মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী: আর মাত্র কয়েকদিন পরেই পবিত্র ঈদুল আজহা। প্রতি বছর ঈদ-উল-আজহার আগে উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ পশুরহাট রাজশাহীর সিটি হাটে সপ্তাহব্যাপী ‘‘বড় হাট’’ বসে। এই হাটে বেচাকেনা হয় হাজার হাজার কোরবানির পশু। শহর তো বটেই আশেপাশের উপজেলা এমনকি অন্যান্য জেলা থেকেও ক্রেতা-বিক্রেতারা আসেন এ হাটে। প্রতি বছরের মতো এবারও প্রথম দিনেই জমজমাট বেচাকেনার প্রস্তুতি নিয়েছেন পশু ও উঠেছে। ইতিমধ্যেই রাজশাহীর কোরবানির হাটগুলো জমে উঠেছে।
গত রবিবার থেকে গরুর কেনা-বেচা বেশ জমেছে বলে দাবি করেছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। ঈদের বাকি কয়েকদিনও বেচা-কেনা আরও বাড়বে বলেও আশা করছেন তারা। ফলে কোরবানির পশু আর ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণায় মূখোর হয়ে উঠেছে রাজশাহীর সিটি বাইপাশ হাট। এর বাইরে উপজেলা পর্যায়ে সপ্তাহিক হাটগুলোতেও পশু কেনা-বেচা শুরু হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত হাটগুলোদে ভারতীয় গরু তেমন চোখে পড়েনি। অল্প কিছু পরিমাণ আসলেও সেগুলো বাংলাদেশী গরু বলে ছাড়পত্র নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে।
রাজশাহীর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, রাজশাহীতে গতবারের চেয়ে এবার কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা বেড়েছে। জেলায় চার লাখ ৬৬ হাজার ১৯৬টি পশু প্রস্তুত ছিলো। যেগুলো এরই মধ্যে কেনা-বেচা শুরু হয়েছে। জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে সাড়ে ১৭ হাজার খামারে ও বিভিন্ন বাসাবাড়িতে এবার পশু লালন-পালন করা হয়। এর মধ্যে ৮৩ হাজার ৩৬৫টি গরু, তিন হাজার ৭৬৯টি মহিষ ও তিন লাখ ৪২ হাজার ৭৫৩টি ছাগল রয়েছে। গত বছর জেলায় ৩ লাখ ২৪ হাজার ৯৭৭টি পশু কোরবানি করা হয়। এবারও কোরবানির পশুর চাহিদা একই রয়েছে। ফলে বর্তমানে জেলায় চাহিদার তুলনায় ১ লাখ ৪১ হাজার ২১৯টি পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে। কোরবানির আগে এই সংখ্যা আরও বাড়বে।
রাজশাহীর সিটি হাট গতকাল সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, এ হাটে গতকাল প্রায় ২০ হাজার গরু-মহিষ জমা হয় কেনা-বেচার জন্য। কোথাও যেন ধাপ ফেলার জায়গা নাই। চারিদিকে যেদিকে নজর যায় গরু আর গরু। মাঝে মাঝে কিছু মহিষও চোখে পড়ে। গরু-মহিষগুলো বড় বড় ভুটভুটি, ট্রাক বা পিকআপে করে হাটে জড়ো করা হয়েছে। কেনা-বেচা শেষে আবার সেসব পরিবহণে করেই পশুগুলোকে নিয়ে যাওয়া হবে দেশের বিভিন্ন স্থানে। বিশেষ করে যেসব পশু বিক্রি হবে সেগুলোর অধিকাংশ যাবে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।
ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, এবার একেকটি গরু গড় মণ হিসিবে ৩০ হাজার টাকার কিছু কম আর বেশি দরে কেনা-বেচা হচ্ছে। তবে ছোট আকারের (৩-৪ মণ) ওজনের গরু গড় মণ ৩৫-৩৭ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
এ হাটে গরু বিক্রি করতে আসা রাজশাহীর পুঠিয়ার ঝলমলিয়া এলাকার খামারি জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘এবার আমি ৮টি গরু পালন করেছি। গতবারের চেয়ে এবার কোরবানির পশুর দাম একটু বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এবার পশু পালনে খরচও বেশি হয়েছে। খরচ বেশি হওয়ার কারণে দাম একটু বেশি হচ্ছে। তার পরেও খামারিদের লাভের পরিমাণ গত বারের চেয়ে কম হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।’
পবার খামারি রবিউল ইসলামের খামারে ৫টি গরু ও দুইটি মহিষ রয়েছে। গরু গুলো তিনি ৫ মাস মাস ও মহিষ ৬ মাস ধরে লালন-পালন করেছেন। এখন সগেুলো বিক্রি করতে শুরু করেছেন। বাড়ি থেকেই দুটি গরু দুটি মহিষ বিক্রি হয়েছে। গতকাল হাটে বাকি তিনটি গরু নিয়ে এসেছিলেন বিক্রি করতে।
তিনি বলেন, এবার গরু-মহিষ এমনকি ছাগলের দামও বেশি। কিন্তু গত বারের চেয়ে এবার খরচও বেশি হয়েছে। সেকারণে দাম বেশি হলেও আমাদের লাভের পরিমাণ তেমন বাড়েনি। তার পরেও যা দাম পাওয়া যাবে আশা করছি একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হিসেবে পুরো একটা বছর আরামে কাটাতে পারব।
তিনি আরও বলেন, এই পশুগুলো বিক্রি করে আবার আমার গোয়ালে গরু-মহিষ তুলতে হবে। আমি পড়া-লেখা করেও চাকরির পেছনে না ছুটে খামার করে সংসার চালাচ্ছি। আমার পেশায় এটি। আমার মতো এভাবে অনেকেই সংসার চালান খামার করে। তাতে একজন চাকরিজীবীর চেয়ে কোনো অংশেই কম আয় হয় না আমার। রাজশাহীর সিটি হাটে গরু কিনতে আসা ঢাকার ব্যবসা আসাদুল ইসলাম বলেন, কোরবানির হাট জমতে শুরু করেছে। কিন্তু এবার পশুর দাম যেভাবে বেড়েছে, সেই হিসেবে বেশি কিনতে সাহস পাচ্ছি না। ঢাকার বাজার এবার কেমন যাবে-এখনোই কিছু বলা যাচ্ছে না। তার পরেও আমরা পশু কিনছি। এগুলো ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজারে উঠাবো। বাকিটুকু আল্লাহ ভরসা।’
তিনি বলেন, কোরবানিকে টার্গেট করেই অধিকাংশ খামারিরা গরু-মহিষ পালন করেন। এই সময়ে তাদের একটু বাড়তি আয় না হলে তারা আগ্রহ হারাবেন। তাই যেহেতু কোরবানির উদ্দেশ্যে আমরা পশু কিনে, সেহ হিসেবে লাভ-লোকসানের হিসেবে না করে খামারিদের কথা ভেবে দেকা উচিত আমাদের দেশের ক্রেতারাদের।’
রাজশাহী সিটি হাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান বলেন, সপ্তাহে রোববার ও বুধবার সিটি হাট বসে। তবে কোরবানি উপলক্ষে আগামী কয়েকদিন প্রতিদিনই হাট বসবে।’ রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জুলফিকার আখতার হোসেন জানান, রাজশাহীতে বিগত বছরের তুলনায় এবারও কোরবানির পশু উদ্বুত্ত থাকবে রাজশাহীতে। তবে এবার যেহেতু উৎপাদন খরচ বেশি, দামও কিছুটা বেশি হবে বলে মনে করা হচ্ছে।’