প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ভারতে পালিয়ে যাওয়া ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের প্রক্রিয়া চালাবে বাংলাদেশ। বিচারের মুখোমুখি করতে হাসিনাকে অবশ্যই ফিরিয়ে দিতে হবে দিল্লিকে।সম্প্রতি ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঢাকায় তার বাসভবনে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু-এর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন। শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে অন্তর্বর্তী সরকার ইন্টারপোলের কাছে জন্য আবেদন করেছে। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তি থাকা সত্ত্বেও শেখ হাসিনাকে ফেরত আনতে কেন আনুষ্ঠানিক অনুরোধ করা হয়নি, এমন প্রশ্নে ড. ইউনুস বলেন, আমার মনে হয় আমরা আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করছি, তবে সে পর্যায়ে এখনো পৌঁছাইনি। ভারতে শেখ হাসিনার উপস্থিতি উভয় দেশের সম্পর্কের জন্য অসুবিধা সৃষ্টি করছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আপাতত ভারতে বসবাস করাটা সমস্যা নয়। সমস্যা হচ্ছে বাংলাদেশের সঙ্গে তার যোগাযোগ। তিনি বাংলাদেশি জনগণের সঙ্গে কথা বলছেন, এবং সেটা রাজনৈতিক রূপ নিচ্ছে। তিনি তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন, এটিই সমস্যা। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, তিনি (শেখ হাসিনা) বাংলাদেশিদেরকে ঢাকা ও অন্যান্য শহরের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করতে উৎসাহিত করছেন। তার এসব বক্তব্য প্রচারিত হয়েছে। তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে বলছেন- যেন পুলিশ বাধা দেয়, যাতে তারা বলতে পারে বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কাজ করছে। এটি আরেকটি দেশের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ। ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ৫ আগস্টের ঘটনাগুলো কীভাবে প্রভাব ফেলছে? এমন প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বন্ধুপ্রতিম দেশ হিসেবে ভারতের উদযাপন করা উচিত যে, বাংলাদেশ এমন একটি শাসন থেকে মুক্ত হয়েছে, যেখানে মানুষ চরম কষ্টে ছিল, অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন, অনেকে গুম হয়েছিলেন এবং অনেক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। আমাদের তরুণ প্রজন্মের উদযাপনে সঙ্গে ভারতেরও অংশ নেওয়া উচিত এবং একসঙ্গে উদযাপন করা উচিত, যেমনটা অনেক রাষ্ট্র করছে। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তবে সরাসরি দেখা না হওয়ার বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, হ্যাঁ, এটি এখনও ঘটেনি। আমি যখন জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে গিয়েছি, তখন মোদি সেখান থেকে চলে গিয়েছিলেন। আমি বাকুতে জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলাম, কিন্তু মোদি সেখানে ছিলেন না, বিমসটেক (থাইল্যান্ডে) বাতিল করা হয়েছে এবং আমরা কেউই কমনওয়েলথ বৈঠকে যায়নি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে-আমরা দেখা করবো না। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা শুধু প্রতিবেশী নই, ইতিহাস আমাদের একত্র করেছে। ভূগোল আমাদের একত্রিত করেছে। ভাষাগত সম্পর্ক আমাদের একত্রিত করেছে। সাংস্কৃতিক যোগসূত্র আমাদের একত্রিত করে। প্রথম দিন থেকেই আমি প্রধানমন্ত্রী মোদিকে সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার প্রস্তাব দিয়েছি। অকার্যকর গোষ্ঠী হতে হবে কেন? এমনকি আমি পরামর্শ দিয়েছিলাম যে, সার্ক নেতারা নিউইয়র্কে মাত্র পাঁচ মিনিটের জন্য হলেও যেন বৈঠক করতে পারেন।