আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন নিয়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের দেওয়া ভাষণ যথেষ্ট শক্তিশাল ছিল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতেই যে নির্বাচন হবে, সে বিষয়ে বিএনপি ‘নিশ্চিত’। গত শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ভাষণ দেন। অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গী ছিলেন বিএনপি মহাসচিবসহ আরও দুটি দলের প্রতিনিধি। সেখান থেকে ফিরে নিউইয়র্কের গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ মন্তব্য করেন।প্রধান উপদেষ্টার ভাষণকে স্বাগত জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ভাষণ যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে তিনি (অধ্যাপক ইউনূস) এসব বিষয় বারবার উল্লেখ করছেন। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো সন্দেহ নেই। আমরা নিশ্চিত যে নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হবে। ড. ইউনূসের ভাষণে সরকারের সংস্কার কর্মসূচি ও জাতীয় ঐক্য উভয়ই প্রতিফলিত হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে নিঃসন্দেহে সেই উদ্দেশ্যের কথাই বলেছেন, যার ভিত্তিতে তাদের সরকার গঠিত হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, তারা এমন সময়ে দায়িত্ব নিয়েছিলেন যখন গণঅভ্যুত্থানের পর দেশে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল। রাজনৈতিক দল ও শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে তাদের সেই দায়িত্ব দিয়েছিল। দেশের অর্থনীতি ও রাজনীতি যে ‘ভয়াবহ’ অবস্থায় ছিল, এক বছরের মধ্যেই সরকার আপেক্ষিকভাবে ‘ভালো অবস্থায়’ আনতে চেষ্টা করেছে, এসব বিষয়ও প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে প্রতিফলিত হয়েছে বলে তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব। বিএনপি মহাসচিব বলেন, অধ্যাপক ইউনূস ব্যাখ্যা করেছেন কীভাবে তার সরকার কাজ শুরু করেছে এবং অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার পাশাপাশি দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সংস্কারের দাবিও মোকাবিলা করেছে। আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরেই এ ধরনের প্রস্তাব দিয়ে আসছি। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ২০১৬ সালে প্রথম ভিশন ২০৩০ উপস্থাপন করেছিলেন, যেখানে কাঠামোগত ও রাজনৈতিক সংস্কারের কথা বলা হয়েছিল। এছাড়া আমাদের নেতা তারেক রহমান ২০২২ সালে ৩১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন, যেখানে রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কার ও অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ যে পরিস্থিতি তৈরি করেছিল তা মৌলিক পরিবর্তনকে ‘অপরিহার্য’ করে তুলেছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, একদিকে রাষ্ট্র কাঠামো পরিবর্তন এবং অন্যদিকে অর্থনৈতিক কাঠামো সংস্কার না করলে জাতিকে এগিয়ে নেওয়া কঠিন হতো। এ কাজই তারা (ইউনূস সরকার) শুরু করেছেন। আজ তিনি সেই বিষয়গুলো জাতির সামনে যেমন উপস্থাপন করেছেন, তেমনি জাতিসংঘের বৈশ্বিক ফোরামেও তুলে ধরেছেন। প্রধান উপদেষ্টার ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গির’ প্রশংসা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা খুব খুশি যে, ইতিহাসে প্রথমবার তিনি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে সরকারের কাজে অন্তর্ভুক্ত করেছেন এবং তাদেরকে জাতিসংঘে সঙ্গে নিয়েছেন। তার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল জাতির ঐক্য প্রদর্শন। এটি এক অনন্য উদ্যোগ এবং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এজন্য আমরা পূর্ণ সহযোগিতা দিয়েছি এবং আমাদের নেতা তারেক রহমানও এটিকে সমর্থন করেছেন। অনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) ব্যবস্থায় নির্বাচনের দাবিতে জামায়াতে ইসলামীর আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়েছি, বিএনপি নিম্নকক্ষে পিআরের পক্ষে নয়, এমনকি উচ্চকক্ষেও এর পক্ষে আমরা কথা বলিনি। তবে তিনি এও মনে করেন, এ ধরনের বিষয়গুলো পরবর্তী সময়ে আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করা হবে।