সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি: দেশের বৃহত্তম সৈয়দপুরে রেলওয়ে কারখানার রেডিওটারের মালামাল দেখিয়ে নিলামে বিক্রির কথা বলে প্রতারণার মাধ্যমে বগুড়ার এক ব্যবসায়ীর সাড়ে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র। মামলার প্রেক্ষিতে এ ঘটনায় জড়িত প্রতারক চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে সৈয়দপুর থানা পুলিশ। তবে ব্যবসায়ীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া টাকা উদ্ধার করতে পারেনি। গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলো সৈয়দপুর শহরের কয়াগোলাহাট দক্ষিণপাড়ার মৃত. সাখাতউল্লাহ’র ছেলে মোহাম্মদ আলম (৫৯) ও সাহেবপাড়ার মৃত. আলী আহম্মদের ছেলে মনিরুল ইসলাম (৬০), লক্ষ্মীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ উপজেলার চর চামিতা মিন্ত্রিপাড়ার মৃত. জালাল উদ্দিনের ছেলে আব্দুল গফুর (৬৪) ও একই উপজেলার আলাদাতপুর দরবেশবাড়ীর মো. দ্বীন মোহাম্মদের ছেলে হামিদুর রহমান (৬৯)। মামলা সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া শহরের আটাপাড়ার মোস্তফা খন্দকারের ছেলে মো. তামজীদ খন্দকার। শহরের চারমাথায় তাঁর হাবিব রেডিওটার ওয়ার্কসপ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। গত ১২ ফেব্রুয়ারী বিকেলে তাঁর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এক অজ্ঞাত ব্যক্তি আসেন। আগত ব্যক্তি সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় রেডিওটার মালামাল ওয়ার্কশনের (নিলামে) মাধ্যমে বিক্রির জন্য টেন্ডার পেয়েছেন বলে দোকান মালিক তামজীদ খন্দকারকে জানান। এ সময় দোকান মালিক ওই নিলামের মালামাল কেনার আগ্রহ প্রকাশ করলে তাকে মালামাল দেখতে সৈয়দপুরে আসতে বলেন অজ্ঞাত ব্যক্তি। তাঁর কথামতো ব্যবসায়ী তামজীদ খন্দকার গত ১৪ ফেব্রুয়ারি মালামাল দেখার জন্য তাঁর সঙ্গী জনৈক হাসান আলীকে নিয়ে বগুড়া থেকে সৈয়দপুরে আসেন। এরপর সৈয়দপুর বাস টার্মিনালে তাদের রিসিভ করে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার এক নম্বর গেটে নিয়ে আসেন ওই অজ্ঞাত ব্যক্তি। সেখানে তাদের সাথে জনৈক আলম নামের এক ব্যক্তির সাক্ষাৎ হলে তিনি সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার ভেতরে নিয়ে গিয়ে রেডিওটারের মালামালগুলো দেখান। পরবর্তীতে মালামালের দরদাম ঠিক করার জন্য অন্য এক অজ্ঞাত ব্যক্তির কাছে নিয়ে যায় আলম। সেখানে মালামালের ওজন ৫ টন এবং মূল্য সাড়ে ৯ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এরপর মালামালের অগ্রীম বাবদ ৫০ হাজার টাকা দাবি করে অজ্ঞাত ব্যক্তি। এ অবস্থায় ব্যবসায়ী তামজীদ সেখানে অজ্ঞাত ব্যক্তিকে তৎক্ষণাৎ নগদ ১০ হাজার টাকা দেন। আর ৪০ হাজার টাকা কয়েকটি বিকাশ নম্বরের মাধ্যমে প্রদান করেন। এরপর তামজীদ খন্দকার গত ১৫ ফেব্রুয়ারী পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে এসে অজ্ঞাত ব্যক্তির কথামতো তাঁর হাতে তুলে দেন। এ সময় অজ্ঞাত ব্যক্তিরা একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে সাথে নিয়ে যাওয়ার সময় ব্যাংক ড্রাফট ও গেট পাশ করার কথা বলে কৌশলে ব্যবসায়ী তামজীদ ও তার সঙ্গীকে পথে নামিয়ে দেয়। এ সময় তাদের সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার ষ্টোর গেটে সামনে যেতে বলে। পরবর্তীতে তারা ব্যবসায়ী তামজীদের সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে মাইক্রোবাসযোগে সটকে পড়েন। এ অবস্থায় প্রতারণা শিকার বগুড়ার ব্যবসায়ী নিরূপায় হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের কোন খোঁজ খবর করতে না পেয়ে সৈয়দপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগ পেয়ে সৈয়দপুর থানা পুলিশ ঘটনার তদন্তে নামে। পুলিশ তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রথমে সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে মোহাম্মদ আলম ও মনিরুল ইসলামকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে সোপর্দ করে পাঁচ দিনের রিমান্ডের জন্য আবেদন করলে আদালত গ্রেপ্তারকৃতদের একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। থানায় জিজ্ঞাসাবাদে লক্ষ্মীপুরের আব্দুল গফুর ও হামিদুর রহমানের এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা জানায় তারা পুলিশকে। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সৈয়দপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আনছার আলীর নেতৃত্বে পুলিশ গত বুধবার (১৬ মার্চ) লক্ষীপুর গিয়ে সেখানকার পুুলিশের সহযোগিতায় উল্লিখিত দুই ব্যক্তিতে গ্রেপ্তার করেন। সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল হাসনাত খান প্রতারণা ও বিশ্বাস ভঙ্গের মামলায় দুই দফায় চার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন মামলাটি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীপুর থেকে গ্রেফতার দুইজনকে সৈয়দপুর থানায় নিয়ে এসে আদালতে সোপর্দ করে পাঁচ দিনের রিমান্ডের জন্য আবেদন করা হয়েছে।