বাংলাদেশে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে আদানি পাওয়ার ভারতেই বিদ্যুৎ বিক্রির উপায় খুঁজছে। আজ সোমবার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আদানির সঙ্গে ২০১৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্বাক্ষরিত চুক্তিটি পর্যালোচনা করতে যাচ্ছে— এমন ইঙ্গিত আসার পরই আদানি পাওয়ার ভারতে বিদ্যুৎ বিক্রির চেষ্টা করছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঝাড়খণ্ডে অবস্থিত আদানি পাওয়ারের গড্ডা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সব বিদ্যুৎ বর্তমানে বাংলাদেশে সরবরাহ করা হয়। ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বিহার রাজ্যের লক্ষ্মীসরাইয়ের একটি সাবস্টেশনের মাধ্যমে ভারতীয় গ্রিডের সঙ্গে সংযোগের অনুমোদন পেয়েছে। যা হোক, ভারতীয় গ্রিডের সঙ্গে সংযোগের জন্য কোম্পানিকে প্রথমে ১৩০ কিলোমিটার ট্রান্সমিশন লাইন তৈরি করতে হবে। আদানি পাওয়ারের মতে এটি করতে ‘যথেষ্ট সময়’ লাগবে। গড্ডার কাছাকাছি বিহারের বাঙ্কায় (মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে) অবস্থিত একটি সাবস্টেশনের মাধ্যমে দ্রুত সংযোগের জন্য অনুমোদন চেয়েছিল আদানি পাওয়ার। তবে সেন্ট্রাল ট্রান্সমিশন ইউটিলিটি অব ইন্ডিয়া লিমিটেড (সিটিইউআইএল) প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কথা বলে সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে। সিটিইউআইএল বিদ্যুৎ ট্রান্সমিশন পরিকল্পনার জন্য ভারতের পক্ষ হিসাবে কাজ করে। গত ২১ আগস্টের বৈঠকের কার্যসূচির বরাত দিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার কয়েক দিন পর ভারতের কেন্দ্র সরকার ১০ আগস্ট গড্ডা প্ল্যান্টের জন্য জাতীয় গ্রিডে সংযোগের সুপারিশ করেছিল। সুপারিশে বলা হয়, বাংলাদেশে উদীয়মান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা ও ভালো পেমেন্ট পরিশোধের কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। এর চার দিন আগে, আদানি পাওয়ার ভারতের বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছিল, বাংলাদেশে কম চাহিদা বা ভূ–রাজনৈতিক সমস্যার সময় ভারতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করাই ‘লাভজনক’ হবে। গত ১২ আগস্ট বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় বিদ্যুতের আমদানি/রপ্তানি (ক্রস বর্ডার) জন্য নির্দেশিকা সংশোধন করে দেশীয় প্ল্যান্টগুলোকে একচেটিয়াভাবে প্রতিবেশী দেশগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহের অনুমতি দেয়। বর্তমানে শুধুমাত্র আদানির গোড্ডা প্ল্যান্ট ভারতের মধ্যে বিদ্যুৎ বিক্রি করতে পারে। মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে এই জাতীয় প্ল্যান্টগুলোতে সংযোগ দেওয়ার জন্য একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতির খসড়া তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছে। সিটিইউআইএল ২১শে আগস্ট আদানির গোড্ডা প্ল্যান্টের সঙ্গে লক্ষীসরাই সাবস্টেশনের সংযোগ প্রস্তাব অনুমোদন করেছে, যাতে কোম্পানির প্রযুক্তিগত প্রয়োজনীয়তা পূরণ হয়। একই বৈঠকে আদানি পাওয়ার গুরুত্বের সঙ্গে জানায়, এই প্রস্তাবটি বাস্তবায়ন করতে ‘যথেষ্ট সময়’ লাগবে এবং কাছাকাছি বাঙ্কা সাবস্টেশনের সঙ্গে একটি অন্তর্বর্তী সংযোগের পরামর্শ দেয়, যা ভারত সরকার প্রত্যাখ্যান করেছে। গোড্ডা প্ল্যান্ট ২০২৩ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করে। এর আগে, আদানি পাওয়ার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে জানায়, প্ল্যান্টটির কাছে বাংলাদেশের ৫০ কোটি ডলার বকেয়া রয়েছে।