আজাহার আলী ঃ বগুড়ার সারিয়াকান্দি এক সময়ের যমুনার বালুচর এখন বিভিন্ন ফসলে ভরপুর হয়েছে। ফসল বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে কৃষকরা। বগুড়ায় যমুনার বালুচরে কৃষিবিপ্লবে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা এসেছে। বগুড়ার সারিয়াকান্দির ১২টি ইউনিয়নের প্রায় সবগুলোই নদী ভাঙনের কবলে। প্রতিবছর পলি জমে নদীর বুকে বিশাল চর জেগে ওঠে। এক সময় বিশালাকার চরগুলো অনাবাদি হয়ে পড়ে থাকতো। যমুনা, নদীর নাব্য না থাকায় এসব নদীর অববাহিকায় পলি পড়ে বিশালাকার কৃষি জমির সৃষ্টি হয়েছে। এসব কৃষি জমিতে পানির অভাবে কৃষকরা তাদের কাঙ্খিত ফসলাদি চাষ করতে পারতো না। ফসল ফলানোর জন্য বৃষ্টির পানিই ছিল একমাত্র ভরসা। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরেই শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি উত্তোলন করে সেচ দিয়ে ফসল চাষ করা হচ্ছে। ফলে উপজেলার উত্তপ্ত বালুচর আর অনাবাদি না রেখে সেখানে কৃষকরা নানা ধরনের ফসল ফলাচ্ছে। উচ্চ ফলনশীল জাতের ফসল চাষাবাদ করে এখন কৃষকরা ব্যাপকভাবে লাভবান হচ্ছে। হাটশেরপুর ইউনিয়নের দিঘাপাড়া চরের কৃষক মিঠু মিয়া জানায়, গত বছর তিনি ৩৫ বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করে সাড়ে ১০ লাখ টাকা লাভ পেয়েছিল মাত্র ৩ মাসে। এ বছর ৪৫ বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করেছে। মিঠু মিয়ার মতো এ চরেই মান্না মিয়া ৪০ বিঘা, হবিবর মিয়া ৭০ বিঘা এবং আমরুল মিয়া ৬০ বিঘা জমিতে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করেছে। চরের ফসলের লাভের টাকা দিয়ে তারা চরাঞ্চলের বাড়ির পাশাপাশি শহরাঞ্চলেও পাকাবাড়ি করেছে। মিঠু মিয়া আরও জানায়, চরাঞ্চলে এখন কৃষকরা ২০০ থেকে ৩০০ বিঘা পর্যন্ত জমি প্রকল্প আকারে বাণিজ্যিক ভাবে চাষাবাদ করছে। চরাঞ্চল এখন মানুষের জন্য অভিশাপ না। এটি এখন কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ। আমাদের পরামর্শে নানা জাতের উচ্চ ফলনশীল ফসল চরের উর্বর মাটিতে প্রচুর পরিমাণে ফলছে। এসব ফসল বিক্রি করে কৃষকরা ব্যাপকভাবে লাভবান হচ্ছে। চরাঞ্চলের যেদিকে দুচোখ যায় সেদিকেই শুধুই ফসল আর ফসল। এগুলোর মধ্যে মরিচ, ভুট্টা, মিষ্টি কুমড়া, বিভিন্ন জাতের ধান, বিভিন্ন প্রকারের শাকসবজি, বিভিন্ন ধরনের কলাই, মিষ্টি ও গোলআলু, গম, তীল প্রভূতি অন্যতম। এসব ফসল বিক্রির সাথে জড়িত থেকে উপজেলার শতশত বেকার যুবকের কর্মসংস্থানও হচ্ছে। ঘুরছে অর্থনীতির চাকা। শুধুমাত্র যমুনাচরের ফসলের উপর নির্ভর করেই যমুনাতীরের প্রায় ৫ টি এলাকায় ফসল বিক্রির আড়ৎ গড়ে উঠেছে এবং প্রতিটি আড়ৎ এ প্রতিদিন হাজারের বেশি মণ করে বিভিন্ন ধরনের ফসল আমদানি হচ্ছে। আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি এবং উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবনের ফলে এসব সম্ভব হয়েছে বলে জানান স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তা।