শীতের তীব্রতা বেড়ে লালমনিরহাট-পঞ্চগড়সহ সারাদেশে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। চারদিকে ঘন কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত জনজীবন। দেশের কোথাও নেই সূর্যের দেখা। বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। অনেক জায়গায় জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে। গত তিনদিন পর সূর্যের দেখা মিললেও তাতে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। আজ শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) ভোর ৬টায় পঞ্চগড়ের তাপমাত্রা রের্কড হয়েছে ৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন সকাল ৯টায় রেকর্ড হয়েছে ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অন্যদিকে ৭টায় লালমনিরহাটে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সারাদেশের সাথে তাল মিলিয়ে তেঁতুলিয়ায়ও তিব্র শীতে কাঁপছে। শুক্রবার ভোর ৬টায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে গত ১৮ ডিসেম্বর তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও গত ১৩ ডিসেম্বর তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছিল। ১৩ ডিসেম্বর থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা ছয়দিন মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছিল এ জেলায়।শীতের দাপটে গ্রামাঞ্চলের অনেকেই খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। এছাড়া হাট-বাজারে, রাস্তার পাশের টং দোকান ও ভ্যানে প্রচুর ভিড় করে কিনছেন গরম কাপড়।
বগুড়া : পৌষের শেষার্ধে এসে বগুড়ায় তীব্র শীত পড়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জেলায় তাপমাত্রার পারদ মৌসুমের সর্বনিম ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আছে। শুক্রবার ভোর ৬টায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তীব্র শীতে শিশু ও বয়ষ্ক মানুষের শীতজনিত রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। রিক্সা, অটোরিকশা চালক, দিনমজুর শ্রেনীর মানুষেরা নাকাল হয়েছে দারুণভাবে। তবে শীতের কাপড়ের ব্যবসা জমে উঠেছে। ফুটপাতের চায়ের দোকানেও বেড়েছে বিক্রি। নতুন ও পুরাতন শীত বস্ত্র, কম্বল বিক্রেতারা জানিয়েছেন। শীত না পড়লে শীতের কাপড় বিক্রেতাদের ব্যবসায় লস খেতে হয়। বগুড়ার কৃষি বিভাগে যোগাযোগ করে জানা গেছে, শীত মওশুমের প্রধান ফসল গম, আলু, পেঁয়াজের উৎপাদনের জন্য শীত দরকার। তবে দীর্ঘস্থায়ী ঘন কুয়াশা ও শৈত্য প্রবাহ ফসলের জন্য ক্ষতিকর। ভুক্তভোগী পরিবহন চালকরা জানান, কুয়াশার কারণে রাস্তায় চলার সময় ঘন কুয়াশার কারণে দুই হাত পর পর দেখা যায় না এ কারণে দিনের বেলাতেও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। ধীরগতিতে চলাচল করতে গিয়ে গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে। সকালের দিকে কাজের সন্ধানে বের হওয়া নিম্ন আয়ের মানুষরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে রয়েছেন। তারা জানান, কাজ না করলে খাওয়া নেই, তাই যত শীত হোক বের হতেই হবে, তবে এখন বাতাস আর কুয়াশা থাকার কারণে কষ্ট হচ্ছে, এখনো কেউ শীত বস্ত্র নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ায়নি বলে জানিয়েছেন পরিবহন, নির্মাণ, কৃষি শ্রমিকসহ দিনমজুররা। বিশেষ বেকায়দায় পড়েছেন চরাঞ্চলের মানুষেররা। নদী পেরিয়ে শহরে এসে কাজকর্ম করতে না পারায় অনেকে অর্ধাহারে থাকতে হচ্ছে তাদের। বিএনপির কিছু নেতা ব্যক্তিগত ফান্ড থেকে কিছু কম্বল বিতরণ করলেও জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা কোথাও শীতবস্ত্র বা কম্বল বিতরণ করেছেন এমন কোন খবর মেলেনি। এনজিওগুলোর তৎপরতা চোখে পড়েনি।
এদিকে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে প্রায় দেশের প্রতিটি হাসপাতালে। প্রতিদিনই জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোর বহির্বিভাগে জ্বর, সর্দি, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা।তবে শীতবস্ত্রের অভাবে কষ্টে পড়েছেন হতদরিদ্র, ছিন্নমূল ও স্বল্প আয়ের মানুষ। বেশি কষ্টে গ্রামের বাসিন্দারা। শীতের তীব্রতা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন নিম্নআয়ের মানুষজন। গ্রামের নারীরা বলছেন, তীব্রশীতের কারণে ঘরের ফ্লোর, আসবাবপত্র, বিছানাপত্রসহ সবকিছু যেন বরফ হয়ে উঠে। ভোরে উঠে কাজ করতে খুবই অসুবিধা হয়ে উঠে। সাধারণত তাপমাত্রা কমার চেয়েও বেশি অসুবিধা হচ্ছে হিমশীতল বাতাসে। এর পাশাপাশি ঘন কুয়াশা থাকায় বাতাসে তা কাঁটার মতো বিঁধতে থাকে। ঘরে ঘরে লেপ-কাঁথা নামানো হয়েছে।