দেশের প্রশাসনিক প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডে ৭ নম্বর ভবনটির ৬ থেকে ৯ তলা পর্যন্ত চারটি ফ্লোর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) সরেজমিনে পুড়ে যাওয়া ভবনটিতে গিয়ে এ চিত্র দেখা গেছে। জানা গেছে, ছাই হয়ে যাওয়া ফ্লোরে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ, পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ছিল। এসব মন্ত্রণালযয়ের গুরুত্বপূর্ণ সব নথি, কম্পিউটারসহ সবকিছু এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে এই ছবিটি। সচিবালয়ে বুধবার দিবাগত রাত আনুমানিক ২টার দিকে আগুন লাগানো হয়। এক সাথে সচিবালয়ে তিনটি রুমে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। যদিও এটি নাশকতা কিনা তা নিশ্চিত করেননি সরকারের দায়িত্বশীলরা। তবে তাদের আশংকা এটা নাশকতাই হবে। এক সাথে তিনটি রুমে আগুনের ঘটনা নাশকতা হিসেবে মনে করে অনেকে ফেসবুকে পোস্টও করছেন। অনেকে দাবি করছেন, ১৬ বছর স্বৈরশাসনের পর গণঅভুত্থানের মুখে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, বুধবার এক বিবৃতিতে তাদের বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া যাবে না, এমন ঘোষণার পরপরই সচিবালয়ে আগুন লাগলো। এই ঘটনায় সজীব ওয়াজেদ জয়ের ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিতি সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের কথা বলছেন। তাদের আশঙ্কা জেল থেকে পলক এই নাশকতার ষড়যন্ত্র করেছেন। যদিও অনেকে ধারনা করছেন, পদোন্নতী দ্বন্দ্বে মুখে ২৬ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ওপর দায় চাপানোর জন্যেও নাশকতা ঘটানো হয়ে থাকতে পারে।
সচিবালয়ে লাগানো আগুন নেভাতে ১০ ঘণ্টা সময় লাগা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহারকারী বাংলাদেশি অনেকে। প্রবাসীরাও নানান প্রশ্ন তুলছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার দিবাগত রাত ১টা ৫০ মিনিটে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনটিতে আগুন লাগে। ১০ ঘণ্টা পর আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার পর আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস। আজ সকাল সাড়ে নয়টায় সাত নম্বর ভবনের চারপাশে দেখা যায়, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে জানালার ভাঙা গ্লাস। আগুনে ভবনের ছয় থেকে আটতলা পুড়েছে। ভবনের ভেতরে কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সকাল দশটা থেকে পুরো ভবনের চারপাশ ঘুরে দেখেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন মুরশিদসহ অন্যরা। সরেজমিনে দেখা যায়, সাত নম্বর ভবনে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় রয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। আগুনে মূলত ছয়, সাত ও আটতলা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. এহছানুল হক বলেছেন, অফিসের নথিপত্র, কম্পিউটার, আসবাব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, বাজেটের এক্সেল শিটগুলো ফিরে পাওয়া কঠিন হবে। প্রশাসন শাখার গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ধ্বংস হয়ে গেছে।
আগুনের ঘটনায় আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, “বিগত সময়ে হওয়া অর্থলোপাট, দুর্নীতি নিয়ে আমরা কাজ করছিলাম। কয়েক হাজার কোটি টাকা লুটপাটের প্রমাণও পাওয়া গিয়েছিল। আগুনে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এখনো জানা যায়নি।”
আসিফ মাহমুদ বলেন, “আমাদেরকে ব্যর্থ করার এই ষড়যন্ত্রে যে বা যারাই জড়িত থাকবে তাদের বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেওয়া হবে না। এই মুহুর্তে আছি নীলফামারিতে, যত দ্রুত সম্ভব ঢাকা ব্যাক করছি।”
এদিকে, সচিবালয়ে আগুন লাগার ঘটনা তদন্তে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে সরকার। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এক অফিস আদেশ থেকে এই কমিটি গঠনের বিষয়টি জানা গেছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (জেলা ও মাঠ প্রশাসন) মোহাম্মদ খালেদ রহীমকে প্রধান করে গঠন করা এই কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।