মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী: রাজশাহীর তানোরে কার্তিকের মাঝামাঝি সময়ে একটানা ভারী বর্ষণ ও ঝড়ো হাওয়ায় শত শত পুকুরের মাছ ভেসে গেছে এবং ডুবে গেছে বহু আমন ধানের ক্ষেত। গত ২৯ অক্টোবর বুধবার থেকে শুক্রবার ভোররাত পর্যন্ত চলা এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপজেলার কৃষি ও মৎস্যখাত ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ফলে কৃষকদের স্বপ্ন ভঙ্গের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
উপজেলা মৎস্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, তানোরে প্রায় ৫ হাজার ব্যক্তিগত এবং এক হাজার সরকারি খাসপুকুর রয়েছে। টানা বর্ষণে এর অধিকাংশ প্লাবিত হওয়ায় পুকুর মালিকরা ধারণা করছেন, প্রায় ৩০ মেট্রিক টন মাছ ও ২৫ লাখ পোনা ভেসে গেছে। এতে আনুমানিক দুই কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। অনেক পুকুর মালিক ঘের দিয়েও মাছ রক্ষা করতে পারেননি।
কামারগাঁ ইউনিয়নের একাধিক চাষি জানান, বড় মৎস্য চাষি নাজমুল হাসান শতাধিক বিঘার ১২টি লিজ নেওয়া পুকুরে মাছ চাষ করেন। ভারী বর্ষণে তার প্রায় ২৫ লাখ টাকার মাছ ও পোনা ভেসে গেছে। ধানতৈড় মহল্লার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এই দুর্যোগে তার অন্তত ৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আরেক মৎস্যচাষি ফকির উদ্দিন জানান, তার পুকুরের মাছগুলো এই মাসেই বিক্রি করার কথা ছিল, কিন্তু তার আগেই সবকিছু ভেসে গিয়ে তিনি সর্বস্বান্ত হয়েছেন। এদিকে, এক ভুক্তভোগী মৎস্যচাষি জানান, তিনি ব্যাংক ও বিভিন্ন এনজিও থেকে প্রায় ৬০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে মাছ চাষ করছিলেন। তার সব পুকুর প্লাবিত হওয়ায় তিনি এখন ঋণের কিস্তি পরিশোধের চিন্তায় দিশেহারা।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে মোট ২০৩ হেক্টর রোপা আমন ধান পানিতে ডুবেছে, যার মধ্যে ৫০ হেক্টর পুরোপুরি এবং বাকি ১৫০ হেক্টর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কামারগাঁ, পাঁচন্দর, চান্দুড়িয়া ইউনিয়ন এবং তানোর পৌরসভায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এতে আধাপাকা ধানগাছ মাটিতে নুয়ে পড়েছে। ফলে ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি করেছে।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে তানোর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বাবুল হোসেন জানিয়েছেন, ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেলেও একটানা বৃষ্টির কারণে পরিদর্শনে যাওয়া সম্ভব হয়নি। বৃষ্টি থামার পর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
তবে এ বিষয়ে জানার জন্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহমেদের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। এই আকস্মিক দুর্যোগে তানোর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল, যেমন আমশো তাঁতিয়ালপাড়া, গোকুল মথুরা, তালন্দ, বাতাসপুর, হাতিশাইল, চন্দনকৌঠা, এবং ইলামদহীসহ অনেক গ্রাম ও রাস্তাঘাট প্লাবিত হওয়ায় সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে।