আগামী ১৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন। নির্বাচন কে ঘিরে ক্যাম্পাসে চলছে নানাবিধ প্রচারণা যার অধিকাংশই অনলাইন ভিত্তিক। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী ছাত্রশিবির পরিচালিত চাকসু নির্বাচনী প্রচারণা কেন্দ্রিক একটি পেইজ “সম্প্রীতির শিক্ষার্থীর জোট” নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে চলছে সমালোচনার ঝড়। মূলত, প্রায় ৬০ হাজারের বেশি ফলোয়ারের উক্ত পেইজটি বুস্টিং এ খরচ করা হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। মেটা অ্যাড লাইব্রেরির বিশ্লেষণ বলছে, শুধু অনলাইন প্রচারণাতেই প্যানেলটির পেইজ লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করছে। সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট (ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল) প্রায় ৭টি বিজ্ঞাপন দিয়েছে, এর প্রতিটির গড় ব্যয় কম করে হলেও ১০০ ডলারের যার মোট ব্যয় দাঁড়ায় আনুমানিক দেড় লাখ টাকার কাছাকাছি। শুধুমাত্র প্যানেলটির অফিসিয়াল পেজেই নয়, তাদের অনেক প্রার্থী ও কর্মী তাদের নিজস্ব ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকেও বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। অর্থাৎ, শুধুমাত্র চাকসু নির্বাচনী ডিজিটাল প্রচারেই ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলটি যে অর্থ ব্যয় করছে তার সাথে তাদের মাঠ পর্যায়ের প্রচারণায় পোস্টার, কর্মী সমাবেশ, পরিবহন ও অন্যান্য ব্যয় মিলিয়ে মোট অর্থের অংক গিয়ে দাঁড়ায় চাকসুতে প্রতিযোগিতা করা অন্যান্য প্যানেলের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি, তা সহজেই অনুমেয়। কেবল তাই নয়, এতো বিরাট অংকের অর্থের জোগান কোথা থেকে আসছে তা নিয়েও সন্ধিহান শিক্ষার্থীরা, যেহেতু সংগঠনটির নিয়ম অনুসারে এখানকার সকল সদস্যই ছাত্র, সেহেতু ছাত্রদের পক্ষে লক্ষাধিক টাকার যোগান দেওয়া অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ। আবার, প্রকাশ্যে সবাই তাদের বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অংশ বলেই জানে, তবে ছাত্রশিবিরের দীর্ঘদিনের দাবি তারা কোন দলের বা সংগঠনের অঙ্গ সংগঠন নয়, সেক্ষেত্রেও তাদের নীতি অনুসারে কোন রাজনৈতিক দল বা প্রতিষ্ঠানের থেকেও তাদের অনুদান আসার কথা নয়। ইতোমধ্যে তাদের সংগঠনের একাধিক সদস্যদের আর্থিক অসুবিধা সহ অন্যান্য কারণ দেখিয়ে হলে বিশেষ বিবেচনায় মেরিট ব্যতীত আসন লাভের দিকটি সামনে এসেছে। সেখান থেকেও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে আলোচনা আরেকটি দিক হলো, লক্ষাধিক টাকা যেই সংগঠন কেবল অনলাইন প্রচারণাতেই ব্যয় করতে পারে, তাহলে তাদের সদস্যদের আর্থিক অসচ্ছলতা কিভাবে থাকে। তবে কি ছাত্রশিবির তাদের সদস্যদের অসুবিধার কথা চিন্তা করে না নাকি এটি তাদের হল দখলের পাঁয়তারা? এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে সমালোচনার ঝড়, সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে তৈরি হয়েছে নানাবিধ প্রশ্ন, ছাত্রশিবির এত টাকা কেন ব্যয় করছে বা এতো টাকার উৎসই বা কি? শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের সেবা করাই কি তাদের একমাত্র লক্ষ্য নাকি পরবর্তীতে নির্বাচিত হয়ে তারা ব্যক্তিগত ও সংগঠনগত প্রভাব বিস্তার, প্রশাসনিক সুবিধা লাভ কিংবা ভবিষ্যতে ক্ষমতার জায়গা নিশ্চিত করতে চাচ্ছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী মোছাদ্দিকুর জামান আল মামুন দৈনিক দিনকালের চবি প্রতিনিধি আল ইয়ামিম আফ্রিদি কে বলেন, চাকসু নির্বাচনী প্রচারণায় ছাত্রশিবিরের অতিরঞ্জিত কাজের পিছনে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় অবশ্যই সন্দেহ প্রবণ। এতো অর্থ ব্যয়ের পিছনে জড়িত রয়েছে ক্ষমতা, প্রভাব এবং নানা অঘোষিত স্বার্থের হিসাব-নিকাশও। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোহাম্মদ আলী দৈনিক দিনকালের চবি প্রতিনিধি আল ইয়ামিম আফ্রিদি কে বলেন, ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে না, একটা অংশ এটাকে সমালোচনা হিসেবে সামনে নিয়ে আসছে। আমার জানামতে বিশ্ববিদ্যালয় বিদ্যমান যতগুলো প্যানেল আছে সবগুলো প্যানেলই তাদের প্যানেলের পেইজ কে বুস্ট করছে। যারা এটাকে সামনে নিয়ে আসছে স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী জোট তাদের নিজেদের পেজেও কয়েকটা পোস্ট বুস্ট করছে। হলে শিবিরের অসচ্ছলতার কারনে বিশেষ বিবেচনায় আসন লাভে উক্ত সদস্যদের সংগঠন থেকে সহযোগিতার বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ব্যক্তিগত টাকা তো সংগঠন দেয় না, আমি কিভাবে চলবো সেটা তো আমার সংগঠন দিবে না, আমার নিজের টাকা দিয়ে তো আমাকেই চলতে হবে। সংগঠন সংগঠনের ফান্ডিং দিয়ে চলে। আমাদের একটা ছাত্রকল্যাণ ফান্ড আছে সেখানে আমাদের যখন যতটুকু সক্ষমতা থাকে ততক্ষণ আমরা দেওয়ার চেষ্টা করি। ছাত্রদের সংগঠন হিসেবে চাকসু প্রচারণায় লক্ষ টাকা ব্যয়ের ক্ষেত্রে প্যানেলটির অর্থের উৎসের বিষয়ে জানতে ছাত্রশিবির সমর্থিত সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোটের ভিপি প্রার্থী মোঃ ইব্রাহিম হোসেন রনির সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করে হলেও তিনি সাড়া দেননি।