1. nobinbogra@gmail.com : Md. Nobirul Islam (Nobin) : Md. Nobirul Islam (Nobin)
  2. bd.momin95@gmail.com : sojibmomin :
  3. bd.momin00@gmail.com : Abdullah Momin : Abdullah Momin
  4. bd.momin@gmail.com : Uttarkon2 : Uttar kon
দুধ ও ক্ষীরের তৈরি রসনা বিলাশ নওগাঁর প্যারা সন্দেশ - Uttarkon
বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০৪:২৪ অপরাহ্ন

দুধ ও ক্ষীরের তৈরি রসনা বিলাশ নওগাঁর প্যারা সন্দেশ

  • সম্পাদনার সময় : সোমবার, ৪ এপ্রিল, ২০২২
  • ৭৫ বার প্রদশিত হয়েছে

মাহমুদুন নবী বেলাল নওগাঁ প্রতিনিধি : ‘অল্প খেয়ে স্বাদ মেটেনা’ এ স্বাদের ভাগ হবেনা।’ এই বাক্যটি এখন যেন নওগাঁর প্যারা সন্দেশর ক্ষেত্রে খুব বেশিকিছু বলা তা কিন্তু নয়। সুখ্যাতি এখন দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশে পৌঁছেছে। নওগাঁ শহরের শ্রী শ্রী বুড়া কালিমাতা পুজা মন্ডপ গেট লাগোয়া এই প্যারা সন্দেশের দোকানটি প্রায় শত বছরের পুরাতন। মালিকানা বদল হয়েছে কিন্তু প্যারা সন্দেশ তৈরীর কৌশল রয়ে গেছে একই ঐতিহ্যে। এই প্যারা সন্দেশ যারা তৈরি করেন তারা সুষ্পষ্টভাবে বলতে পারেননি ঠিক কখন থেকে নওগাঁর ‘প্যারা’ সন্দেশের প্রচলন শুরু হয়েছে। তবে ধারণা করা হয় আনুমানিক নওগাঁয় প্রায় শত বছর থেকে প্যারা সন্দেশ তৈরী হচ্ছে। শহরের কালীতলা এলাকার শ্রীশ্রী বুড়ী কালী মাতা মন্দিরের পার্শ্বে শত বছর আগে থেকে এই ‘প্যারা’ সন্দেশ তৈরী হতো। এই সন্দেশ পূজারীরা বিভিন্ন পূজামন্ডপের দেব-দেবীর উপাসনার জন্য মন্দিরে ভোগ দিতেন। এখন বাড়িতে অতিথি আপ্যায়ন, আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে পাঠানো বা নিয়ে যাওয়া মর্যাদার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘প্যারা সন্দেশ’ মিষ্টির জগতের অনেক বড় একটি জায়গা দখল করে নিয়েছে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্যারা সন্দেশ তৈরি হলেও এটি নওগাঁ জেলা শহরে প্রথম শুরু হয়। স্থানীয়রা জানান, দেবীর আরাধনায় মিষ্টির প্রয়োজনেই প্রায় শত বছর আগে মা প্যারা সন্দেস এর দোকানীর পূর্ব পুরুষরা প্রথম তৈরি করেন ‘প্যারা’ সন্দেশ। কিন্তু পরবর্তীতে এই সন্দেশ শুধু দেবির আরাধনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণের কারণে এই সন্দেশ হয়ে উঠেছে এলাকার বিখ্যাত মিষ্টি হিসেবে। শুধু দেশের মধ্যেই নয়, এটি এখন যায় দেশের বাহিরেও। কালীতলা মহল্লার বাসিন্দা গৌতুম কুমার বলেন, নওগাঁতে বর্তমানে বেশ কয়েকজন প্যারা সন্দেস তৈরি করে থাকেন। তবে সৈকত দাস এর দোকানের প্যারা সন্দেস এর খ্যাতি জেলাজুড়ে। আর এই দোকানের প্যারা সন্দেস দেশের বিভিন্ন স্থানে যায়। এমন কি ভারতসহ কয়েকটি দেশে এই প্যারা সন্দেস যায়। প্রায় শত বছর থেকে এই প্যারা সন্দেস এর কদর চলে আসছে।

শহরের ষোষপাড়া মহল্লার বাসিন্দা মিতালী রায় বলেন, প্রতিদিন সকালে দেবীর আরাধনায় মিষ্টির প্রয়োজন হয়। মিষ্টি হিসেবে মন্দিরে ভোগ দেওয়ার জন্য সৈকতদের দোকানের প্যারা সন্দেস নিয়ে থাকি। দোকানের মালিকানা বিভিন্ন সময় পরিবর্তন হলেও তাদের দোকাদের প্যারা সন্দেস এর স্বাদ ও মান সেই আগের মতই আছে। পাশাপাশি প্যারা সন্দেস অনেকে বাসায় খাবারের জন্যও নিয়ে যায় এখান থেকে।

