সরকার পরিকল্পিতভাবে সারাদেশে শান্তি বাহিনীর মতো সন্ত্রাস সৃষ্টি করেছে অভিযোগ তুলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেছেন, আজকে মানুষ রাজপথে নেমে এসেছে। জনগণ তাদের হ্যাডম দিয়ে আপনাদের রুখে দিবে। একজনের (শাহাজাহান ওমর) হ্যাডমের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। দেশের মানুষ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমেই তাদের অধিকার পুনরুদ্ধার করবে এবং সরকারের নির্বাচন নির্বাচন নাটক রুখে দিতে হবে।তিনি সবার উদ্দেশ্যে বলেন, আসুন আমরা এই সরকারকে না বলে তাদের নাটকের ইতি ঘটাই। আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন
চিকিৎসকদের হয়রানি ও গ্রেফতার বন্ধ, বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দীর মুক্তি এবং দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল বাতিল ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে চিকিৎসকদের এই মানববন্ধনের আয়োজন করে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)।
বেগম সেলিমা রহমান বলেন, আমরা কোন দেশে বাস করছি? আজকে গুম-খুন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার ব্যক্তিরা তাদের কথা বলতে পারে না। মানবাধিকার দিবস সামনে রেখে জাতীয় জাদুঘরের সামনে কর্মসূচি করতে দেয়নি। সরকার এতো ভীতু যে তাদের কর্মসূচি করতে দেয় না।
তিনি বলেন, জনগণের ট্যাক্সের টাকায় যাদের জীবন চলে সেই পুলিশ বেআইনিভাবে দমন পীড়ন ও গ্রেফতার করছে। তারা গণতন্ত্রের আন্দোলন রুখে দিতে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দিচ্ছে। শান্তি বাহিনীর মতো সন্ত্রাস সৃষ্টি করছে। আমরা যখনই সমাবেশ দেই তখনই তারা পাল্টা শান্তি সমাবেশ করে। শান্তি বাহিনীর মতো বিএনপি ও বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে হানা দিচ্ছে। মনে রাখবেন এটাই শেষ দিন নয়।
সাইফুল হক বলেন, এই সরকার দেশের মানুষের ভাত ও ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। ২২ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে সারাদেশে গ্রেফতার করেছে। সাড়ে আট শতাধিক নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছে। এমনকি মৃত ব্যাক্তিকেও সাজা দিয়েছে! কী ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি? আজকে একই মামলায় মির্জা ফখরুলসহ অনেকেই কারাগারে আর একই মামলায় শাহজাহান ওমরের জামিন মিলে! কী প্রহসন। এটা তো প্রমাণিত যে বিরোধী দলকে রাজনৈতিকভাবে হয়রানির জন্য এসব করা হয়েছে। তবে এবার জনগণের বিজয় সুনিশ্চিত।
জোনায়েদ সাকী বলেন, দেশে জুলুম ও জাহেলিয়াতের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে। আজকে মায়েরা রাজপথে নেমে তাদের সন্তান বা স্বামীকে ফিরে পেতে কান্না করছে। এই মায়েদের কান্নার আওয়াজ সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। আজকে এই সরকার যে বিএনপি ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে তা ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরকে মুক্তি ও নৌকা প্রতীক দিয়ে প্রমাণ করেছে।
ডা. আবদুল কুদ্দুস বলেন, এ দেশের মানুষ পাতানো নির্বাচনে অংশ নেবে না। তারা প্রহসনের একতরফা নির্বাচন প্রত্যাখান করেছে এবং আগামীদিনে প্রতিহত করবে।
ডা. এম এ সেলিম বলেন, আমরা কী আজকে সত্যি স্বাধীনতা অর্জন করেছি? আজকে বিরোধী দলের প্রায় দুই লাখ নেতাকর্মী ঘরবাড়ি ছেড়ে বনে বাদারে রাত কাটাচ্ছে। আজকে প্রধানমন্ত্রী মার্চ মাসে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন! কেন? আপনি পদত্যাগ করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন।
ডা. রফিকুল কবির লাবু বলেন, আওয়ামী ও প্রধানমন্ত্রী কতোটা দেউলিয়া হলে পরে একতরফা নির্বাচন করতে গিয়ে ডামি প্রার্থী দিয়েছেন! এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন কিভাবে হবে? সুতরাং অবিলম্বে জনগণের দাবি মেনে নিয়ে পদত্যাগ করুন।
প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু বলেন, আজকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দী। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অনেক সিনিয়র নেতাকে জামিন দিচ্ছে না। তাহলে সহজেই অনুমেয় যে এই সরকার সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এবং একতরফাভাবে নির্বাচনের লক্ষ্যে জামিন দিচ্ছে না। এমনকি বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতন চালাচ্ছে। অনেককে গুম-খুন করা হয়েছে। আজকে সরকার ডামি প্রার্থী দিয়ে ডামি নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু দেশের জনগণ সেই নির্বাচন মানবে না। তারা প্রতিহত করবে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকারের পতন অনিবার্য।
অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, বর্তমান সরকার বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর সীমাহীন দমন পীড়ন চালাচ্ছে। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাবন্দী রেখেছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অনেক সিনিয়র নেতাকে অন্যায়ভাবে কারাবন্দী করে রেখেছে। আজকে লাখ লাখ মানুষ মানবাধিকার বঞ্চিত। সরকার গুম খুন করে বন্দুকের নলের মুখে ক্ষমতা জবরদখল করে রেখেছে। আবারো তারা একতরফা নির্বাচনের আয়োজন করেছেন। কিন্তু এবার জনগণ এ ধরনের নির্বাচন চায় না। জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে চায়।
অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, আমি নির্বাচন কমিশনারকে বলব- জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগ করার দাবি মেনে নিয়ে পদত্যাগ করুন।
ডা. হারুন আল রশিদ বলেন, আজ দেশ স্বাধীনের ৫২ বছর পরও মানুষের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করতে হচ্ছে- এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আজকে দেশের চরম দূরাবস্থা দূর করতে পেশাজীবীসহ দেশের জনগণকে রাজপথে নেমে এসে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে। আগামী দিনের একতরফা নির্বাচন রুখে দিন।
ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল বলেন, অবিলম্বে জনগণের দাবি মেনে নিতে হবে। এই সরকারকে পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। সেইসাথে বেগম খালেদা জিয়া, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সকল নেতাকর্মীর মুক্তি দিতে হবে। অন্যথায় গায়ের জোরে নির্বাচন করলে এই সরকারের পরণতি ভালো হবে না।
বক্তারা বলেন, আজকে দেশে নজিরবিহীন ঘটনা ঘটছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর চালানো হচ্ছে ঘৃণ্য ও বর্বর নির্যাতন। দেশের ইতিহাসে এ ধরনের মিথ্যা ও গায়েবি মামলার কথা কেউ জানত না। আজকে দেশে প্রহসনের মাধ্যমে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন সম্পন্ন করেছে। কিন্তু দেশের জনগণ এই নির্বাচন মানবে না, তারা প্রতিহত করবে। যেকোনো মূল্যে ৭ জানুয়ারির নির্বাচন রুখে দেয়া হবে।
ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদের সভাপতিত্বে ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ডা. মেহেদী হাসানের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান। আরো বক্তব্য দেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, জিয়া পরিষদের ডা. আবদুল কুদ্দুস, ড্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি ডা. এমএ সেলিম, উপদেষ্টা ডা. রফিকুল কবির লাবু, কোষাধ্যক্ষ ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল, অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ-অ্যাব‘র সভাপতি প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইউট্যাব) প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান, সিনিয়র সাংবাদিক আমীরুল ইসলাম কাগজী, ডা. শহীদুল আলম, ডা. মোসাদ্দেক হোসেন বিশ্বাস ডাম্বেল, ডা. মো: শহীদ হাসান, ডা. মোস্তাক রহিম স্বপন, ডা. মো: সিরাজুল ইসলাম, ডা. ওবায়দুল কবির খান, ডা. পারভেজ রেজা কাকন, ডা. শেখ ফরহাদ, ডা. আদনান হাসান মাসুদ, জাহিদুল করিম কচি, নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের জাহানারা সিদ্দিকী, ডিইউজের রাশেদুল হক ও সাঈদ খান, ডা. এমএ কামাল, প্রকৌশলী মো: হানিফ, ডা. জাহানারা লাইজু, বিপ্লবুজ্জামান বিপ্লব প্রমুখ। মানববন্ধন শেষে প্রেসক্লাব চত্বরে একটি বিক্ষোভ মিছিল করা হয়
মানববন্ধনে চিকিৎসকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডা. দিদারুল আলম, ডা. সায়ীদ মেহবুব উল কাদির, ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম, ডা. মনোয়ারুল কাদির বিটু, ডা. এরফানুল হক সিদ্দিকী, ডা. তৌহিদুল ইসলাম জন, ডা. জিয়াউর রহমান, ডা. আশফাকুর রহমান শেলী, ডা. এসএম মাসুম বিল্লাহ, ডা. এমএ ওহাব, ডা. রুস্তম আলী মধু, ডা. এমএ লতিফ, ডা. জালাল উদ্দিন রুমি, ডা. মশিউর রহমান কাজল, ডা. বাসেদুর রহমান সোহেল, ডা. জাহিদ হাসান, ডা. মো. সায়েম, ডা. কাজী মুহাম্মদ কামরুল ইসলাম, ডা. মাসুদ রানা, ডা. কায়সার ইয়ামিন ইসাদ, ডা. গালিব হাসান, ডা. আরেফিন রঞ্জু, ডা. রাকিবুল ইসলাম আকাশ, ডা. ইব্রাহিম রহমান বাবু, ডা. রাফসান জানি আবির, ডা. তানজিম রুবাইয়্যাত আফিফ, ডা. শেখ মাহবুব, দবির উদ্দিন তুষারসহ অসংখ্য চিকিৎসক।