ঋণ ও বিল খেলাপিদের নির্বাচনে প্রার্থী হতে বিদ্যমান আইন শিথিলে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়েছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা। নির্বাচন কমিশনের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সাত দিন আগে সব ধরণের ঋণ ও বিল পরিশোদের ক্ষেত্রে প্রার্থীকে নিয়মিত থাকতে হবে। এই আইন পরিবর্তন করে ইসির প্রস্তাবে বলা হয়েছিল খেলাপি বা অনিয়মিত থাকলেও প্রার্থী হতে পারবে। যদি প্রার্থীর বিরুদ্ধে এ সংক্রান্ত কোনো মামলা থাকে তবে তিনি অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন। সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইসির সঙ্গে ব্যাংক, সেবা প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষকসহ ১৪ জনের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠক করেন। ঋণ ও বিল খেলাপিদের ছাড় দেওয়ার বিষয়ে ইসির আইনি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুর আউয়াল, নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানাসহ ইসি সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে অংশ নিয়ে ব্যাকং ও সেবা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা বলেছেন, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) তালিকাভুক্ত হওয়ার অর্থ খেলাপি। মামলা করার বিষয়টি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। সেক্ষেত্রে আরপিওর বিদ্যমান বিধানই বহাল রাখা সমীচীন হবে। বৈঠক শেষে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, ‘বৈঠকে অধিকাংশই বলেছেন, ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে এখন যে বিধান রয়েছে তা থাকলেই ভালো হয়। ইসি যে প্রস্তাব করেছিল তাতে তারা খুব কমফোর্টেবল ফিল করেন না। আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব করা হবে কি না তা আরও চিন্তাভাবনা করে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সিইসি জানান, বর্তমান বিধানে সত্যিকারেরর যারা খেলাপি নন তারাও অনেক সময় অযোগ্য হয়ে পড়তে পারেন। ভোটে দাঁড়ানোর সুযোগ একজন নাগরিকের মৌলিক অধিকার। যেনতেনভাবে কারও অধিকার খর্ব না হয় তা নিশ্চিত করতেই ভিন্ন চিন্তা করেছে ইসি। ঋণ ও বিল আদায়ের জন্য যাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে তাদের ঋণখেলাপি হিসেবে গণ্য করতে চেয়েছিল ইসি। বিল খেলাপির বিষয়ে সিইসি বলেন, বিল না দিলে লাইন কেটে দেওয়া যায়। নানা কারণে হয়ত জানেনও না বিল খেলাপি হওয়ার তথ্য। ইসি প্রস্তাব করেছিল তাদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর বিল খেলাপি হিসেবে গণ্য করা। হাবিবুল আউয়াল বলেন, সভায় ব্যাংকাররা বলেছেন সিআইবি থেকে যে তালিকা সরবরাহ করা হয়, তার ভিত্তিতে খেলাপি নির্ধারিত হয়ে থাকে। মামলা করার বিষয়টি যুক্ত করতে চাইলে তাদের আপত্তি নেই। পূবালী ব্যাংকের জেনারেল ম্যানজার দেওয়ান রুহুল আহসান সাংবাদিকদের বলেন, তারা ব্যাংকের পক্ষ থেকে সিআইবি রিপোর্টকে প্রাধান্য দিতে বলেছেন। সেসঙ্গে প্রচলিত আইন যদি সংশোধন করতে চায় তাহলে মামলার বিষয়টি যুক্ত করা যেতে পারে। তিনি বলেন, মামলা করতে অসুবিধা নেই। তবে সিআইবিতে যাদের নাম থাকবে তাদেরকে ঋণখেলাপি বলতে হবে। মামলা করতে অনেকগুলো ধাপ থাকে। এটি সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষ-ডেসকোর প্রধান প্রকৌশলী রশিদুর রহমান জানান, বিল খেলাপিদের বিরুদ্ধে মামলা করার বিধানে তাদের সম্মতি নেই। সেক্ষেত্রে বিদ্যমান বিধানই বহাল রাখার পক্ষে তারা মতামত দিয়েছেন। তিনি বলেন, নির্ধারিত সময়ে বিল পরিশোধ না করলেই বিল খেলাপি হয়ে যায় সংশ্লিষ্টরা। বিষয়টি গ্রাহককে জানানো হয়। কিন্তু মামলা করতে গেলে সেবা প্রতিষ্ঠানের নানা ঝুঁকিও রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিদ্যমান আইনের পক্ষে তাদের অবস্থানের কথা বৈঠকে জানিয়েছেন। মামলা দায়েরে তাদের সম্মতি নেই।