আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ বদলে গেছে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার নবান্ন উৎসবের ধারা। আগে হেমন্তের প্রথম দিন পহেলা অঘ্রানে নতুন ধানের আটায় তৈরি হতো নানা পিঠাপুলি, ভাব ওঠা সোনালী ভাত, মাছের নানা রকম ব্যাঞ্জন। সামর্থ্যবান এবং মধ্যবিত্ত কৃষকের যা চটাই কুলাই তাই দিয়ে হতো নবান্নের উৎসব। এসব খাবারের সাথেও থাকতো হেমন্ত কালে পাওয়া কিছু ফলফলাদি। ডাগুর কাটা নলেন গুঁড় (খেজুরের লালি), পানিফল, শাপলা-শালুক, পদ্মবীজ, জলপাইয়ের আচার ইত্যাদি। আগে নবান্নের ভুড়ি ভোজের পর রাতে খলায় খলায় বসতো জারি সারি সত্য পীরের গানের আসর। কিচ্ছার আসর ও কীর্ত্তন। এখন বাজে ডেক সেট। এখন কৃষকের সামর্থ্য একটু বেড়েছে। উত্তর জনপদের প্রায় কৃষকের ঘর থেকে জোয়ান ছেলেরা আরব দেশ অথবা মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছে কাজ করার জন্য। তাদের হাড় ভাঙ্গা খাটুনি ও কাঁচা টাকায় বদলে গেছে সত্যি সত্যি কৃষকের নবান্ন উৎসব। এখন আদি আমলের পিঠাপুলি প্রায় উঠেই গেছে। তার জায়গায় স্থান পেয়েছে নবান্ন মেলার বড় বড় মাছ আর মোষ, গরু, খাসি, ভেড়া গোশতের সমারোহ। এসব নানা রকমের বিদেশী খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করা হচ্ছে আত্মীয়-স্বজনদের। তবে এবার মেলাকে কেন্দ্র করে আগের সেই ভাব ধারা গুলো ফিরে আনতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়েছে ওই গ্রামের যুবক সাখাওয়াত সহ অনেকেই। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বুধবার সকাল থেকে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার শালগ্রাম, কালাইকুড়ি, সাগরপুর, কাল্লাগাড়ী, কৈকুড়ি, কোমারপুর, কোমারভোগ সহ বেশ কিছু গ্রামে ঘুড়ে দেখা গেল বাঙ্গালীর ঐতিহ্যবাহী নবান্ন উৎসব। এ উৎসব পালন উপলক্ষে প্রতিটি বাড়ীতে জড়ানো হয়েছে মেয়ে-জামাই, নাতি-নাতনি ও আত্নীয়-স্বজন। উৎসবটি পালন করা হচ্ছে ঈদের আমেজে। গ্রামের প্রতিটি বাড়ী থেকে বাতাসে ভেঁসে আসছিল উন্নতমানের খাবার বিশেষ করে মহিষ ও গরুর গোস্ত রান্নার সুবাস। নবান্ন উৎসব পালন উপলক্ষে ওই সব গ্রাম সহ আশপাশের প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রামে প্রতি বছরের মত এবারো জবাই করা হয়েছে মহিষ ও গরু। গ্রামের প্রতিটি পাড়া মহল্লা ও মোড়ে মোড়ে বসেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী চুড়ি-ফিতা, আলতা ও বাচ্চাদের খেলার সামগ্রী এবং জিলাপী, রসগোল্লা, চমচম, বাতাসা, মুড়কি ও পাঁপড় ভাজা সহ মূখরোচক নানান পন্যের মেলা। শনিবার উপজেলার শালগ্রামে গিয়ে কথা হল দিলবর আলী নামের এক ব্যক্তির সাথে। তিনি ক্ষুদ্ধস্বরে বললেন, নবান্ন কোন ধর্মের নয়, এটা বাঙ্গালীর ঐতিহ্য। পূর্ব পূরুষরাও এ উৎসব পালন করেছে আমরাও করছি। ছেলে-মেয়ে সাথে জামাই আর নাতি-নাতনি ও নিকট আত্নীয় নিয়ে নতুন ধানের চালের ভাত গোস্ত খাওয়ার আনন্দই অন্য রকম। একই ধরণের কথা বলেন, ওই গ্রামের সন্তান সাখাওয়াত হোসেন ও কোমারভোগ গ্রামের নূর ইসলাম এবং উপজেলা যুবদল নেতা শালগ্রাম নিবাসী মিলন হোসেন। ছাতিয়ানগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল হক আবু বলেন, পুর্ব পুরুষের আমল থেকেই উপজেলা এভাবে নবান্ন উৎসব পালন হয়ে আসছে। আর দিন দিন এউৎসব পালনের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মোট কথা গ্রাম বাংলায় নবান্ন উৎসব পালন করা হয় অনেকটা ঈদের আমেজে।