স্বেচ্ছাচারিতায় জোর পূর্বক একাডেমিক নম্বর কর্তন করেও ফ্যাসিবাদ, আওয়ামীপন্থী, বিতর্কিত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও ২টি ফৌজদারি মামলার আসামী আবু সাইম জাহানের কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দুপুরে বগুড়া প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন বগুড়া পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের পাওয়ার টেকনোলজির ৮ম পর্বের শিক্ষার্থী বাপ্পি রহমান, মোঃ সাদিকুর রহমান, মোঃ জোবায়ের হোসেন, মোঃ আব্দুর রহিম, মোঃ ফরহাদ হোসেন, মোঃ রাজু আহম্মেদ। লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন , “আমরা অত্যন্ত ভারাক্রান্ত মনে আপনাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, আমরা অত্র ইনস্টিটিউটে ষষ্ঠ পর্বে অধ্যয়নকালে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো: আবু সাইম জাহানের অনিয়মভাবে স্বেচ্ছাচারিতায় জোরপূর্বক আমাদের একাডেমিক নম্বর কর্তন করেন। আমাদের প্রত্যেক সেমিস্টারে বিষয়ভিত্তিক পর্ব সমাপনী পরীক্ষার প্রাকটিক্যাল কন্টিনিউয়াস, প্রাকটিক্যাল ফাইনাল ও থিউরি কন্টিনিউয়াস নম্বর থাকে, যা এ বিষয়ের শিক্ষক কর্তৃক প্রদত্ত নাম্বার বোর্ডে প্রেরনের সময় কর্তনের বিষয়টি অবগত হলে তৎকালীন অধ্যক্ষের নিকট আবেদন জানালে তিনি কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করে আমাদেরকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেন। পরবর্তীতে আমরা কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান মোঃ আলী আকবর খান, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ আজিজ তাহের খান, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সচিব স্যার সহ স্যারদের সাথে যোগাযোগ করলেও আজও পর্যন্ত আমাদের বিষয়টির কোন ফলাফল পাইনি।
আমরা যৌক্তিকভাবে একটি বিষয়ে অবগত করতে চাই, আমাদের প্রত্যেক সেমিস্টারে অনলাইনে বিষয় ভিত্তিক শিক্ষক কর্তৃক প্রদত্ত নম্বর একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রেরণ করতে হয় যা অধ্যক্ষের তত্ত্বাবধানে পাসওয়ার্ড এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক নম্বর প্রেরণের মাধ্যমে একটি হার্ডকপি এবং শিক্ষক প্রদত্ত নম্বরের হার্ডকপি, দুইটিই ডিপার্টমেন্টে সংরক্ষিত থাকে। প্রত্যেক বছর এই কপিগুলো সংরক্ষণ করা হয়ে থাকলেও আমাদের উক্ত পর্বের সকল বিষয়ের মার্কশিটের কপি আমরা দেখতে চাইলে আমাদের তা দেখাতে আমাদের নিজ ডিপার্টমেন্ট এবং রেজিস্টার শাখা ব্যর্থ হয় এবং এতে আমাদের সন্দেহ অনেক প্রবল হয়। ইতিমধ্যে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর হতে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে কয়েক দফায় তদন্ত হয়েছে। তিনি দৃশ্যমান এই অপরাধ ঘটিয়েছেন, কিন্তু তৎকালীন আওয়ামী পরিবারের সন্তান হওয়ায় বারবার তিনি সুকৌশলে তদন্ত কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করেছেন। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থী। আমরা সকলেই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্কাউটিং করি এবং আমাদের ইনস্টিটিউটে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার বিষয়ে আমাদের ইনস্টিটিউট কেন্দ্রিক ফেসবুক গ্রুপগুলোতে আমাদের এডমিনশীপ থাকায় অনেক সময় তার বিতর্কিত কাজের জন্য আমরা প্রতিবাদ জানাই সেই আক্রোশে তিনি আমাদের অযৌক্তিক ও অনৈতিক এই কাজটি করেছেন বলে আমরা মনে করি যা সম্পূর্ণ তার ক্ষমতার অপব্যবহার ও বেআইনি।
আপনাদের আরো অবগতির জন্য জানাই, তিনি ২০০৯ সালের শেষে বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর হিসেবে জয়েন করেন। তিনি ২০১৪ সালে এখানে চাকরি করাকালীন অবস্থায় তার বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা হওয়ার কারণে তার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা ও অধিদপ্তর হতে বরখাস্তের চিঠি জারি হয়। শুধু তিনি নন তার সকল ভাই বোন এবং মা সবাই এ সকল মামলার আসামি এবং মামলাগুলো এখনও চলমান রয়েছে।তিনি সেই বিষয়গুলো গোপন করে ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে সিআই পদে অনেকটাই লোক চক্ষু আড়ালে জয়েন করেন এবং তাও মুক্তিযোদ্ধা কোটায়।
