বগুড়ার কাহালু উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পরিচয়ে তুলে নেয়ার পর নিখোঁজ হওয়া উপজেলা বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক আনোয়ার হোসেন হৃদয় ও একই উপজেলা বিএনপি নেতা দেলোয়ার হোসেনের সন্ধান চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিচারপতি আবু তাহের মো: সাইফুর রহমান ও বিচারপতি মো: বশির উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত অবকাশকালীন হাইকোর্ট বেঞ্চ বিশিষ্ট মানবাধিকার আইনজীবী, বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল এ রিট আবেদন দাখিল করেন। সাথে ছিলেন আইনজীবী মো: মাকসুদ উল্লাহ। রিট আবেদনের বিষয়ে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, স্বাধীনতা মাসে গত ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী দিবসে বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেন হৃদয় ও দেলোয়ার হোসেনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন তুলে নিয়ে যায় বলে দাবি করেছে পরিবার। নিখোজ হওয়ার পর পরিবারের লোকজন স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে যোগাযোগ করেন এবং জিডিও করেন। কিন্তু দু:খজনকভাবে ১৪ ডিসেম্বর থেকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি। তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলাও ছিল না। পরিবারের সদস্যরা এখনো পর্যন্ত তাদের কোনো সন্ধান পাচ্ছে না। এই দুই বিএনপি নেতার সন্ধান চেয়ে তাদের সন্তানেরা হাইকোর্টে হেবিয়াস করপাস রিট আবেদন করেছেন। বিচারপতি রিট আবেদন গ্রহণ করেছেন। আগামীকাল শুনানির জন্য ধার্য আছে। তিনি অভিযোগ করেন, তাদের দু’জনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে গেছে। এজন্য তাদের সন্ধান চেয়ে আমরা আদালতের শরনাপন্ন হয়েছি। আগামীকাল শুনানি হবে। শুনানি অন্তে আমরা তাদের সন্ধান পাব বলে প্রত্যাশা করছি। আইন মন্ত্রাণলয়ের সচিব, পুলিশের আইজসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদি করা হয়েছে। এর আগে গত ২০ ডিসেম্বর বগুড়া প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেন হৃদয়ের স্ত্রী আঁখি বেগম অভিযোগ করেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে তুলে নিয়ে গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গত ১৪ ডিসেম্বর তার স্বামী কর্মস্থল বগুড়ার শেরপুর পল্লী উন্নয়ন অ্যাকাডেমি থেকে ফেরার পথে অফিসের গেট থেকে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ডিবি পরিচয়ধারী সাদা পোশাকে তিন থেকে চারজন অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। যার সন্ধান আজো পাওয়া যায়নি।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, কাহালু উপজেলার বীরকেদার ইউনিয়নের ভোলতা দক্ষিণ পাড়ার মৃত আজিজার রহমানের ছেলে আনোয়ার হোসেন হৃদয় (সাবেক মেম্বার) পল্লী উন্নয়ন অ্যাকাডেমিতে ফিল্ড অর্গানাইজার (এফও) পদে কর্মরত। পাশাপাশি তিনি কাহালু উপজেলা বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি অভিযোগ করেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী ডা: জিয়াউল হক মোল্লার হিংসা এবং ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশের শিকার তার স্বামী। তিনি এজাহারভুক্ত আসামি না হওয়া সত্ত্বেও তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
আঁখি বেগম বলেন, আনোয়ার হোসেন হৃদয় (সাবেক মেম্বার) গত ২০১৬ সালে স্থানীয় ইউপি নির্বাচনে বীরকেদার ইউনিয়নের ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন। তার স্বামীকে বিশেষ উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
তিনি বগুড়া জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, র্যাব-১২ কর্মকর্তাদের প্রতি অনুরোধ জানান, তার স্বামীকে ফিরে দিতে অথবা আদালতে হস্তান্তর করতে সহায়তার জন্য। তিনি তার দুই সন্তান ও পরিবারের লোকজন নিয়ে নিরাপত্তাহীনতা ও আতঙ্কে দিন পার করছেন। এসময় স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। সংবাদ সম্মেলনে দু’সন্তানসহ নূরনবী, শহিদুল, সাইদুল, জিল্লুরসহ এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে একইদিন (১৪ ডিসেম্বর) রাত ৯টার দিকে পাশের দুপচাঁচিয়া উপজেলা পরিষদের গেট থেকে কাহালু উপজেলার বীরকেদার ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনকেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর থেকে তার সন্ধান পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করে তার পরিবার।