বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের’ নিয়ে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সম্পূর্ণভাবে ভদ্রতা ও শিষ্টাচার পরিপন্থী। শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতিতে মনোক্ষুণ্ণ হয়েই তারা এমন বক্তব্য দিয়েছেন বলে মন্তব্য রিজভীর। সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এসব কথা বলেন রিজভী। রিজভী বলেন, ‘বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে পৃথিবীব্যাপী যে ভূকম্পন তৈরি হয়েছে। শেখ হাসিনা দেশে ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। সেটাতে তারা (ভারত) যে মনোক্ষুণ্ণ, বেদনার্ত সেটা ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ’র কথার মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে। যা সম্পূর্ণভাবে ভদ্রতা ও শিষ্টাচার পরিপন্থী।’ তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে চলে গেছেন কিন্তু তার অবশিষ্টাংশ দেশে আছেন। যারা এখন চুপ করে আছে, ঘাপটি মেরে আছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে চুপচাপ রয়েছে। কিন্তু আসলে তারা চুপচাপ থাকলেও চুপচাপ নেই। দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য এবং বাংলাদেশের সাম্য, মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করতে তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে।’ বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান-মুসলমান জনগোষ্ঠী যুগ যুগ ধরে ঐতিহ্যর ধারায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুটু রেখেছেন। ঠিক একইভাবে সামনের দুর্গাপূজায় সেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার প্রচেষ্টা থাকবে। যদিও আমরা বিভিন্ন ধরনের আলামত দেখে মনে করছি তারা (আওয়ামী লীগ) নাশকতা করার চেষ্টা করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে বিশ্বব্যাপী ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করতে পারে। তেমনি একটি ঘটনা খুলনায় বিভিন্ন মন্দিরে খোলা চিঠি পাঠিয়ে হুমকি দেয়া হচ্ছে। এটি নিঃসন্দেহে বড় ধরনের চক্রান্তের বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু জনগণ এই বিষয়ে অত্যন্ত সর্তক আছে, সচেতন আছে। বিএনপি ও তার অসহযোগী সংগঠন এবং গণতন্ত্রমনা রাজনৈতিক দলের প্রত্যেকে এ ব্যাপারে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছে। তাই বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে সুপরিকল্পিতভাবে যে চক্রান্ত হচ্ছে সেটাকে নস্যাৎ করতে অতন্ত্রপ্রহরীর মতো কাজ করব। সামনের পূজায় নিজ দায়িত্ব নিয়ে গণতন্ত্রমনা রাজনৈতিক দলগুলো নিরাপত্তা ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।’এক প্রশ্নের জবাবে ছাত্রদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, ‘সাধারণ মানুষ, নিরীহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী অর্থাৎ কারো বৈধ বাড়িঘর দখল করার অধিকার অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের নেই। আর বিএনপি শত নির্যাতন নিপীড়ন সহ্য করেছে কিন্তু এ ধরনের কাজ থেকে বিরত রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও কিন্তু ভিডিওবার্তায় দলের নেতাকর্মীদের দখলবাজি থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তারপরও যারা নির্দেশ মানেনি তাদের অভিযোগ প্রমাণ সাপেক্ষে বহিষ্কার করা হচ্ছে। এটাই হলো আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে পার্থক্য। আর এই জন্য দেশের মানুষ বিএনপিকে বেশি পছন্দ করে। অথচ বিগত ১৫ বছর দখলবাজি, টাকা পাচারের পরও তো দেখিনি শেখ হাসিনাকে এই বিষয়ে কথা বলতে; কারণ তিনি জানতেন; তাই তো প্রধানমন্ত্রী হাসতে হাসতে বলেন- আমার পিয়নই তো চার শ’ কোটি টাকার মালিক।’
রিজভী বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান খুব শিগগিরই দেশে আসবেন, আমরা আশা করছি। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রকাশে এবং নৈপথ্যে ছিলেন তারেক রহমান। তাই তিনি গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে না যাওয়ার পিছনে ছিলেন অনড়। তার অনড় অবস্থানের কারণেই শেখ হাসিনা সেই নির্বাচনকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। যা ছিল যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত, যার পথ ধরেই ছাত্রজনতার এই চূড়ান্ত আন্দোলন। অথচ এই দেশের অনেক সুশীল ব্যক্তি তখন বিএনপির নির্বাচনে না যাওয়া নিয়ে নানা সমালোচনা করেছেন।’ উল্লেখ্য, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের উল্টো করে ঝুলিয়ে সোজা করা হবে।’