জাতীয় স্বার্থে সবকিছুর উর্ধ্বে উঠে ইস্পাত কঠিন ঐক্য চাই মন্তব্য করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দেশের মানুষের কাছে ওয়াদাবদ্ধ। আমরা দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাই। সুষম উন্নয়ন উপহার দিতে চাই। কেউ না চাইলেও তার অধিকার পাবে। লক্ষ যুবক আর বেকার থাকবে না। শিক্ষা সমাপনির সাথে সাথে কাজ দেয়া হবে। নৈতিক ও জাগিতিক শিক্ষার সমন্বয় করা হবে।’ তিনি বলেন, ‘কোরআনের কথা বলতে গিয়ে, সত্য কথা বলতে গিয়ে বাংলাদেশের কোনো জেলা সাতক্ষীরার মতো এত জীবন, এত রক্তের ত্যাগ উপহার দেয়নি। এজন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কাছে সাতক্ষীরা মর্যাদা অনন্য উচ্চতায়। আল্লাহ যেন এই জেলার মর্যাদা ক্রমাগত বৃদ্ধি করে দেন।’ শনিবার (৩০ নভেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে সাতক্ষীরা জেলার সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে মাঠে আয়োজিত ঐতিহাসিক কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় জেলা আমির উপাধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম মুকুলের সভাপতিত্বে সঞ্চালনা করেন জেলা সেক্রেটারি মাওলানা আজিজুর রহমান। ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ আমাদের প্রিয় জন্মভূমি। আল্লাহ তায়ালার মেহেরবানিতে দুনিয়ের খুব কম জায়গাতেই এমন দেশ রয়েছে। আমরা এমন একটি দেশ পেয়েছি, যার ওপরে, নিচে ও সমুদ্রে অফুরন্ত সম্পদ। কিন্তু আমাদের সম্পদগুলো জনগণের উপকারে আসছে না। যারা জনগণের নেতা হয়ে ক্ষমতায় এসে বিভিন্ন সময় দেশ শাসন করেছেন, তারা জনগনের সম্পদ সুকৌশলে চুরি করে, লুট করে পকেটে ঢুকিয়েছেন। এজন্য বাংলাদেশের জনগণ তাদের হিস্যা পায়নি।’ আমিরে জামায়াত বলেন, ‘২০১৫ সালে শহীদ পরিবারের সাথে দেখা করতে এসেছিলাম। সকাল ৯টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত আমি দেখেছি, এই জেলার রাস্তাঘাট ভাঙা। মোটরসাইকেলে করে সারা জেলা ঘোরার চেষ্টা করেছি। ওই সময় তাদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, উন্নয়নের জোয়ারে দেশ ভাসছে? জোয়ারের সামান্য ছিটেফোটা কি এখানে আসে না ? তারা জানায়, বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠী সাতক্ষীরাকে বাংলাদেশের অংশ মনে করে না।’ তিনি বলেন, ‘আপনাদের ওপর শাসকরা জুলুম করেছে। তারা জনগণের অধিকার দেয়নি। সাতক্ষীরার ওপর জুলুম করেছে। খুন-গুম করেছে। ইজ্জতের ওপর হাত দিয়েছে। সম্পদ লুট করে মানুষকে তারা দাসে পরিণত করেছে। সবচেয়ে খারাপ করেছে সাতক্ষীরায়। শুধু দ্বীনের পক্ষ নেয়ায় যদি এই অবস্থা হয় তাহলে দুনিয়া এবং আখেরাতে আল্লাহ এই জেলার মর্যাদা বাড়িয়ে দিবেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা এমন একটি দেশ চাই, যেখানে মা-বোনেরা ঘরে এবং বাইরে নিরাপদে থাকবে। তারা কর্মস্থল এবং রাস্তাঘাটে সুরক্ষা পাবেন। নিরাপদে থাকবেন। দক্ষতা দিয়ে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবেন। রাসূল সা: যুদ্ধক্ষেত্রেও নারীদের যুক্ত করেছেন।’
শফিকুর রহমান বলেন, ‘কারো ওপর জোর খাটানো হবে না। এদেশে অন্য ধর্মের মানুষ বসবাস করে। অন্য ধর্মের মানুষকে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করতে বাধ্য করা হবে না। মন্দির গির্জা পাহারা দেয়া লাগবে না।’
তিনি বলেন, ‘বাগানে মাঝে মাঝে হুতুম পেঁচা ঢুকে পড়ে। তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। আশরাফুর মাখলুকাত হিসেবে মর্যাদা দেয়া হবে না। পরিচ্ছন্ন কর্মীরাও আমাদের কাছে ভিআইপি। রিকশাওয়ালাকে স্যালুট জানাই। তাদের কাজের মর্যাদা দেয়া হবে।’
এ সময় জামায়াত আমির আরো বলেন, ‘২০০৬ সালে লগি বৈঠা দিয়ে হত্যা করে খুনিরা তাদের ওপর লাফালাফি করেছে। পথ হারিয়েছে। ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ছাত্রদের হাতে ঢিল ছিল না। তারা মেধার মূল্যায়ন চেয়েছিল। দেড় হাজারের বেশি ছাত্রদের হত্যা করেছে। জুলুম করা হলেও দেশ থেকে পালিয়ে যাইনি। যারা দেশকে ভালোবাসে তারা পালিয়ে যেতে পারে না। এখানে বাঁচতে চাই। লড়াই করতে চাই। নতুন করে দেশ গড়তে চাই। যুবসমাজের হাতে দেশকে তুলে দিতে চাই।’
কর্মী-সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন অধ্যক্ষ ইজ্জত উল্লাহ এবং মুহাদ্দিস আবদুল খালেক। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ। আরো বক্তব্য দেন কেদ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড. খলিলুর রহমান মাদানী, জেলা নায়েবে আমির নুরুল হুদা, ডা. মাহমুদুর হক, খুলনা অঞ্চল টিম সদস্য মাস্টার শফিকুল আলম, অধ্যক্ষ মাওলানা মশিউর রহমান, খুলনা মহানগর আমির অধ্যাপক মাফুজুর রহমান, বাগেরহাট জেলা আমির মাওলানা রেজাউল করিম প্রমুখ।
কর্মী সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা সহকারী সেক্রেটারি গাজী সুজায়াত আলী অধ্যাপক ওবায়দুল্লাহ, মাওলানা ওসমান গণি, সাতক্ষীরা শহর শাখা সভাপতি আল-মামুন ও জেলা শাখা শিবিরের সভাপতি ইমামুল ইসলাম।