বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘রাজনৈতিক দলসহ সকল পর্যায়ের স্টেক হোল্ডারদের সাথে আলোচনাসাপেক্ষে সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ তৈরি করে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিয়ে সম্মানের সাথে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীণ সরকারকে বিদায় নিতে হবে। বছরের পর বছর দেরি করলে আগাছা জন্ম নিতে পারে, বিশৃংখলা সৃষ্টি হতে পারে, তৃতীয় শক্তির উত্থান হতে পারে।’ বৃহস্পতিবার নগরীর সোনাডাঙ্গাস্থ আল ফারুক সোসাইটিতে খুলনা মহানগর ও জেলা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত রোকন সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
জামায়াত আমির আওয়ামী লীগকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘গণহত্যাকারীদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। রাজনীতি করতে হবে দেশের মানুষের আকাঙ্খাকে ধারণ করে, বাহিরের কারো সাহায্য নিয়ে নয়। শিক্ষা সংস্কার কমিশনে আল্লাহকে স্বীকার করেন না এমন লোকদের অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। কমিশনে কমপক্ষে একজন আলিয়া ও একজন কওমী নেসাবের আলেমকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বিডিআর বিদ্রোহের নামে ৫৭ জন চৌকস সেনা সদস্য হত্যাসহ দেশের সকল হত্যাকাণ্ড এবং এর মাষ্টার মাইণ্ডদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তা’ না হলে আবারো জালিমদের আগমন হতে পারে, তৃতীয় শক্তির উত্থান হতে পারে। ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘হাজারো মানুষের, মা-বোনদের, শিশুর কান্নার রোল আল্লাহর আরশে পৌঁছে গেছে বলেই জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদও বিদায় হয়েছে। আওয়ামী লীগ বিডিআর হত্যার মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদি শাসনের প্রথম ধাপ শুরু করে। এরপর জামায়াতের ওপর স্টিম রোলার চালানো হয়। জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি দিয়ে জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করার অপচেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু সব ষড়যন্ত্রই আল্লাহ ব্যর্থ করে দিয়েছেন। ইতোমধ্যেই জামায়াতের বিরুদ্ধে অভিযোগকারীরা গ্রেফতার হতে শুরু করেছে।’
বর্তমান সরকার ওইসব ষড়যন্ত্রকারীদের বিচারের আওতায় এনে একটি বিচারিক কার্যক্রমের সূচনা করবে বলেও তিনি আশা করেন। বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘১৫ বছরের অনেক মজলুমের চোখের পানির ফসলই হচ্ছে জুলাই-আগষ্টের গণঅভ্যুত্থান। আওয়ামী লীগের ১৫ বছর আর মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের দুই বছর এই ১৭ বছরের জুলুম-নির্যাতনের পরও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এদেশের মানুষের প্রিয় সংগঠনে পরিণত হয়েছে শুধুমাত্র আল্লাহর ওপর দৃঢ় বিশ্বাস আর আস্থার কারণে। এজন্য জামায়াতের প্রতিটি রোকনকে আরো দৃঢ় ও সাংগঠনিক মান উন্নয়নের মাধ্যমে দায়িত্ব পালনের জন্য তিনি আহ্বান জানান। কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা মহানগরী আমির অধ্যাপক মাহফুজুর রহমানের সভাপতিত্বে রোকন সম্মেলনে বক্তৃতা করেন, কেন্দ্র্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মো: মোবারক হোসাইন এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চল সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ এবং উদ্বোধনী বক্তৃতা করেন, খুলনা জেলা আমির মাওলানা এমরান হুসাইন।
এ সময় খুলনা অঞ্চল পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, খুলনা অঞ্চল টিম সদস্য অধ্যক্ষ মশিউর রহমান খান ও মাস্টার শফিকুল আলম, সাতক্ষীরা জেলা আমির মুহাদ্দিস রবিউল বাশার, বাগেরহাট জেলা আমির মাওলানা রেজাউল করিমসহ মহানগর ও জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, বিগত ১৫ বছর পর এই প্রথমবারের মতো জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে নগরীর আল ফারুক সোসাইটিতে প্রকাশ্যে রুকন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। এর আগে ২০১০ সালে নগরীর শিববাড়ি মোড়ে প্রকাশ্যে মহাসমাবেশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।