অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘আইনের শাসন কায়েম করে জুলাইয়ের সকল হত্যাকারী ও অপরাধীদের দ্রূত গ্রেফতার ও বিচারের নিশ্চয়তা প্রদান না করলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিপ্লবী ভূমিকা মানুষের কাছে ম্লান হয়ে যাবে। তিনি বলেন, ইউনুস গুড উইল বলে একটা কথা আছে। ইউনুস গুডউইলের আমরা প্রতিফলন দেখতে চাই। সেই প্রতিফলন শুধু আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা থেকে নয় দেশের মধ্যে সুশাসন,আইনের শাসন এবং ভয়ংকর জুলাইয়ে যে নারকীয় গণহত্যা হয়েছে সেই অপরাধীদেরকে গ্রেফতার এবং বিচারের নিশ্চয়তা না দিলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিপ্লবী ভূমিকা মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আমরা বিএনপি পরিবারের উদ্যোগে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে নিহত শহীদ মাহামুদুরর রহমান সৈকতের মোহাম্মদপুরের বাসায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষে আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ কালে তিনি এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচার আখ্যা দিয়ে রিজভী বলেন, তিনি অবৈধ লুটের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য পুতুলের মত নিষ্পাপ শিশু, বাচ্চাদের রক্ত ঝরাতে দ্বিধা করেননি। বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি সবার সমর্থন আছে। কিন্তু কাজের গতি যদি স্লো হয় কাজের গতি যদি অত্যন্ত নিম্নগতির হয় তা হলে তো এদেশের মানুষের কাছে আপনারা দিনকে দিন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বেন। আপনারা একটি বিপ্লবী সরকার। এই কিশোর বাচ্চাদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে পৃথিবী কাঁপানো যে বিপ্লব হলো ৫ই আগস্ট আপনারা তার সরকার। ওই সমস্ত অপরাধীরা ঘুরে বেড়ায় তারা পিকনিক করে লাঠি মিছিল করে আর আপনারা যদি নিশ্চুপ থাকেন তাহলে তো আপনাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ থেকে যাবে। তিনি বলেন, শহীদ মাহামুদুর রহমান সৈকত নিজের জীবন দিয়ে, রক্ত দিয়ে আমাদের মুক্ত বাতাসে নিয়ে এসেছে। কিন্তু তার সপ্ন ছিল, অদম্য প্রত্যয় ছিল। একজন ভালো ছাত্র। একজন ক্রিকেটার হতে চেয়েছিলো সে। এই দেশকে তার আরও অনেক দেয়ার কিছু ছিল। অথচ তার আগেই তাকে বিদায় নিতে হয়েছে। তার বিদায় স্বাভাবিক ছিলো না। তার মত শহীদদের জীবনের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে গোটা জাতি কারাগার থেকে বেরিয়ে বিশুদ্ধ বাতাস নিতে পারছে। কিন্তু সৈকতের মত এমন টগবগে একটি কিশোর ছেলের স্বৈরাচারের গুলিতে মারা যাওয়ায় আজ গোটা দেশ, গোটা জাতি শোকে স্তব্ধ।
রিজভী এসময় প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘শেখ হাসিনা, তোমার নিজের ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য কি এত রক্ত, এত লাশের দরকার ছিল! এই বাচ্চাদের লাশ দেখে তুমি খুশি হয়েছিলে! আজ তোমার একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। তুমি তোমার মেয়ের সঙ্গে দিল্লিতে একটি রেস্তোরাঁয় খাবার খাচ্ছো। কতটা নির্লজ্জ তুমি!’ তিনি আরও বলেন, যারা দেশটিকে নিজেদের কব্জায় নিতে চেয়েছিলো, শেখ হাসিনা ছিলেন তাদের প্রতিনিধি। তাদের স্বার্থ রক্ষা করতে তিনি নিজ দেশের তরুণদের রক্ত ঝরাতে দ্বিধা করেননি। রিজভী বলেন, সৈকতের মৃত্যুর ঘটনায় হতভাগ্যের পিতা একটি মামলা করেছেন। কিন্তু পুলিশ এখনও প্রধান আসামীসহ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। আর পারবেই বা কি করে। পুলিশের অধিকাংশ কর্মকর্তারা ছিলেন ভয়ংকর এক দুরাচারী সরকারের দোসর ছিলেন। স্বৈরাচারের রক্তপিপাসু শাসনকে তারা প্রতিষ্ঠিত করেছিলো। তা না হলে সৈকতকে গুলি করে হত্যাকারী এসআই শাহরিয়ার গ্রেফতার হতো। সাবেক ভূমিমন্ত্রী, সালমান এফ রহমানদের মত দুরাচাররা পার পেয়ে যেতো না। প্রশাসন ও আদালত নানা ধানাই ফানাই করছে।বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, শেখ হাসিনা ও তার দোসররা ১৫ বছর ধরে দেশটিকে খেয়ে ফেলেছে। আর তাদের নিরাপত্তা দিয়েছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শেখ হাসিনা তার প্রভাবশালী মন্ত্রী, এমপিদের মাধ্যমে হরিলুটের রাজ্য কায়েম করেছিল। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় তারা উপহাস করেছে সে সময়।
তিনি বলেন,আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জনগনের ব্যাংকে রাখা অর্থ লোপাট করায় সিদ্ধহস্ত ছিল৷ আর সেই অর্থ দিয়ে বিদেশে বাড়ি করবে। পাচার করবে। তাদের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠলেই কন্ঠরোধ করা হত। তারা সেটাই করতে চেয়েছিল। তারা মনে করেছিলো গণতান্ত্রিক শক্তি আর আওয়াজ করবে কোথা থেকে। জনগন যে ভেতরে ভেতরে ফুসে উঠেছিলো তারা সেটি টের পায়নি।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক সিনিয়র সাংবাদিক আতিকুর রহমান রুমন, সংগঠনের উপদেষ্টা ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল, সদস্য সচিব কৃষিবিদ মোকছেদুল মোমিন মিথুন, সদস্য মাসুদ রানা লিটন, শাকিল আহাম্মেদ, ফরহাদ আলী সজীব, রুবেল আমিন, যুবদল নেতা মেহেবুব মাসুম শান্ত, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা আরিফুর রহমান তুষার, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহ সভাপতি হাবিবুল বাশার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ হাসনাঈন নাহিয়ান সজীব, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ সভাপতি শারিফুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।