তিনি বগুড়া পলিটেকনিকে ২০২১ সালে ভাইস প্রিন্সিপাল হিসেবে জয়েন করেন এবং ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপালের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। তিনি আওয়ামী পরিবারের সন্তান পরিচয় দিয়ে এই ধরনের সুবিধা গ্রহণ করেন এবং দায়িত্ব ভার গ্রহণের চার মাসের মাথায় ছয় লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করার ঘটনায় বগুড়া জেলার ছাত্রলীগের একটি দল তাকে অবরুদ্ধ করার চেষ্টা করলে আমাদের তৎকালীন শিক্ষকগণ তাদের ব্যক্তি প্রচেষ্টার মাধ্যমে সেই বিপদ থেকে উদ্ধার করেন পরবর্তীতে তিনি ছাত্রলীগের সভাপতি কে মাঝে মাঝে তার চেম্বারে ডেকে ম্যানেজ করার জন্য টাকা প্রদান করতেন এমনটিও আমাদের কাছে দৃশ্যমান হয়েছে।
তিনি প্রিন্সিপাল দায়িত্ব থাকা অবস্থায় বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের টেন্ডারে যে সকল মেশিন, ইকুপমেন্ট ও যন্ত্রপাতি ক্রয় করাতেন তা তার পূর্বনির্ধারিত ব্যক্তির মাধ্যমে এবং খুবই নিম্নমানের মালামাল। ইতোমধ্যে আরএসি টেকনোলজিতে টোটাল স্টেশন নামে একটি কুলিং সিস্টেম ক্রয় করা হয় যার স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী যা যা কাজ করা দরকার তার কোনটি নাকরে শুধুমাত্র অন অফ করা যায় এমন একটি অবস্থার মালামাল বুঝিয়ে নিয়ে সাত লক্ষ টাকা তিনি হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। তিনি মুক্তিযোদ্ধা কোঠায় বর্তমানে কর্মরত আছেন। গুজব আছে তার বাবার এই মুক্তিযোদ্ধা সনদটি বিতর্কিত এবং তা ২০০৫ সালে সাময়িক সনদ হিসেবে গ্রহণ করা হয় এবং ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের আমলে অর্থের বিনিময়ে তা সুকৌশলে ডিজিটাল গেজেট করে নেন। এই সনদকে ব্যবহার করে তিনি সহ তার সকল ভাই বোন বর্তমানে সরকারি চাকরিতে কর্মরত আছেন যা আমাদের কোটা আন্দোলনের দ্বিতীয় স্বাধীনতাকে খুবই ব্যথিত করে।
আবু সাইম জাহান কখনোই বগুড়া পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষক ও অধ্যক্ষ ছিলেন না। বিভিন্ন ফান্ডের টাকা আত্মসাৎ তার স্বেচ্ছাচারিতায় ও হস্তক্ষেপে ভালো জিনিস গুলো বাজে ভাবে প্রদর্শন, শিক্ষক কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের সবসময় অসম্মান ও ছোট করে কথা বলা ইত্যাদি তার বৈশিষ্ট্য ছিল। একজন আত্মকেন্দ্রিক, অর্থলোভী, স্বার্থবাদী একজন ব্যক্তি তিনি তার এমন কর্মকাণ্ডের জন্য শিক্ষক কর্মচারী অপ্রকাশ্যে অসন্তোষ থাকলেও শিক্ষার্থীরা সর্বদয় তাকে অপছন্দ করতো। তার বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক পত্রিকা গুলোতে খবর প্রকাশিত হয়েছিল এবং সেই প্রকাশিত খবরগুলো মিথ্যা প্রমাণ করতে বগুড়া পলিটেকনিকের শিক্ষক কর্মচারীদের মাধ্যমে জোরপূর্বক প্রতিবাদ লিপি প্রকাশ করেছিলেন সেটিরও নজির রয়েছে। তার অনিয়মের মাত্রা অতিক্রম করায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষেপে ফুঁসে ওঠে, যা ৫ই আগস্টের পর সকল শিক্ষার্থী একযোগে বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সেই অধ্যক্ষ কে ১২ ঘণ্টার পদত্যাগের জন্য আল্টিমেটাম দিলে তিনি প্রতিষ্ঠান থেকে পালিয়ে যান এবং পরবর্তীতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অফিস অর্ডারে তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে পোস্টিং দেয়া হয় পরবর্তীতে তিনি দিনাজপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট পদায়ন প্রাপ্ত হন। বর্তমানে তার বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতি ধীরে ধীরে বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে সকল শিক্ষক কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের সামনে দৃশ্যমান হচ্ছে। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থী একটি নির্দিষ্ট সময় পড়ালেখার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে তা দেশের উন্নয়নে ও আমাদের জীবন যাপনে তার ব্যবহার করার জন্য এখানে শিক্ষা গ্রহণ করতে এসেছি, কিন্তু এই ধরনের ব্যক্তিদের জন্য আমাদের ক্যারিয়ার অকালে ধ্বংস হয়ে যায়। এই ধরনের সুবিধাভোগী ব্যক্তিরা সর্বদাই ধরা-ছোয়ার বাইরে থেকে যায়। তিনি বারবার অপরাধ করেও পার পেয়ে যাওয়ায় তার মানুষের ক্ষতি করার আকাঙ্ক্ষা অব্যাহত৷ আমরা সকলেই এই ব্যক্তির যথাযুক্ত শাস্তি দাবি করছি এবং আমাদের ক্ষতি হওয়া বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন রাখতে চাই, তার মূল্যায়নের মাধ্যমে যেন অতি সত্তর সমাধান করা হয়।