বগুড়া জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুদ্দিন শেখ হেলাল, তার দুই স্ত্রী ও এক ছেলের চারটি বহুতল ভবন, ঢাকার একটি ফ্ল্যাট এবং তিনটি বাস ক্রোক করা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় আদালতের নির্দেশে ক্রোক করা হয়েছে। নিয়োগ করা রিসিভার এসব থেকে ভাড়া আদায় করে সরকারি হিসাবে জমা করবেন। বৃহস্পতিবার বিকালে দুদকের পিপি আবুল কালাম আজাদ এ তথ্য দেন। তিনি জানান, অজ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদগুলো অবৈধ হওয়ায় আদালতের নির্দেশে বগুড়ার চারটি বহুতল ভবন, ঢাকার উত্তরায় একটি ফ্ল্যাট ও তিনটি দূরপাল্লার বাস ক্রোক করা হয়েছে।
গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এএইচএম শাহরিয়ার বগুড়ার চারটি ভবন, ঢাকার জেলা প্রশাসককে উত্তরার ফ্লাট ও বিআরটিসি বগুড়া ডিপোর ব্যবস্থাপক শাহীনুল ইসলামকে তিনটি বাসের রিসিভার নিয়োগ করা হয়েছে। তারা ভাড়া তুলে সরকারের হিসাবে জমা দেবেন।
এ প্রসঙ্গে শামসুদ্দিন শেখ হেলাল বলেন, বগুড়ার চারটি ভবন তার ও স্ত্রী-সন্তানদের নামে, ঢাকার ফ্ল্যাট তার নামে আছে। নয়টি বাসের মধ্যে ছয়টি বাসের কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। তার ও স্ত্রী সন্তানদের নামে তিনটি বাস রয়েছে। এসব আদালত ক্রোক করেছেন। এটা তার বিরুদ্ধে অন্যায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নিয়েছেন; বৃহস্পতিবার স্থায়ী জামিনের জন্য জেলা জজকোর্টে আবেদন করেছেন। শিগগিরই ক্রোকের ব্যাপারে উচ্চ আদালতে যাবেন।
দুদক সূত্র জানায়, বগুড়া শহরের চকসুত্রাপুর এলাকার বাসিন্দা শামসুদ্দিন শেখ হেলাল জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বগুড়া পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র। তিনি, প্রথম স্ত্রী হেলেনা পারভীন, দ্বিতীয় স্ত্রী আবে জমজম নাজী ও ছেলে হোসাইন হাবিবের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠে। সম্পদ বিবরণী বগুড়ার দুদকে জমা দেওয়ার পর অভিযোগের সত্যতা মেলে। সাবেক উপ-পরিচালক মনিরুজ্জামান গত বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি উল্লিখিত চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তাদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার ও দুদক আইনের বিভিন্ন ধারা আনা হয়।
এজাহারে শামসুদ্দিন শেখ হেলালের বিরুদ্ধে নয় কোটি ৭২ লাখ ৪০ হাজার ৯২০ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। এছাড়া এক কোটি দুই লাখ টাকার বেশি সম্পদ দ্বিতীয় স্ত্রী আবে জমজম নাজীর কাছে স্থানান্তরের অভিযোগে তাকে আসামি করা হয়। প্রথম স্ত্রী হেলেনা পারভীন দুই কোটি ৪১ লাখ ২৩ হাজার ৯৮৩ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেন। তিনি সম্পদ বিবরণীতে ১৬ লাখ ৯৪ হাজার ১৮৯ টাকার ভিত্তিহীন হিসাব দেন। এছাড়া ছেলে হোসাইন হাবীবের বিরুদ্ধে দুই কোটি ৮০ লাখ পাঁচ হাজার ৩৪৯ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের সত্য পায় দুদক।
তদন্ত শেষে দুদক বগুড়া কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হাফিজুর রহমান, সহকারী পরিচালক তারেকুর রহমান ও উপসহকারী পরিচালক রোকনুজ্জামান পৃথক চার্জশিট দাখিল করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বগুড়ার সিনিয়র স্পেশাল জজ মোজাম্মেল হক চৌধুরী গত বছরের ৩০ জুলাই শ্রমিক লীগ নেতা শামসুদ্দিন শেখ হেলালের চারটি বাড়ি ও নয়টি বাস জব্দের আদেশ দেন।
আদেশে বগুড়ার গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে চারটি ভবন ও বিআরটিসি বগুড়া ডিপোর ব্যবস্থাপককে নয়টি বাসের রিসিভার নিয়োগ করা হয়। আদেশের প্রেক্ষিতে সব আইনগত প্রক্রিয়া শেষে প্রশাসন চারটি ভবন ক্রোক করেন। নয়টি বাসের মধ্যে তিনটি বাস ক্রোক করা হয়। হেলাল অপর ছয়টি বাসের কাগজপত্র দেখাতে সক্ষম হন। ওই সব কাগজপত্রও যাচাই-বাছাই চলছে।
দুদকের পিপি আবুল কালাম আজাদ জানান, হেলালের নামে ঢাকার উত্তরায় একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। আদালত সেটি ক্রোকের নির্দেশ দিয়ে ঢাকার জেলা প্রশাসককে রিসিভার নিয়োগ করেন। জেলা প্রশাসক ওই ফ্ল্যাটটি হেফাজতে নিয়েছেন। তিনি ভাড়া আদায় করে সরকারের হিসাবে জমা করবেন। ভবন ও ফ্ল্যাটে আদালতের আদেশ সম্বলিত নোটিশ ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আদালত গত ১৮ জানুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে হুলিয়া ও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। সূত্র-যুগান্তর