মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী: রাজশাহীর তানোর উপজেলায় প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই কৃষি জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি কেটে জমি ভরাট করে বাড়ি নির্মাণের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার বাধাইড় ইউনিয়নের একানপুর গোয়ালপাড়া মৌজায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী হিসেবে পরিচিত পলাশ আলী প্রায় ৪২ শতক কৃষি জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে তা উঁচু করেছেন। জমিটি তার স্ত্রী এবং ঝিনাখৈর স্কুলের শিক্ষক নাজনিন খাতুনের নামে রেকর্ডভুক্ত। এ ঘটনায় আশেপাশের কৃষি জমির উর্বরতা কমে যাওয়া এবং অন্যান্য কৃষকদেরও একই ধরনের কাজে উৎসাহিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। তাদের মতে, এভাবে কৃষি জমি ধ্বংস হলে তা দেশের খাদ্য উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করবে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত পলাশ আলী প্রশাসনিক অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেননি বলে জানিয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেন, তার ভাই পুলিশে চাকরি করেন এবং বিষয়টি তিনিই দেখাশোনা করছেন।
অন্যদিকে, পলাশের স্ত্রী ও জমির মালিক নাজনিন খাতুন জানান, তারা কেবল পুকুর খননের জন্য প্রশাসনের অনুমতির প্রয়োজন সম্পর্কে জানতেন। কিন্তু জমি উঁচু করার জন্য অনুমতি লাগে, সে বিষয়ে তারা অবগত ছিলেন না। তানোর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আফজাল হোসেন এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাইমা খান, উভয়েই বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন বলে জানিয়েছেন। তবে তারা দুজনেই অভিযোগ যাচাই করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন। আইনের বিধান বাংলাদেশে কৃষি জমির সুরক্ষা এবং এর শ্রেণি পরিবর্তন রোধে কঠোর আইন বিদ্যমান রয়েছে। ব্যবহারকারীর প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, কৃষিজমি রক্ষা ও ব্যবহার আইন, ২০২৪ এর কথা বলা হয়েছে। যদিও এই আইনটি এখনো খসড়া পর্যায়ে রয়েছে এবং ভূমি জোনিং ও সুরক্ষা আইন, ২০২৪ নামে পরিচিত। এই খসড়া আইনে অনুমতি ছাড়া কৃষি জমির শ্রেণি পরিবর্তন, মাটি কাটা বা ভরাট করাকে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আইনটির খসড়ায় বিধান লঙ্ঘনের জন্য সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এরই মধ্যে ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩ কার্যকর হয়েছে, যা ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন অপরাধ প্রতিরোধ ও তার প্রতিকারের ব্যবস্থা করে। এই আইন অনুযায়ী, কোনো জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে লেয়ার বহির্ভূতভাবে ব্যবহার করলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃষি জমির উপরিভাগের মাটি (টপসয়েল) সবচেয়ে উর্বর হয় এবং ফসল উৎপাদনের জন্য অপরিহার্য। এই মাটি কেটে ফেললে জমির উর্বরতা শক্তি মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়, যা দীর্ঘমেয়াদে খাদ্য নিরাপত্তায় প্রভাব ফেলে। স্থানীয় প্রশাসন অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে এলাকাবাসী আশা প্রকাশ করেছেন। একইসাথে, কৃষি জমির গুরুত্ব সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করার মাধ্যমে এই ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করা সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।