বাংলাদেশে কথিত হিন্দু নির্যাতনের অভিযোগ তুলে দাদাগিরি করা ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী মোদি সরকার এবার দেশটির আরো ১২টি মসজিদ ভেঙে মন্দির নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে সামনে এগোচ্ছে। দেশজুড়ে একসাথে এতগুলো মসজিদকে টার্গেট বানিয়ে রীতিমত গৃহযুদ্ধের উস্কানি দিয়ে চলেছে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। গুজরাটের কসাই খ্যাত দাঙ্গাবাজ মোদির ইশারায় একদিকে মসজিদ ভেঙে মন্দির বানানো হচ্ছে। অন্যদিকে এই ইস্যুতে উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ভারতকে মুসলিমমুক্ত করার এজেন্ডাও বাস্তবায়নে নেমেছে বিজেপিসহ উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো। সম্প্রতি বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে কমপক্ষে মুসলিমদের ১২টি ধর্মীয় স্থান এবং স্মৃতিসৌধ ঘিরে মন্দির বিতর্ক তোলা হয়েছে। প্রতিটি মামলায় হিন্দুপক্ষের যুক্তি এবং দাবি একই। সেখানে মূলত বলা হয়, প্রশ্নের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা ওই মসজিদ, দরগাহ বা স্মৃতিসৌধ তৈরি করা হয়েছিল মন্দির ধ্বংস করে। এখন তা হিন্দুদের হাতে তুলে দেওয়া হোক। এই দাবি তুলে, নিৃশংস হত্যাযজ্ঞ ও বর্বরতা চালিয়ে ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ গুড়িয়ে দিয়ে রাম মন্দির নির্মাণ করে ভারতের বর্তমান সাম্প্রদায়িক সরকার। আরও যে ১২টি মসজিদ-দরগাহ ভেঙে মন্দির বানানোর পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে সেগুলো হল-
বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদ, উত্তর প্রদেশের মথুরাস্থিত শাহী ঈদগাহ ও জামা মসজিদ, উত্তর প্রদেশের আটালা মসজিদ, উত্তর প্রদেশের বদায়ুতে অবস্থিত শামসি মসজিদ, উত্তর প্রদেশের লক্ষ্ণৌয়ে অবস্থিত টিলেওয়ালি মসজিদ, মধ্যপ্রদেশের ধার জেলায় অবস্থিত কামাল মওলা মসজিদ, কর্ণাটকের চিকমাগালুরে বাবা বুদানগিরিতে সুফি সাধক দাদা হায়াতের (বাবা বুদন) একটি দরগাহ, দিল্লির বিখ্যাত কুতুব মিনারে অবস্থিত কুওয়াত-উল ইসলাম মসজিদ,কর্ণাটকের ম্যাঙ্গালুরুস্থিত জুম্মা মসজিদ, সম্ভলের শাহী জামা মসজিদ ও রাজস্থানের আজমির শহরে সুফি সাধক খাজা মইনুদ্দিন চিস্তির দরগাহ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দাবি করা হয়, মুঘল শাসকরা মন্দির ভেঙে প্রাচীন এসব মসজিদ তৈরি করেছিলেন। প্রায় একই যুক্তি তুলে আদালতকে ব্যবহার করে একের পর এক মসজিদ গুড়িয়ে দিয়ে মন্দির নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে চলেছে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। অথচ ইতিহাস থেকে জানা যায়, মোঘলদের ধীর্ঘ প্রায় সাড়ে তিনশ বছরের শাসনামলে মন্দির ভেঙে মসিজদ নির্মাণ তো দূরের কথা মোঘল শাসকরা অসংখ্য মন্দির নির্মাণ, পুনর্নিমাণ ও সংস্কার করে দিয়েছেন। তারা যদি সত্যিকার অর্থে মসজিদ ভেঙে মন্দির নির্মাণ করতে চাইতেন, তাহলে ভারতীয় উপমহাদেশে কোনো মন্দিরই অবশিষ্ট থাকতো না। যেখানে ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী মোদি ক্ষমতায় এক দশক পার না করতেই বহু মসজিদ ভেঙে মন্দির নির্মাণের নজির গড়ে চলেছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিজেপি সবসময়ই ‘হিন্দু কার্ড’ খেলে ক্ষমতায় এসেছে। ‘হিন্দু কার্ড’ খেলেই দলটি ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে চায়। দলটি কখনই ধর্মবর্ণ নির্বেশেষ সকল ভারতীয়দের প্রতিনিধিত্ব করার চিন্তাই করে না। যদিও গেল নির্বাচনে বাবরি মসজিদ ভেঙে রাম মন্দির নির্মাণ করা অঞ্চলে তেমন কোনো আবেদন সৃষ্টি করতে পারেনি উগ্র হিন্দুত্ববাদী দলটি। তবুও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধিয়ে ফায়দা লুটতে মরিয়া হিন্দুত্ববাদীরা।