আধুনিকতার ছোঁয়ায় ও কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী মহিষের গাড়ি। একসময় গরু বা মহিষের গাড়িতে মানুষ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে এমনকি সামাজিক অনুষ্ঠানে সকল শ্রেণির মানুষ যাতায়াত করতো। বগুড়া জেলার নন্দীগ্রাম, ধুনট, সারিয়াকান্দি, কাহালু, শিবগঞ্জ, সোনাতলা, আদমদীঘি, দুপচাঁচিয়া, গাবতলী, শাজাহানপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকরা তাদের জমিতে উৎপাদিত ফসল পরিবহনের জন্য এবং ব্যবসা বাণিজ্যসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী আনা-নেওয়ার কাজেও ব্যবহার করতো মহিষের গাড়ি। আশির দশকে গরু বা মহিষের গাড়ির প্রচলন থাকলেও বর্তমান আধুনিক বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তির ছোঁয়ায় মানুষ এখন মহিষের গাড়ি রেখে ট্রেন, বাস, আর ট্রাকের সাথে উন্নততর জীবন পরিচালনা করছে। মহিষের গাড়িতে যেখানে একস্থান থেকে অন্যস্থানে যাতায়াত করতে দিন পেরিয়ে যেত। সেখানে এখন আধুনিক পরিবহন ব্যবহারে সময় লাগে মাত্র কয়েক ঘণ্টা। এ কারণে মহিষের গাড়ি তেমন আর দেখা যায় না। তবে অতিসম্প্রতি নন্দীগ্রাম উপজেলার রনবাঘা এলাকায় মহিষের গাড়ি চোখে পড়ে। গাড়িয়াল কুদ্দুস এর সাথে আলাপকালে জানান, ছোটবেলা থেকে বাবার সাথে এই মহিষের গাড়ি চালাতে মহিষগুলোকে আপন করে নিয়েছি। বর্তমানে তেমন আয় রোজগার না থাকলেও গভীর মায়া আর শখের বসেই বর্তমানে এই কাজ করে আসছি। তিনি আরও জানান, সময় বেশি লাগায় মহিষের গাড়ি রেখে মানুষ এখন নছিমন, করিমন, অটোরিকশা ব্যবহার করছে। রোজগারের কথা জানতে চাইলে তিনি জানান, কাজ পেলে দিনে সর্বোচ্চ খরচ বাদে এক হাজার টাকা রোজগার করা যায়। কিন্তু প্রতিদিন কাজ পাওয়া যায় না। ফলে এই পেশা বাদ দিয়ে অন্য কাজ করছে অনেক গাড়িয়াল। তাছাড়া নিজেরা না খেয়ে থাকলেও অবলা এই প্রাণীদের প্রতিদিন ঠিকই খাবার দিতে হয়। খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের খাদ্য কেনা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। গ্রামগঞ্জে আঁকাবাঁকা মেঠো পথে ধীরে ধীরে বয়ে চলা মহিষ ও গরুর গাড়ি এখন আর চোখে পড়ে না। পল্লি এলাকার জনপ্রিয় একমাত্র বাহন ছিল এক সময়ের গরু-মহিষের গাড়ি।
বিশেষ করে গ্রাম অঞ্চলের কৃষি ফসল বহন ও ব্যবসায়িক কাজে এ দু-চাকার গরু-মহিষের গাড়ি ব্যবহার হতো। যুগের পরিবর্তনে এ বাহন এখন হারিয়ে যাচ্ছে। দুই যুগ আগেও মহিষ ও গরুর গাড়িতে চড়ে বর-বধূ আসা-যাওয়া করতো। গরুর গাড়ির চালককে বলা হয় গাড়িয়াল। সেই চালককে উদ্দেশ্য করে রচিত হয়েছে ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’ কিংবা ‘ তুমি কেমন গাড়িয়াল শুধু টানো পরের মাল, আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে সহ নানা ধরনের ভাটিয়ালি ও ভাওয়াইয়া গান। গাড়ির সামনের দিকে একটি জোয়ালের সাথে দুটি গরু বা বলদ এবং মহিষ জুটি মিলে গাড়ি টেনে নিয়ে চলে। তবে বর্তমানে নানা ধরনের মোটরযান চলাচলের কারণে অপেক্ষাকৃত ধীর গতির এই যানটির ব্যবহার অনেক কমে এসেছে। তাই এখন আর তেমন চোখে পড়ে না।