1. nobinbogra@gmail.com : Md. Nobirul Islam (Nobin) : Md. Nobirul Islam (Nobin)
  2. bd.momin95@gmail.com : sojibmomin :
  3. bd.momin00@gmail.com : Abdullah Momin : Abdullah Momin
  4. bd.momin@gmail.com : Uttarkon2 : Uttar kon
চুম্বকে বাধা শেফালীর জীবন - Uttarkon
শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৬:৩২ অপরাহ্ন
শিরোনাম:
ধুনটে যমুনা নদীতে সেলফি তোলার সময় এক শিক্ষার্থী নিখোঁজ যুক্তরাষ্ট্র সফরে হতাশায় ডুবলেন মোদি, কোনো ছাড় দেননি ট্রাম্প ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, আরো কর্মী নিতে আমিরাতের প্রতি ড. ইউনূসের আহ্বান কিছু রাজনৈতিক দল বিভ্রান্তিমূলক কথা বলে নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা করছে : মির্জা আব্বাস হাসিনা ও তার কর্মকর্তাদের খুঁজে বের করে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে : ড. ইউনূস বাংলাদেশে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা নেই : ট্রাম্প বগুড়া শহর বিএনপির প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত অপরাধ করেও বহাল তবিয়্যতে গোদাগাড়ীর স্বেচ্ছাসেবক-লীগ নেতা সেলিম! গ্রেফতারের দাবি, বিএনপি নেতা ও স্থানীয়দের রাজশাহীতে বিপুল পরিমাণ দেশী-বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার করেছে যৌথ বাহিনী রাজশাহী মহানগরীর শ্রীরামপুরে ফেনসিডিল-সহ মাদক কারবারী ওবায়দুল গ্রেফতার

চুম্বকে বাধা শেফালীর জীবন

  • সম্পাদনার সময় : রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
  • ২২ বার প্রদশিত হয়েছে

