সজিব হোসেন নওগাঁ : রাজপ্রাসাদ বা জমিদার বাড়ি যাকে ঘিরে মানুষের মধ্যে সব সময়ই তৈরি হয় নানান কৌতুহল। সময়ের বিবর্তনে সে সব প্রাসাদ গুলো এখন হয়ে উঠেছে দর্শনীয় স্থান। প্রতিটা মানুষের হৃদয়ে বাসনা থাকে সুন্দর একটি বাড়ি থাকবে তার। যেখানে তিনি তার প্রিয় মানুষ গুলোকে নিয়ে অত্যন্ত সুখে বসবাস করবেন। হয়তে সে কারণেই এসব বাড়ি গুলো মানুষের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে প্রবর্তিত এক প্রকার ভূমি ব্যবস্থা নামই হচ্ছে জমিদারি প্রথা। এই জমিদারি প্রথার অধীনে একটি অঞ্চলের বেশিরভাগ জায়গাকে জমিদারিতে ভাগ করে বছরে খাজনা প্রদানকারী এক ধরনের ভূস্বামীদের হাতে ছেড়ে দেয়া হতো। এসব ভূস্বামীরাই সমাজ ব্যবস্থায় ‘জমিদার’ নামে পরিচিত ছিল। ১৮২৩ সাল নাগাদ জমিদার সারদা প্রসাদ রায়ের বাবা পাল বংশের কাছে থেকে একটি মাটির দোতলা বাড়ি খরিদ করেন। জমিদারি চালোনা হত এই বাড়ি থেকে। জমিদারি সময়ে সুদুর ভারত থেকে শিল্পী নিয়ে এসে এই বাড়ির উঠানে বসত থিয়েটার হতো যাত্রা পালা । এখানে উচ্চ বংশীয় এবং উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের সাথে পুজোর সময় সংস্কৃতি যুদ্ধো হতো। নওগাঁর মান্দা উপজেলার মৈনম বাজারে রায় বাড়ির জমিদার বাড়ি এখন আধুনিক মাটির ডুপ্লেক্স বাড়ি। ব্যাক্তি মালিকানায় থাকলেও দূর দুরান্ত পর্যটক আসেন বাড়িটির সুন্দোর্য উপভোগ করতে । ২০২১ সালে রায় বাড়ির বংশধর বুরন রায় এবং বাবন রায় জমি জমা বিক্রি করে নাটোরে চলে যান । বর্তমানে ক্রয় সুত্রে বাড়িটির মালিক আসকার ইবনে সুলতান শান্ত। বাড়িটি সংস্কারে আধুনিকায়নে শান্ত স্থানীয় আদাবাসি সম্প্রদায়ের কারিগরদের শৈল্পিক কারিগরিকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। এমন সুন্দর্যো যেন সকলে উপভোগ করতে পারে তার জন্য পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। রাইজিং হেরিটেজ প্যালেস যার স্থাপনাকাল ১৮২৩ সালে । এখানে এখনও সেই সময়ের মাটির চিহ্নগুলো রয়ে গেছে। বাড়ির দেওয়াল গুলোতে মাটির স্তর দিয়ে নানান শিল্প কর্ম ফুটে তোলা হয়েছে। আসকার ইবনে সুলতান শান্ত জানান, নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার আদিবাসি পল্লী থেকে ৮০-৮৫ বছরের বৃদ্ধ দ্বিজেন বর্মন তার ২০ জনের একটি টিম নিয়ে ৪মাস শিল্প কর্মের কাজ করেছেন। পরবর্তীতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয় কারিগর দিয়ে প্রায় দুই বছরে সময়ের ব্যবধানে এমন রুপ দিতে পেরেছেন । তিনি আরও জানান- বাড়িটিতে অভ্যন্তরীন দুইটি মাটির সিড়ি রয়েছে যা প্রায় দুইশ বছরের পুরনো। আর সংস্কারের পর বাহির থেকে সকলের চলাচলে সুবিধার্থে সিড়ি করা হয়েছে। প্রতিদিন মানুষ আসে মাটির এই ডুপ্লেক্স বাড়িটি দেখতে। তবে ছুটির দিনে ভীড় বাড়ে। সবাই এসে ছবি উঠাই ভিডিও বানাই সকলের জন্য উন্মোক্ত করা থাকে সব সময়। আমাদেরও ভালো লাগে সবাই এসে বাড়িটি ঘুরে ঘুরে দেখছে। আমরা কাউকে নিষেধ বারণ করিনিা।
এখানে ঘুরতে আসা ভিডিও গ্রাফার আশিক খান বাড়িটির চিত্র ধারন করতে এসে জানান, পুরাতন মাটির বাড়িকে এমন ডুপ্লেক্স বাড়িতে রুপ দেওয়ার শৈল্পিক নিদর্শন দেখতে ছুটে এসেছি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সহায়তায় আমরা বাড়িটি সম্পর্কে জানতে পারি । সাদিয়া জাহান জান্নাত নামের এক দর্শনার্থী বলেন, আমরা কয়েকজন মিলে নওগাঁ শহর থেকে এখানে এসেছি। বাড়িটি দেখে মনে হলো যেন সেই প্রাচীন যুগের জমিদার বা রাজা বাদশাদের বাড়িতে এসেছি। কি চমৎকার কারুকাজ। সত্যিই সব মিলে অসাধারণ। পানির ফুয়ারা বসবার সু-ব্যবস্থা থাকা সকলই যেনো সুন্দোর্য উপভোগের সুযোগ সুবিধা রয়েছে এখানে। শুধু পর্যটক না এখানে কারো বিয়ে ব্রাইডল সুট করে থাকেন অনেকে । স্মৃতি হিসেবে রেখে দেওয়ার সকল সুন্দোর্য উপভোগ করে বাড়িটি দেখতে আসা পর্যটকরা। পরিবেশ বিপর্যয়ের এমন সময়ে ইট পাথরের দালান না করে মাটির বাড়িকে ডুপ্লেক্স বাড়িতে রুপান্তর যা পরিবেশকে রক্ষার সামিল মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।