হেলালুর রহমান: বগুড়ার মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছে সরিষার হলুদ ফুল। দিগন্তজোড়া মাঠে সরিষা ফুলের সমারোহের সৃষ্টি হয়েছে। জেলার প্রতিটি মাঠে মাঠে এখন সরিষা ফুলের ঘ্রাণ ছড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় সরিষা চাষিরা বাম্পার ফলনের আশা করছে। জানা যায়, বগুড়ার উৎপাদিত বিভিন্ন সবজির সুনাম রয়েছে দেশজুড়ে। কিন্তু লাগাতার ধানের দাম না পাওয়ায় কৃষকরা ছুটছেন লাভজনক তেল জাতীয় ফসল সরিষা চাষের দিকে। কম খরচ, কম পরিশ্রম আর অল্প সময়ে সরিষা চাষ করা যায় বলে এটি অত্যন্ত লাভজনক একটি ফসল। প্রতি বিঘা জমি থেকে চলতি মৌসুমে গড় ৫ থেকে ৬ মণ হারে সরিষার ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও সরিষা চাষ করলে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায় আর সরিষা তোলার পর বোরো ধান রোপণ করা সম্ভব। যার কারণে প্রতি বছরই সরিষার চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বগুড়ায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে সরিষার। ভোজ্য তেল হিসেবে সরিষার তেলের চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি দাম বেশি হওয়ায় আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের। অন্যান্য ফসলের তুলনায় সরিষা চাষে কম খরচ, কম শ্রম এবং দ্রুত ফলন পাওয়া যায়। যে কারণে চাষিরা আবাদে লাভ বেশি পায়। জেলার পাঁচটি উপজেলায় সবচেয়ে বেশি সরিষা আবাদ করে থাকে কৃষকরা। হলুদ চাদরে বিছানো সরিষা ক্ষেতে সরিষা চাষি ও মৌ-চাষিরা এ মুহুর্তে ব্যস্ত সময় পার করছে। বগুড়ায় সরিষা চাষের বিপ্লব হওয়ায় দেশের সাতক্ষীর, সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলা মধু সংগ্রহকারী চাষিরা বগুড়ায় এসে ডেরা বসিয়েছে। সরিষা ক্ষেতের কোল ঘেঁষে বসিয়েছে মৌমাছির বাক্স। এ দিকে সরিষা ক্ষেতকে ঘিরে মধু চাষিরা ও মধু সংগ্রহে দারুন ব্যস্ত। প্রতি কেজি মধু সাড়ে তিনশ টাকায় বিক্রি করছে। বগুড়ায় এবার সরিষা চাষ বেশি হওয়ায় জেলার বাইরে থেকে অনেক চাষি বগুড়ায় এসেছে। মধু চাষিরা জানান সরিষার সময় ছাড়াও কালোজিরার মধু, লিচু ফুলের মধু খেসারীর ডালের মধুও তারা সংগ্রহ করে থাকে। সপ্তাহে তারা ৫ থেকে ৭ মণ মধু সংগ্রহ করে। মৌমাছি পরাগায়ন ঘটায়। এতে সরিষার উৎপাদন বেড়েছে। এছাড়াও অন্যান্য উপজেলাতেও সরিষা চাষ করেছে কৃষকেরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমে জেলায় সরিষার বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। সরিষার দামও ভালো পাওয়ার আশা করছেন এ জেলার চাষিরা। চাষিরা বলছে, সরিষা তেলের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার কারনে বাজারে সরিষার দাম এখন বেশ ভালো। বাজার পরিস্থিতি এমন থাকলে এবারও ভালো আয় হবে সরিষা বিক্রিতে। বগুড়ার কাহালু, নন্দীগ্রাম, আদমদিঘী, শেরপুর, সারিয়াকান্দি, ধুনট, শাজাহানপুর, সোনাতলা ও দুপচাঁচিয়া উপজেলার বিস্তিন্ন এলকা জুড়ে মাঠের পর মাঠ চাষীরা ব্যাপক হারে আবাদ করেছেন সরিষার। রবি মৌসুমে আলুর বদলে উন্নত মানের সরিষার বীজ বপন করেছেন। বপন থেকে মাত্র ৭৫ দিনের এ ফসলটিতে তেমন সেচ দিতে হয় না। বপনের সময় মাটির নিচে সামন্য পরিমাণ রাসায়নিক সার দেওয়ার পরেই ভালো ফলন পেয়ে থাকেন চাষীরা। এক বিঘা জমি চাষ করতে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার মত খরচ হয়। সরিষা বিক্রির পর সব খরচ বাদে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা লাভ হয়। সরিষা চাষি এনামুল হক জানায়, তিনি আমন ধান কাটার পর সাড়ে ৪ বিঘা জমিতে দেশী জাতের সরিষা রোপন করেছে। কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের পরামর্শক্রমে এ ফসলের ভালো ফলন আশা করছে তিনি। মাঠে এখন সরিষার হলুদ ফুল ফুটেছে। আরো কয়েকটা দিন পর সরিষা মাড়ায় করা যাবে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে ফলন আরো বাড়তে পারে। ভোজ্য তেলের চাহিদা মেটাতে সরিষার আবাদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।