শাহীন রহমান, পাবনা: প্রায় ৪৫ বছর আগের কথা। বিয়ের পর স্বামীর সাথে ভালই চলছিল শেফালী বেগমের সংসার। হঠাৎ করেই একদিন উধাও হয় তার স্বামী আলম হোসেন। তারপরই পাল্টে যায় শেফালীর জীবন। কি করবেন ভেবে না পেয়ে বেছে নেন এক অদ্ভূত আয়ের জীবন। চুম্বকের সাহায্যে লোহার টুকরো কুড়িয়ে সেগুলো বিক্রি করে চলে তার একাকী সংসার। বাস করেন ভাঙাচোরা ছোট্ট এক ঝুপড়ি ঘরে। সাদা-কালো চুলের শ্যামলা বর্ণের এ নারীকে দেখে অপরিচিতরা অনেকে পাগল ভাবেন। কিন্তু পরিচিতরা তাকে চেনেন, শেফালী বেগম (৭০) পাগল নয়। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে তার এই অবস্থায় পাশে নেই কেউ। পরিত্যক্ত চাটমোহর দাতব্য চিকিৎসালয়ের উত্তরপাশে বড়াল নদীপাড়ে ছোট্ট ভাঙ্গাচোরা এক ঝুপড়ি ঘরে শেফালীর বসবাস। স্বামী, সন্তান, আত্মীয়-স্বজন কেউ না থাকায় এক দুর্বিষহ মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি। কিছুদিন আগে চাটমোহর পৌর সদরে কথা হয় শেফালী বেগমের সাথে। তিনি জানান, প্রায় ৪৫ বছর আগের কথা। তাঁর পৈত্রিক নিবাস চাটমোহর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের লাউতিয়া গ্রামে। পিতা মৃত আব্দুর রহমান প্রামাণিক। শেফালীরা ছিলেন চার ভাই, দুই বোন। বাবা-মাসহ বড় পরিবার পরিচালনা করতে হিমশিম খেতেন শেফালীর মৎসজীবি বাবা আব্দুর রহমান। শেফালী যখন ছোট তখন তার বাবা মারা যায়। তাই অভাবের সংসারে পড়ালেখার সুযোগ হয়নি শেফালীর। এক পর্যায়ে কাজের সন্ধানে চলে যান পার্শ্ববর্তী ঈশ্বরদী উপজেলায়। ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশনের পাশে থাকতেন তিনি। যৌবনের অনেকটা সময় কাটিয়েছেন সেখানে। জিআরপি থানার তৎকালীন পুলিশ সদস্যরা তার অসহায়ের কথা ভেবে আলম হোসেন নামে রংপুরের এক যুবকের সাথে বিয়ে দিয়ে দেন শেফালীকে। অন্ধকার জীবনে নতুন সংসার হয় শেফালীর। স্বামীর সাথে ভাড়া বাড়িতে সুখে দুঃখে ভালই দিন কাটছিল তাদের। প্রায় পনেরো বছর সংসার করার পর একদিন শেফালীকে ছেড়ে হঠাৎ পালিয়ে যায় আলম। অনেক খুঁজেও স্বামীকে আর ফিরে পাননি তিনি। পরে শুনেছেন অন্য কাউকে বিয়ে করে তার সাথে সংসার করছেন আলম। কি করবেন, কিভাবে চলবেন ভেবে না পেয়ে অভিমানে ঈশ্বরদী ছেড়ে জন্মভূমি চাটমোহরে ফিরে আসেন শেফালী। পৌর সদরে সুলতান হোসেন নামের এক ব্যক্তির সহায়তায় তার জায়াগায় একটি ঝুপড়ি ঘর তুলে বসবাস করতে থাকেন। সেখান থেকে নিমতলা এলাকায় বড়াল নদীর পাড়ে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স এর পাশে সরকারী ভাঙন জায়গায় মাথা গোঁজার ঠাঁই হয় শেফালীর। কয়েক বছর পর সেখান থেকেও সরে যেতে হয় তাকে। সর্বশেষ গত প্রায় দশ বছর যাবত বসবাস করছেন পরিত্যক্ত চাটমোহর দাতব্য চিকিৎসালয়ের উত্তর পাশে বড়াল নদীপাড়ে ছোট্ট ভাঙ্গাচোরা এক ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করছেন তিনি। শেফালী বেগম বলেন, খেয়ে পরে জীবন চালানোর জন্য কিছু না কিছু তো করতে হবে। চেয়ে চিন্তে ভিক্ষা করে পেট চলে না। তাই বেঁচে থাকার জন্য পেশা হিসেবে বেছে নেন চুম্বকের সাহায্যে লোহা সংগ্রহের কাজ। ভোর হলে বেরিয়ে পড়েন যেদিকে মন চায়। মাঝারী আকৃতির একটা চুম্বকের সাথে রশি বাঁধা থাকে। চুম্বকটি রাস্তায় ফেলে রশির অপর প্রান্ত ধরে চুম্বকটিকে টেনে টেনে হেঁটে চলেন তিনি। চুম্বকের আকর্ষণে চুম্বকের সাথে আটকে আসে লোহার টুকরো, পুরাতন ব্লেড ও অন্যান্য লৌহজাত দ্রব্য। বিক্রি হয় না বলে ধারালো ব্লেডগুলো চুম্বক থেকে টেনে খুলে ফেলে দেন তিনি। লোহার টুকরোগুলো সংগ্রহ করে বিক্রি করে যে টাকা পান তাতেই চলে শেফালীর জীবিকা, প্রাণের স্পন্দন। প্রায় সারাদিন চলে লোহা ও প্লাস্টিকের বোতল সংগ্রহের কাজ। লোহা প্লাস্টিকের বোতল কুড়িয়েই জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি। সংগৃহীত লোহা, প্লাস্টিকের বোতল চাটমোহর দাতব্য চিকিৎসালয়ের বারান্দায় জমান। কিছুদিন পর পর বিক্রি করেন। যে টাকা পান তা দিয়েই খাবারের ব্যবস্থা করতে হয় তাকে। শেফালী আরো জানান, বাড়িঘর, ছেলে মেয়ে কেউ নেই তাঁর। বয়স হয়ে যাওয়ায় এখন কাজ করা কঠিন হয়ে গেছে। অসুখ বিসুখ হয়। পেটের ভাত কাপড়ের পাশাপাশি লাগে ওষুধপত্রও। তাই জীবন চালাতে কাজ করতে হচ্ছে। ভাঙ্গা ঘরে শেয়াল কুকুর ঢোকে। রান্না করা ভাত কুকুরে খেয়ে যায়। বৃষ্টির সময় পানি পরে ঘরের চাল দিয়ে। একটা ঘর থাকলে সেখানে নিশ্চিন্তে থাকতে পারতেন তিনি। সরকারীভাবে একটা ঘরের ব্যবস্থা হলে শান্তিতে মরতে পারতাম। এ বিষয়ে চাটমোহর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সোহেল রানা বলেন, ’শেফালীর ব্যাপারটি আমি জানলাম। তিনি যদি চাটমোহরের নাগরিক হয়ে থাকেন সমাজসেবা অফিস থেকে বয়ষ্ক ভাতার ব্যবস্থা করে দেব। অসুস্থ্য হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগি কল্যাণ সমিতির মাধ্যমে চিকিৎসার ব্যবস্থা করবো।’ চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুসা নাসের চৌধুরী বলেন, ‘তাঁর বিষয়ে কেউ কিছু জানায়নি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁর বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হবে। আর সরকারি প্রকল্পের ঘর খালি থাকা সাপেক্ষে তাকে একটি ঘর বরাদ্দ দেওয়া যায় কি না সেটি দেখা হবে।’

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরও খবর
Copyright &copy 2022 The Daily Uttar Kon. All Rights Reserved.
Powered By Konvex Technologies