বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৬০তম জন্মদিন আজ। ১৯৬৫ সালের এই দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান। ১/১১’র সরকার এবং পরবর্তীতে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের দুঃশাসন, নির্যাতন, নিপীড়নের কারণে প্রবাসেই কাটছে জনপ্রিয় এই নেতার জন্মদিন। তবে গত জুলাই-আগস্টে দলটির নেতাকর্মীরা তারেক রহমানের দিক-নির্দেশনায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার পর ৫ আগস্ট স্বৈরাচার হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। এরপর দেশ দীর্ঘ দেড় দশক পরে স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটে। শুধু আওয়ামী লীগ সরকারের পতনই ঘটিয়েই তিনি দায়িত্ব শেষ মনে করেননি। হাসিনার পলায়নের পর দেশে যখন সরকার শূণ্য, আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীবিহীন হয়ে পড়েছিল তখন তিনিই নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন পাড়া-মহল্লায় পাহাড়া বসানোর, পূজার সময় মন্দিরে মন্দিরে নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থান, বন্যায় উদ্ধার-ত্রাণ এবং পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনা, কোন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দখল-চাঁদাবাজীর অভিযোগ পেলেই গ্রেফতারসহ নিয়েছেন একাধিক কঠোর পদক্ষেপ। আর দেশ, দল ও সরকার নিয়ে বিভিন্ন সময়ের বক্তব্যে নজর কেড়েছেন সাধারণ মানুষেরও। তাই দীর্ঘদিন পর অন্যরকম পরিবেশে তারেক রহমানের জন্মদিন পালনের সুযোগ পেয়েছিল বিএনপি নেতাকর্মীরা। কিন্তু তারেক রহমান নিজেই এবার জন্মদিনের কোন অনুষ্ঠান পালন না করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছে। শুধু নির্দেশই নয়, দিয়েছেন কঠোর বার্তাও। গতকাল মঙ্গলবারও দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশব্যাপী বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আবারও স্মরণ করিয়ে দেয়া হচ্ছে যে, ২০ নভেম্বর বুধবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এর জন্মদিন উপলক্ষে কোন প্রকার অনুষ্ঠান পালিত হবে না। উল্লিখিত নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা সাজানো মামলায় কারাগারে বন্দি করার পর তিনি শক্ত হাতে হাল ধরেন বিএনপির। সুদূর লন্ডনে থেকে অত্যন্ত সুচারুভাবে সংগঠন পরিচালনা করে চলছেন বিরামহীনভাবে। সেই ওয়ার্ড থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে। প্রতিদিন প্রায় ১৮ ঘন্টা অবিরাম পরিশ্রম করে চলছেন। তিনি যত দূরেই থাকুন না কেন নেতাকর্মীদের যে কোনো বিপদে আপদে পাশে দাঁড়িয়ে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এরই মধ্যে তাঁর নেতৃত্বে সারাদেশের তৃণমূল আবারও ঐক্যবদ্ধ ও উজ্জীবিত। বিএনপি ও বিএনপির প্রতিটি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন এখন যে কোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী। তাঁরই ডাকে সাড়া দিয়ে সারাদেশে বিএনপির গণসমাবেশে মানুষের ঢল নামছে। বিএনপির এই নেতা (তারেক রহমান) বহুমুখি প্রতিভার অধিকারী। জনগণকে আপন করে কাছে টেনে নেয়ার জাদুকরী ক্যারিশমেটিক নেতৃত্ব, সম্মোহনী ব্যবহার আর এসব গুণাবলীই তাঁকে বিস্ময়কর জনপ্রিয়তার অধিকারী করে তোলে। পিতার পথ ধরেই শহরকেন্দ্রিক রাজনীতিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দেন হাটে-মাঠে-ঘাটে। আওয়ামী লীগ ও দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীদের আক্রোশের শিকার হয়ে তিনি ১/১১-তে গ্রেফতার হয়ে নির্মম নির্যাতনের শিকার হন। সেই ভয়াবহ নির্যাতনের ক্ষত আজও তাঁকে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। এখনও তিনি সুদূর লন্ডনে চিকিৎসাধীন আছেন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শাহাদতবরণ করায় মাত্র ১৫ বছর বয়সেই পিতৃহারা হন তারেক রহমান। ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল থেকে তিনি মাধ্যমিক ও ঢাকার বিএফ শাহীন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৮৫-৮৬ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এলএলবিতে, পরে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রথম বর্ষে ভর্তি হন এবং স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্সে ভর্তি হন। শিক্ষাজীবন শেষে ব্যবসাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন তিনি। বস্ত্রশিল্পে বিনিয়োগ করে স্বল্প সময়ের মধ্যে ব্যবসায় সফলতা লাভ করেন। পরে তিনি নৌ-যোগাযোগ খাতে বিনিয়োগ করে সফলতা অর্জন করেন। তারেক রহমান ১৯৯৪ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান, সাবেক যোগাযোগ ও কৃষিমন্ত্রী রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খানের বড় মেয়ে ডা. জুবাইদা রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের একমাত্র কন্যা ব্যারিস্টার জায়মা রহমান কৃতিত্বের সাথে বার-অ্যাট ল’ অর্জন করেন।
তারেক রহমান কিশোর বয়সে ১৯৮১ সালে পিতাকে হারালেও পড়াশুনার পাশাপাশি স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে তাঁর মায়ের সহচর হিসেবে অংশ নেন। পিতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের গড়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের বগুড়া কমিটির সদস্য হিসেবে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সূচনা হয়। মাত্র ২২ বছর বয়সে ১৯৮৮ সালে তারেক রহমান বগুড়া জেলার গাবতলী থানা বিএনপির সদস্য হন। আনুষ্ঠানিকভাবে সংগঠনে যোগ দেয়ার আগেই তারেক রহমান রাজনীতিতে অত্যন্ত সক্রিয় ছিলেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপির রাজনীতিতে প্রায় নেপথ্যে থেকে সক্রিয় হয়ে উঠেছিলেন তারেক রহমান। তারই রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, অনবদ্য পরিকল্পনা ও প্রজ্ঞার কারণে বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট বিপুল ভোটে বিজয়ী হয় ২০০১ সালের নির্বাচনে। দীর্ঘদিন দলের রাজনীততে গুরুত্বপূর্ণ কাজে নেপথ্যচারীর ভূমিকা পালন করলেও অবশেষে ২০০২ সালে তিনি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পান। ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিএনপির পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে তারেক রহমান সংগঠনের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ৬ষ্ঠ কাউন্সিলেও তারেক রহমান সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে সাজানো মামলায় কারাগারে প্রেরণ করার পর থেকে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।