্রধানরা। একই সাথে ট্রাম্পের এই প্রস্তাব নাকচ করেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস। জর্ডান এরই মধ্যে কয়েক লাখ ফিলিস্তিনিকে আশ্রয় দিয়েছে। মিসরেও বাস করছেন কয়েক হাজার ফিলিস্তিনি। এদিকে হামাসের একজন কর্মকর্তা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে ট্রাম্পের এই প্রস্তাবের মাধ্যমে দীর্ঘদিন থেকে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের তাদের বাড়িঘর থেকে স্থায়ীভাবে তাড়িয়ে দেয়া হবে। হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য বাসেম নাইম বলেছেন, ‘ফিলিস্তিনিরা এমন কোনো প্রস্তাব বা সমাধান গ্রহণ করবে না। এমনকি যদি এই ধরনের প্রস্তাবও হয় যে গাজাকে পুনর্গঠন করার আড়ালে ভালো উদ্দেশ্য রয়েছে যেমনটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাবে ঘোষণা করা হয়েছে।’ আরেক হামাস কর্মকর্তা সামি আবু জুহরি ট্রাম্পকে তার পূর্বসূরি জো বাইডেনের ব্যর্থ চেষ্টা বা ধারণাগুলোর পুনরাবৃত্তি না করার আহ্বান জানিয়েছেন। সামি বলেন, ‘গাজার মানুষ অসংখ্য মৃত্যুর যন্ত্রণা সহ্য করেছে এবং তারা কোনো কিছুর বিনিময়ে তাদের মাতৃভূমি ত্যাগ করবেন না।’
উল্লেখ্য, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় এক বছরের বেশি সময় ধরে হামলা চালিয়ে আসছে ইসরাইল। দেশটির অব্যাহত এ হামলায় সৃষ্ট ধ্বংসস্তূপ পরিষ্কার করতে অন্তত ১৫ বছর সময় লাগবে। এজন্য প্রতিদিন ১০০টি লরি ব্যবহার করতে হবে। জাতিসঙ্ঘের হিসাব মতে, গাজায় ভবন ধসে এ পর্যন্ত ৪২ মিলিয়ন টনেরও বেশি ধ্বংসস্তূপ জমা হয়েছে। এ ধ্বংসস্তূপগুলো যদি একসাথে এক জায়গায় রাখা যায়, তাহলে তা মিসরের ১১টি গ্রেট পিরামিডের সমান হবে। এ ধ্বংসস্তূপ সরাতে ব্যয় হবে ৫০০ থেকে ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি)।ইউএন এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রামের হিসাব অনুসারে, গাজায় ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৯৭টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা অঞ্চলটির মোট ভবনের অর্ধেকের বেশি। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের মধ্যে এক-চতুর্থাংশ পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এ ছাড়া এক-দশমাংশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এক-তৃতীয়াংশ বেশ খানিকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ভবনের ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে ফেলার জন্য ২৫০ থেকে ৫০০ হেক্টর জমির প্রয়োজন পড়বে। সূত্র : আল-জাজিরা