হেলালুর রহমান: রঙিন সবজির মধ্যে গাজর আমাদের দেশের একটি জনপ্রিয় সবজি। তরকারি ও সালাদ হিসেবে গাজর খাওয়া যায়। আমাদের দেশে সাধারণত বিদেশ থেকে বিভিন্ন জাতের গাজরের বীজ আমদানি করে চাষ করা হয়। যেমন, রয়েল ক্রস, কিনকো সানটিনে রয়েল, কোরেল ক্রস ও স্কারলেট নান্টেস। এছাড়া আরও আছে পুষা কেশর, কুরোদা-৩৫, নিউ কোয়ারজা, সানটিনি, ইয়োলো রকেট ইত্যাদি জাতগুলো কৃষকদের নিকট জনপ্রিয়। এসব জাতের মধ্যে পুষা কেশর আমাদের দেশের জলবায়ুতে বীজ উৎপাদনে সক্ষম। অল্প সময়ে ভালো ফলন এবং বেশি লাভ হওয়ায় বগুড়ায় গাজর চাষে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা। জানা যায়, বগুড়া জেলার, সদর, সোনাতলা, গাবতলী, সারিয়াকান্দি ও শিবগঞ্জ উপজেলায় কৃষকেরা গাজর চাষাবাদে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। গাজর উচ্চমূল্যের ফসল। বীজ বপনের আড়াই থেকে তিন মাসের মধ্যে ফসল উঠানো যায়। এক বিঘা জমিতে গাজর চাষ করে ফলন উঠানো পর্যন্ত কৃষকের খরচ হয় প্রায় ২৫ হাজার টাকা। ফসল উঠানোর সময় কৃষক এক বিঘা জমির গাজর বিক্রি করতে পারে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা। ফলে এক বিঘা জমি থেকে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা লাভ হয় কৃষকদের। এখন গাজর তোলায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। কেউ কেউ জমি থেকে সদ্য তোলা গাজর পানিতে পরিষ্কার করতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এসব গাজর রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়ে যায় পাইকাররা। অল্প সময়ে ফলন বেশি হওয়ায় অধিক লাভবান হচ্ছেন জেলার চাষিরা। এছাড়া, অন্য ফসলের চেয়ে তুলনামূলক কম খরচে দ্বিগুণ লাভ হওয়ায় জেলায় গাজর চাষে আগ্রহ বেড়েছে।
কৃষক কামাল হোসেন জানান, বিগত কয়েক বছর ধরে গাজর চাষাবাদ করছেন তিনি। গাজর এমন একটি ফসল যার চাহিদা সব সময়ই থাকে। এ কারণে বিক্রি নিয়ে তেমন দুশ্চিন্তা থাকে না। আবার দাম ও ভালো পাওয়া যায়। এ বছর তিনি প্রায় দুই বিঘা জমিতে গাজর চাষাবাদ করেছেন। কোনো কোনো সময় ফলন উঠানোর আগেই ব্যাপারীদের কাছে জমিতেই গাজর বিক্রি করে দেন। এবার তিনি প্রায় ৯০ হাজার টাকার গাজর বিক্রি করেছেন। সদর উপজেলার কালিবালা এলাকার কৃষক মোনোয়ার শেখ জানান, এ বছর এক বিঘা জমিতে গাজর চাষ করেছেন তিনি। গাজর চাষে পরিশ্রম কম। তাদের গ্রামের আরও কৃষক গত কয়েক বছর যাবত গাজর চাষ করে লাভবান হয়েছেন। তিনিও লাভের আশায় তার আবাদি জমিতে গাজর চাষ করেন এবং দামও ভালো পান। আগামী বছর তিনি গাজর চাষে জমি বাড়াবেন বলেও জানায়। অক্টোবরের শেষের দিক থেকে ডিসেম্বর মাসের শুরুর দিক পর্যন্ত গাজর চাষের উপযুক্ত সময়। তিন মাস পর ফসল মাঠ থেকে উঠানোর উপযোগী হয়। তবে কেউ কেউ ৫০ থেকে ৫৫ দিনের মধ্যেও ফসল উঠায়। যেহেতু সারা বছরই গাজরের ভালো বাজার থাকে। যে কারণে আমাদের পক্ষ থেকে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনীর মাধ্যমে গাজর চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। বগুড়া সদর উপজেলার লাহিড়ীপাড়ার গাজর হেলাল উদ্দিন জানান, আলুর চেয়েও গাজর চাষে উৎপাদন বেশি হয়। আলু চাষাবাদে অনেক ঝামেলা হয়। কিন্তু গাজর চাষাবাদে তেমন কোনো ঝামেলা নেই।
পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা আছে এমন বেলে দোঁআশ ও দোআঁশ মাটি গাজর চাষের জন্য ভালো। যেখানে গাজর চাষ হবে সেই জায়গাটি যেন পর্যাপ্ত আলো-বাতাসযুক্ত হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। গাজর চাষের জন্য ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করতে হবে। জমির মাটি ঝুরঝুরে করে তৈরি করতে হবে। গাজরের বীজ সারিতে বপন করা ভালো। এতে গাজরের যত্ন নেয়া সহজ হয়।