কুড়িগ্রাম: উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা কুড়িগ্রামে অগ্রহায়ণের শেষ দিকে জেঁকে বসেছে শীত। কনকনে হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এ জেলার নদীর তীরবর্তী চরাঞ্চলের মানুষ। সকাল থেকে সূর্যের দেখা না পাওয়া আর বৃষ্টির মতো করে কুয়াশা পড়ার কারণে এ জেলায় সব থেকে বেশি কষ্ট পোহাচ্ছেন ছিন্নমূল মানুষ। শুক্রবার সকালে কুড়িগ্রামে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দরিদ্র মানুষের মাঝে শীতবস্ত্রের সংকট দেখা দিয়েছে। সরকারি পর্যায়ে শীতবস্ত্র বিতরণ অপ্রতুল। শীত নিবারণের জন্য সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত কম্বল বা শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়নি। প্রতি বছর জেলায় শীতের এ মৌসুমে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে শীত নিবারণের গরম কাপড় ও কম্বল বিতরণ করা হলেও চলতি বছর এ ধরনের কোন উদ্যোগ দেখা যায়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সরকারি বরাদ্দ কম থাকা, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো বরাদ্দ না দেওয়া ও প্রশাসনিক কাজের ধীরগতির কারণে এখনও কম্বল বিতরণের কার্যক্রম শুরুই করতে পারেনি স্থানীয় প্রশাসন। জেলার ত্রান ও পুর্নবাসন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৯ উপজেলার ২৩ লাখ ২৯ হাজার ১৬১ জন মানুষের বিপরীতে ১ হাজার ৮০০ টি কম্বল বরাদ্দ রয়েছে। যা প্রতি উপজেলায় ২০০টি করে বিতরণ করা হবে। আর প্রতি উপজেলায় চাহিদা অনুযায়ী গরম কাপড় কেনার জন্য ৩ লাখ করে অর্থ বরাদ্দ দেয়া রয়েছে যা ৯ উপজেলার জন্য ২৭ লাখ টাকা। কুড়িগ্রামে শীত জেঁকে বসলেও সরকারিভাবে এসব কম্বল বিতরণ না করা আর বরাদ্দ কম থাকায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম ক্ষোভ লক্ষ্য করা যায়। গরম পোশাক কেনা ও কম্বল বিতরণের বিষয়ে জেলা ত্রান ও পুর্নবাসন শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি অনেকেই এড়িয়ে যান। কেউ কেউ বরাদ্দকৃত কম্বল বিতরণের কথা বললেও মাঠ পর্যায়ে বিষয়টি একেবারে উল্টো। চিলমারী ইউনিয়নের দিনমজুর কহিনুর বেগম বলেন, ‘শীতের ঠান্ডাত কাম কাজ কইরবের পাইনে বাহে, বৃষ্টির মতন টপ টপ করি শীত পড়ে। এলাও কাইয়্যো কম্বল দেইল না । মেম্বারক কই ওমরা কয় এল্যাউ কম্বল আসে নাই।’ সদরের ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের দিনমজুর হুজুর আলী বলেন,‘মুই গরিব মানুষ বাপ, মোর গরম কাপড় কট্টি থাকি পাইম। কাল রাইত থাকি ঝড়ির নাকান শীত পড়ে। গাত লুঙ্গি পেচে কাজত যাবাইছি।’ রৌমারী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শামসুদ্দিন বলেন, ‘এ উপজেলায় ২০০ কম্বল বরাদ্দ হয়েছে। তবে এক সপ্তাহ পরে আনা হবে।’ রাজীবপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, ‘২০০ কম্বল বরাদ্দ পেয়েছেন। তবে এখনও উপজেলায় আনা হয়নি।’ উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতাউর রহমান বলেন, এখনো সরকারি বরাদ্ধ পাওয়া যায়নি। তবে পাওয়া যাবে। পাওয়া মাত্র বিতরণ করা হবে। কুড়িগ্রাম কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র জানান, আজ জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঘন কুয়াশার কারণে দুপুর ১টার আগে সূর্যের দেখা নাও মিলতে পারে। জেলা ত্রান ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার বলেন, ‘শীতের জন্য নতুন করে ১ লাখ ১৫ হাজার কম্বলের জন্য চাহিদা পাঠানো হয়েছে। সাধারণত ৬৫ থেকে ৭০ হাজার বরাদ্দ থাকে প্রতি বছর। চলতি শীত মৌসুমে এ পর্যন্ত ৯ উপজেলার জন্য ১৮০০ কম্বল ও গরম পোষাক কেনার জন্য ২৭ লাখ টাকা বন্টন করা হয়েছে।’