লাদাখ— হিমালয়ের উচ্চশীতল মরুভূমিতে অবস্থিত একটি অঞ্চল। প্রতিবেশী ভারত-চীন সীমান্ত সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে অবস্থান করলেও সম্প্রতি জেনারেশন‑জি (জেন জি) নেতৃত্বাধীন সহিংস বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) লাদাখের রাজধানী লেহে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) আঞ্চলিক কার্যালয় আগুনে ভস্মীভূত হয়। পুলিশের সঙ্গে এই সংঘর্ষে অন্তত চারজন নিহত এবং বহু মানুষ আহত হন।
আন্দোলনের পটভূমি
২০১৯ সালে ভারত সরকার কাশ্মীরের বিশেষ রাজ্য মর্যাদা ও সাংবিধানিক স্বায়ত্তশাসন বাতিল করে এককভাবে লাদাখকে কেন্দ্রশাসিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে। যা ওই অঞ্চলের মানুষের ওপর প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা হ্রাস করে দেয়।
অভ্যুত্থিত আন্দোলনকারীদের দাবি নিম্নলিখিত বিষয়গুলোকে কেন্দ্র করে:
রাজ্য মর্যাদা দেওয়া হোক; অর্থাৎ স্থানীয় সরকার নির্বাচনের অধিকার ও প্রশাসনিক স্বায়ত্ততা পুনরুদ্ধার করা হোক।সংবিধানের ষষ্ঠ সূচির আওতায় এলাকা অন্তর্ভুক্ত করা হোক, যা টফসিলি উপজাতি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রশাসনিক কাঠামো নিশ্চিত করে। যুব-সমাজের বেকারত্ব, চাকরিতে সুযোগের সংকোচন, সরকারি প্রতিশ্রুতি না মানা ও প্রশাসনিক উদাসীনতা তাদের ক্ষোভের মূল কারণ।
নতুন ভেঙে পড়া শান্তি
লাদাখে গত কয়েক বছর ধরে স্থানীয় নাগরিক সংগঠনগুলো শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা, অনশন ও আলোক সেঁভিডা নানা প্রচারণায় নিয়োজিত ছিলেন। কিন্তু বুধবারের ঘটনায় শান্ত আন্দোলন থেকে একটি অংশ তরুণদের মধ্যে সহিংস প্রবণতায় সরে যায়। সোনম ওয়াংচুক, যিনি অনশনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, এক ভিডিও বার্তায় বলেন, “এই ঘটনা তরুণদের বিস্ফোরণ, এক ধরনের ‘জেন-জি বিপ্লব’ যা তাঁদের রাস্তায় নামিয়ে এনেছে।”
সংঘর্ষের সময়কার ঘটনাবলি ও প্রত্যুত্তর
আন্দোলনের অংশ হিসেবে অনশন শুরু হয়েছিল প্রায় ১৫ দিন আগে। অনশনকারীদের মধ্যে বর্ষশীয় ও অসুস্থ ব্যক্তি হাসপাতালে নথে যান, যা আন্দোলনের কর্মসূচিকে তীব্রতা এনে দেয়। সংঘর্ষের সময় আন্দোলনকারীরা পুলিশ ও বিজেপি অফিসে পাথর নিক্ষেপ, যানবাহন ও সরকারি ভবন ভাঙচুর ও আগুন ধরানোর ঘটনাও ঘটায়। নিরাপত্তা বাহিনী বাতাস, ব্যাটন ও কখনো গুলি ব্যবহার করে প্রতিরোধ করতে গিয়ে হতাহত হয়।
ক্ষয়ক্ষতির পরিমাপ
আনুমানিক চারজন আন্দোলনকারী নিহত ও অনেকেই আহত। নিরাপত্তা বাহিনীর অনেক সদস্যও আহত হয়েছেন।
প্রশাসন এলাকা ঘিরে জরুরি বিধিনিষেধ আরোপ করেছে এবং দরকার পড়লে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
গুরুত্ব ও প্রভাব
এই ঘটনা শুধু লাদাখেই নয়, কাশ্মীর উপত্যকা ও বড় রাজ্য‑রাজনীতিতেও রকমারি প্রভাব ফেলতে পারে। যুব সমাজের হতাশা, ভাষ্য‑উচ্চারণ ও রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের অভাব, প্রশাসন ও কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিশ্রুতির প্রতি অবস্থা মন্থর হলে সহিংসতা আরও বাড়তে পারে— এ বিষয়ে বিশ্লেষকরা সতর্ক করছেন।
সূত্র: আল-জাজিরা