হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে জয় পেয়েছেন আরফানুল হক রিফাত। এক ঘণ্টার নাটকীয়তার পর কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাতকে। নৌকা প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ৫০ হাজার ৩১০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু থেকে তিনি ৩৪৩ ভোট বেশি পেয়েছেন। সাক্কু টেবিল ঘড়ি প্রতীকে পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৯৬৭ ভোট। নির্বাচনে মেয়র পদে তৃতীয় হয়েছেন আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার। তিনি পেয়েছেন ২৯০৯৯ ভোট। রাতে নানা নাটকীয়তার পর রিফাতকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। সর্বশেষ কয়েকটি কেন্দ্রে ফল ঘোষণার সময় হট্টগোল দেখা দেয়। নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা এসময় মনিরুল হক সাক্কু ও তার সমর্থকদের ওপর চড়াও হন। এর আগে বিভিন্ন কেন্দ্রের ফলে মনিরুল হক সাক্কু এগিয়ে ছিলেন। ১০১টি কেন্দ্রের ফল ঘোষণার পর প্রায় এক ঘণ্টা ফলাফল ঘোষণা বন্ধ থাকে। এসময় নৌকার কিছু সমর্থক ফল ঘোষণা কেন্দ্রে এসে হট্টগোল করেন এবং প্রার্থী ও সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করেন। আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণার পর স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু ফল প্রত্যাখ্যান করে বলেন, কি হয়েছে তা জাতির কাছে স্পষ্ট। সবাই দেখেছে। তিনি বলেন, আলোচনা করে আমি আইনী পদক্ষেপে যাবো। তিনি বলেন, কিছু কেন্দ্রের হিসাব বদলে তাকে পরাজিত করা হয়েছে। এসময় সাক্কুর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট বলেন, ১০১ কেন্দ্রে মনিরুল হক সাক্কু এগিয়ে ছিলেন। এরপর অজ্ঞাত ফোন পেয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা তার আসন ছেড়ে পিছনে চলে যান। আমরা অনুরোধ করেছি বাকি কেন্দ্রের ফল ঘোষণা করতে। তিনি করেননি। ৪৫ মিনিট পরে এসে তিনি যে ফল ঘোষণা করেছেন আমরা তা প্রত্যাখ্যান করছি। নির্বাচনে প্রায় ৬০ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানান সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। কুসিক নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার শাহেদুন্নবী চৌধুরী জানান, শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। সহিংসতার কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে নির্বাচনে আচরণবিধি ভঙ্গ, স্থানীয় প্রভাব খাটানো এবং বহিরাগত হিসেবে ভোটকেন্দ্র এলাকায় প্রবেশ করার দায়ে ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে আরফানুল হক রিফাত ও মনিরুল হক সাক্কুর মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। নির্বাচনে আরও তিনজন মেয়র প্রার্থী ছিলেন। তারা হলেন- ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রাশেদুল ইসলাম (হাত পাখা), স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ নিজামউদ্দিন (ঘোড়া) ও কামরুল আহসান (হরিণ)। এরমধ্যে মনিরুল হক বিএনপির এবং নিজামউদ্দিন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা ছিলেন। বিএনপির সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাদের দুজনকেই দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১০৬ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৩৬ জন প্রার্থী লড়াই করেন। নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের ১০৫টি ভোটকেন্দ্রে ৬৪০টি বুথে ভোটগ্রহণ হয়। এ নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন। এর মধ্যে নারী ১ লাখ ১৭ হাজার ৯২ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার দুইজন। কুসিক নির্বাচনে এবারই প্রথম ইভিএমে ভোট হলো। ভোট শুরুর এক ঘণ্টার মাথায় বৃষ্টি শুরু হয়। এতে সমস্যায় পড়েন ভোটাররা। তবে বৃষ্টি উপেক্ষা করেই ভোট কেন্দ্রে আসতে থাকেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে ভোটারের উপস্থিতি। এই নির্বাচনে ভোটগ্রহণে ইভিএমে ধীরগতি দেখা গেছে। অনেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে ভোট দিয়েছেন। কেউ কেউ ভোট না দিয়েই ফিরে যান। এই ধীরগতির কারণে ভোট শেষ হওয়ার পূর্বঘোষিত সময়সীমা বিকেল ৪টার পরও ভোটগ্রহণ করা হয়। এছাড়া কোনো কোনো ভোটার তাদের আঙুলের ছাপ ইভিএমে মেলেনি বলে অভিযোগ করেন। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ব্যাপক প্রস্তুতির কথা আগেই জানিয়েছিল প্রশাসন। নির্বাচনে ১০৫ জন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, ৭৫টি তল্লাশিচৌকি, ১০৫টি মোবাইল টিম, ১২ প্লাটুন বিজিবি, র্যাবের ৩০টি টিম, ৫২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ৯ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করেছেন। পুলিশের ৩ হাজার ৬০৮ জন সদস্য নির্বাচনের মাঠে দায়িত্ব পালন করেন। নির্বাচনে ইভিএমে কোনো ধরনের যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে মেরামতের জন্য ছিলেন ৩৫ জন। ১০৫টি ভোটকেন্দ্রের সারিতে একটি করে সিসিটিভি ক্যামেরা দেওয়া হয়। প্রতি বুথে (কক্ষে) একটি করে মোট ৬৪০টি সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল। ভোটকক্ষের ভেতরে কোনো এজেন্ট কোনো ভোটারকে তার পছন্দের প্রতীকে ভোটদানে প্রভাবিত করলে তাৎক্ষণিকভাবে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আগেই সতর্ক করা হয়েছিল।