মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী: রাজশাহীর পবা উপজেলায় ৪১ বিঘা অনাবাদি পতিত জমিতে পারিবারিক পুষ্টি বাগান গড়ে উঠেছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কারিগরি সহযোগিতায় পুষ্টিবাগান গড়ে তুলেছেন স্থানীয় ৯ শত দরিদ্র কৃষক পরিবার। ফলে কৃষকদের পরিবারে প্রতিদিনের পুষ্টি চাহিদা যেমন মিটছে, ঠিক একইভাবে উদ্বৃত্ত সবজি বাজারে বিক্রি করে বাড়তি টাকা আয়েরও সুযোগ পাচ্ছেন তারা। এই প্রকল্পের আওতায় উপজেলার কুমড়াপুকুর এলাকার অনাবাদি পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙ্গিনায় পারিবারিক পুষ্টি বাগানের ধারণা বদলে দিচ্ছে জেসমিন খাতুনের মত অসংখ্য গ্রামীণ নারীর ভাগ্য। তারা নতুন এ পদ্ধতিতে নিজের বাড়ির আশেপাশে বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি ও ফলমূল উৎপাদন করে পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাড়তি টাকাও রোজগার করছেন। এই প্রকল্পের আওতায় কালিকাপুর মডেলে কৃষকদের বসতভিটার উঠান ও পরিত্যক্ত জায়গায় সবজি ও ফল চাষ করে আর্থিকভাবেও স্বাবলম্বি হচ্ছেন। এবিষয়ে উপজেলার নওহাটা পৌরসভার কুমড়াপুকুর গ্রামের কৃষাণি জেসমিন খাতুন জানালেন, নতুন এই পদ্ধতিতে বসতবাড়ির আঙিনায় সবজি বাগান ও মসলাজাতীয় ফসল হিসেবে বস্তায় আদা করার কারণে তার পরিবারের দৈনন্দিন সবজির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি গত এক বছরে বাড়তি আয়ও হয়েছে। তিনি বলেন,“আগে তরকারি কিনে খাওয়ার পয়সা ছিল না। এছাড়া বাজারে তরিতরকারির যে দাম, তাতে কিনে খাওয়া সম্ভব হতো না। কিন্তু নতুন এ প্রযুক্তিতে সবজি চাষের কারণে এখন নিজেরা খেতেও পারছি, আবার বাড়তি সবজি বাজারে বিক্রি করতে পারছি”। এই চাষ প্রযুক্তিতে তেমন কোন খরচ নেই, শুধুমাত্র শারীরিক পরিশ্রম করতে হয়। তবে নিয়মিত পরিচর্যা করলে, একই বাগান থেকে সারাবছর নিজেদের প্রয়োজনীয় সবজির চাহিদা মেটানো সম্ভব বললেন একই গ্রামের গৃহবধু মর্জিনা বেগম। পুষ্টি বাগান নিয়ে কথা হয় পবা উপজেলাধীন কুমড়াপুকুর গ্রামের কৃষাণি নাসরিন বেগমের সঙ্গে। তিনি জানালেন “কোন রকম কীটনাশক ব্যবহার না করে, শুধুমাত্র ভার্মি কম্পোস্ট সার ও জৈব বালাইনাশক পদ্ধতি অবলম্বন করে এই পুষ্টি বাগান প্রকল্পের মাধ্যমে তিনি লাউ, মিষ্টি কুমড়া, কলমিশাক, লালশাক, বেগুন ও কাঁচামরিচ আবাদ করেছেন।
নিজের পরিবারের সবজির চাহিদা পূরণ করে গ্রামের অন্যদের এমনকি আত্মীয়-স্বজনদের মাঝেও সবজি বিতরণ করছেন বলে জানালেন একই গ্রামের মহিলা খামারি রহিমা খাতুন। প্রকল্পটি কিভাবে নারীদের আর্থিকভাবে লাভবান করছে, সে প্রসঙ্গে রহিমা খাতুন বলেন, দৈনিক পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে ৪’শ থেকে ৫’শ টাকার সবজি বাজারে বিক্রি করেছেন। আগে স্বামীর কাছে প্রয়োজনে টাকা চাইতে হতো, কিন্তু এ প্রকল্প গ্রহণের পর তাকে আর স্বামীর কাছে কোন টাকা-পয়সা চাইতে হয় না। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জালাল উদ্দিন দেওয়ান জানান, গ্রামীণ নারীদের পুষ্টি সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পারিবারিক পুষ্টি সবজি বাগান খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সেই লক্ষ্যে নওহাটা পৌরসভার বিভিন্ন গ্রামে বসতবাড়ির অনাবাদি পতিত জমিতে এই পুষ্টি বাগান স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় প্রত্যেক পরিবারকে ১ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ পতিত জমিতে কালিকাপুর মডেল অনুযায়ী সবজি পুষ্টি বাগান করে দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই পুষ্টি বাগানের মাধ্যমে প্রত্যেক কৃষক তাদের পরিবারের প্রতিদিনের এক থেকে দেড় কেজি শাক-সবজির চাহিদা পূরণ করে আসছে। এছাড়াও এই প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ কৃষাণীরা পারিবারিক পুষ্টি সচেতনতার পাশাপাশি ফসল উৎপাদনের প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করছে।