কথা হয় শহরের কালিতলার বিখ্যাত মা প্যারা সন্দেশ এর স্বত্ত্বাধিকারীর ছেলে সৈকত দাস এর সাথে, এসময় সৈকত বলেন, মহেন্দ্রী দাস নামে এক ব্যক্তি প্রথমে প্যারা সন্দেশ তৈরি শুরু করেন। তখন কালীতলা এলাকায় জনবসতি ছিল না বললেই চলে। মহেন্দ্রীর পর তার ছেলে ধীরেন্দ্রনাথ দাস দোকানের দায়িত্ব পান। সেই সময় বিমল মহন্ত নামে মিষ্টি তৈরির এক কারিগরের কাছ থেকেই প্যারা সন্দেসের সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। ধীরেন্দ্রনাথ দাস প্রায় ২৫ বছর ব্যাবসার পর দোকানটি সুরেস চন্দ্র মহন্তের কাছে বিক্রি করে দিয়ে অন্যত্র চলে যান। এরপর আবারও ওই দোকানের মালিকানা পরিবর্তন হয়। তার পর প্রায় ৩৫বছর ধরে প্যারা সন্দেন এর ব্যবসা করেন আমার বাবা বৈদ্য রতন দাস। আর বর্তমানে দোকানটি পরিচালনা করছি আমি।

সৈকত বলেন, বংশ পরম্পরায় এখানকার মিষ্টির কারিগররা নিরবচ্ছিন্নভাবে তৈরি ও সরবরাহ করে যাচ্ছেন নওগাঁর বিখ্যাত ‘প্যারা’ সন্দেশ। বর্তমানে নওগাঁয় বেশ কয়েকজন প্যারা সন্দেস তৈরি করলেও আমাদের দোকানের প্যারা সন্দেস এর ব্যাপক খ্যাতি রয়েছে। পূজা, ঈদসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানেই শুধু নয়, আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতেও নিয়ে যাওয়া হয় এই প্যারা সন্দেশ। প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৬০ থেকে থেকে ৭০ কেজি পর্যন্ত প্যারা সন্দেস তৈরি করা হয়ে থাকে। তবে পূজাসহ বিভিন্ন দিবসগুলোতে আরো বেশি পরিমাণ প্যারা সন্দেস তৈরি করা হয়।

সৈকত আরো বলেন, ‘প্যারা’ সন্দেশ তৈরির প্রথম ধাপে তরল দুধের সাথে চিনি মিশিয়ে জ্বাল করে তৈরি করা হয় ক্ষীর। ক্ষীর যখন হাতায় জড়িয়ে আসে তখন উষ্ণ ক্ষীর দু’হাতের তালু দিয়ে রোল করে সামান্য চাপ দিলেই তৈরি হয়ে যায় হালকা খয়েরী রংয়ের প্যারা সন্দেশ। তৈরি পদ্ধতি খুব সহজ। প্রতিটি প্যারা সন্দেশ প্রায় আধা ইঞ্চি চওড়া ও দুই ইঞ্চি লম্বা করা হয়ে থাকে। প্রতি কেজিতে ৬০ থেকে ৬৫ পিচ প্যারা সন্দেশ পাওয়া যায়। এক কেজি প্যারা সন্দেশ তৈরি করতে দরকার হয় প্রায় ৭ লিটার তরল দুধ। দুধ আর চিনি ছাড়া অন্য কোন উপকরণ না থাকায় এই সন্দেশ স্বাভাবিকভাবে রাখা যায় ৭ থেকে ১০ দিন। আর কৃত্রিম উপায়ে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে এই সন্দেশ ভালো রাখা যায়। প্রতি কেজিতে দুধ,চিনি, মশলাসহ সব মিলে খরচ পড়ে ৩২০-৩৩০টাকার মত। আর বিক্রি করা হয় ৩৭০-৩৮০টাকা কেজিতে। আমাদের দোকান থেকে প্যারা সন্দেস খুচরা ও পাইকারী বিক্রি করে থাকি।

শহরের ব্রীজের মোড়ে এলাকায় অবস্থিত দাস মিষ্টান্ন ভান্ডার এর ম্যানেজার সমন্তনাথ সাহা বলেন, শহরের কালীতলা মহল্লার সৈকত দাস এর দোকানের প্যারা সন্দেসের খুব খ্যাতি রয়েছে। এর চাহিদাও বেশ ভালো। মালিকানা পরিবর্তন হলেও স্বাদ ও মান ঠিক আগের মতই আছে। আমরা যারা খুচরা ব্যবসায়ী তারা প্রতিদিন তাদের কাছে প্যারা সন্দেস নিয়ে এসে বিক্রি করে থাকি।

হক মিষ্টান্ন ভান্ডার এর ম্যানেজার নূর ইসলাম বলেন, শুধু পূজা, ঈদই নয় আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতেও নিয়ে যাওয়া হয় এই প্যারা সন্দেশ। এছাড়া পার্শ্ববর্তী ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশে আত্মীয়-স্বজন এখানকার ‘প্যারা’ সন্দেশ নিয়ে যান। বর্তমানে প্রতি কেজি প্যারা সন্দেস এর দাম ৩৭০ থেকে ৩৮০ টাকা। আর স্বাদ ও মানের দিক থেকে এই প্যারা সন্দেশ মুখরোচক ও অতুলনীয়।

নওগাঁর প্যারা সন্দেশ এখন নওগাঁ জেলার পরিচিতির সাথে জড়িয়েছে তার নাম। সেই সাথে মিষ্টির জগতে বড় একটি অবস্থান দখল করেছে। এই প্যারা সন্দেশর সুনাম আরো ছড়িয়ে পড়বে এমন প্রত্যাশা নওগাঁর সচেতন মানুষের।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরও খবর
Copyright &copy 2022 The Daily Uttar Kon. All Rights Reserved.
Powered By Konvex Technologies