আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো: আলমগীর। তিনি বলেছেন, তবে কতটি আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে, সে সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। ইসি তার সক্ষমতা ও যৌক্তিকতা বিবেচনা করে এ মাসের মধ্যেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। যেসব আসনে ইভিএমে ভোট হবে, সেখানে ব্যাপকভাবে প্রচারণা চালানো হবে।রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের মো: আলমগীর এসব কথা বলেন। ইভিএমের অসুবিধার চেয়ে সুবিধা বেশি দাবি করে তিনি বলেন, ইভিএমে কারচুপি নিয়ে যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন তা প্রমাণে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেও কেউ সেটা প্রমাণ করতে আসেনি। বিএনপি ইভিএম নিয়ে অভিযোগ তুললেও তারা সংলাপে এসে বা অন্য কোনোভাবে ইসির কাছে লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ না দেয়ায় তা আমলে নেয়া হয়নি। কিন্তু যারা ইসিতে গিয়ে ইভিএমে কারচুপির অভিযোগ দিয়েছে, তারা তা যাচাই করছেন বলেও নির্বাচন কমিশনার মো: আলমগীর জানিয়েছেন। এই নির্বাচন কমিশনার দাবি করে বলেছেন, ‘ইভিএমে চুরি হতে পারে। কিন্তু আমাদের কাছে যে ইভিএম আছে, সেটায় চুরি করা যায়, তার প্রমাণ দেন। সেই চ্যালেঞ্জ দেয়া হয়েছে কয়েকবার। কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে আজ পর্যন্ত কেউ তো প্রমাণ করতে পারেনি যে ‘আপনাদের যে ইভিএম তাতে চুরি করা যায়।’ ভোটে ইভিএমের ব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ বিতর্ক আছে। ক্ষমতাসীনদের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি ইভিএমকে কারচুপির যন্ত্র বলে অভিযোগ করে আসছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনেই ইভিএমে ভোট চায়। রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ইসির সংলাপে ২২টি দল ইভিএম নিয়ে মতামত তুলে ধরেছিল। এর মধ্যে সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ ১৪টি দল এই যন্ত্রের ব্যবহার নিয়ে সংশয় সন্দেহ প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি দল সরাসরি ইভিএমের বিরোধিতা করেছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগসহ চারটি দল ইভিএমে ভোট চেয়েছে। আর কয়েকটি দল শর্তসাপেক্ষে ইভিএমের পক্ষে বলেছে। আর বিএনপিসহ ৯টি দল ইসির সংলাপ বর্জন করে। তারাও ইভিএমের বিপক্ষে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মো: আলমগীর বলেন, ইভিএম ব্যবহার হবে। কিন্তু কত আসনে হবে, সেই বিষয়ে আমরা এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পরিনি। এটা নিয়ে আমরা মতবিনিময় করছি। আলোচনা করছি। আমাদের সক্ষমতা কী আছে, কত ইভিএম আছে, আমাদের প্রশিক্ষিত জনবল কত আছে? সাপোর্টিং জনবল কত আছে? এগুলো দেখছি, এগুলো দিয়ে কত আসনে ভোট করা যাবে। আর যদি বেশি করতে চাই, আরো কত (ইভিএম) লাগবে, তাতে কত টাকা লাগবে, এ জন্য নতুন প্রজেক্ট নিতে হবে কি না? সেই সময় আমাদের আছে কি না? প্রকিউরমেন্ট করতে, প্রশিক্ষণ দিতে, এসব নিয়ে আলোচনা চলছে। মো: আলমগীর বলেন, এই মুহূর্তে ৭০ থেকে ৮০টি আসনে ভোট করার মতো সক্ষমতা ইসির রয়েছে। তিনি বলেন, অনেকগুলো রাজনৈতিক দল ৩০০ আসনে ইভিএম চায়। আবার কোনো কোনো দল একটি আসনেও চায় না। ইসি সবার কথা সমানভাবে গুরুত্ব দিতে পারবে না। ইসি তার সক্ষমতা ও ইভিএমের যৌক্তিকতার ওপর গুরুত্ব দেবে। কারো মুখের দিকে তাকিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে না। একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর ভোট করার জন্য সক্ষমতা ও ইভিএমের সুবিধা বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৮০ শতাংশ ভোট পড়েছে। তিনি বলেন, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৬টি আসনে ইভিএমের ব্যবহার করা হয়েছে। সেটা নিয়ে কোনো চ্যালেঞ্জ হয়নি। অনেকগুলো উপনির্বাচন এবং স্থানীয় সরকারের নির্বাচন হয়েছে ইভিএমে। কেউ বলেননি ইভিএমের কারণে তিনি হেরেছেন বা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে মামলাও হয়নি। মো: আলমগীর বলেন, নির্বাচনে গুরুতর কোনো অনিয়ম হলে ওই নির্বাচন স্থগিত করতে পারে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু ওই নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা বিদ্যমান আরপিওতে নেই। ইসি মনে করে, এ ক্ষমতা থাকা উচিত। এ–সংক্রান্ত উচ্চ আদালতের একটি রায় আছে। তবে তিনি সেটা দেখেননি। আদালতের রায় আইনে আনা ইসির দায়িত্ব। এটি আইনে যুক্ত করতে সমস্যা নেই।