ক্ষমতাচ্যূত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে ৫০ জনের নাম উল্লখ করে অজ্ঞাতনামা ১৫০-২০০ জনের নামে আরেকটি হত্যা মামলা হয়েছে। বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সাভার মডেল থানার (এসআই) মো: মিজানুর রহমান। এর আগে ১৬ সেপ্টম্বর নিহতের বড় ভাই রমজান আলী মামলাটি করেন। রফিকুল ইসলাম (২২) নামে এক অটোরিকশা চালককে গুলি করে হত্যার ঘটনায় এ মামলাটি করা হয়। নিহত অটোরিকশাচালক রফিকুল কুড়িগ্রাম জেলা সদরের ডাকবাংলা পাড়ার বাসিন্দা মরহুম আমির হোসেনের ছেলে। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে পরস্পরের যোগসাজশে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে দাঙ্গা-হাঙ্গামা, মারপিট ও গুলিবর্ষণ করে হত্যা ও হত্যার হুকুম দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করার পর বিকেলে বিজয় মিছিল নিয়ে সাভার থানার দিকে যাবার পথে থানা রোডেই ছাত্র-জনতার উদ্দেশে নির্বিচারে গুলি ছোড়ে পুলিশ। অন্যের সাথে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান অটোরিকশাচালক রফিকুল ইসলাম।
এ মামলায় শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা ছাড়া মামলার অপর আসামিরা হলো-আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, আওয়ামী লীগের সভাপতিণ্ডলীর সদস্য এবং সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবং সাবেক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো: এনামুর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য ও আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, ঢাকা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান ওরফে জি এস মিজান, সাভার পৌরসভার সাবেক মেয়র ও সাভার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল গণি, তার ছেলে আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক হাসান তুহিন, কামরুল হাসান শাহিন, মেহেদী হাসান তুষার, সাভার পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম মানিক মোল্লা, সাভার উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম রাজীব, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফকরুল আলম সমর, সাভার পৌরসভার কাউন্সিলর রমজান আলী, নূরে আলম সিদ্দিকী নিউটন, সেলিম মিয়া, সাভার উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক, সহ-সভাপতি নিজামউদ্দিন টিপু, সাভার উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মাসুদ চৌধুরী, সাভার ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সোহেল রানা, বনগাঁ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম, বিরুলিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান সুজন, সেলিম মন্ডল, কাউন্দিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুল আলম খান, আমিনবাজার ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রকিব উদ্দিন ও ভাকুর্তা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ লিয়াকত হোসেনসহ অন্যরা।
মামলার এজাহারে বলা হয়, অটোরিকশাচালক রফিকুল ইসলাম স্ত্রী আশামনি ও মা রওশন আরাকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন সাভারের গেন্ডা মহল্লায়। জীবিকা নির্বাহের জন্যে রফিকুল ইসলাম অটোরিকশা নিয়ে বের হয়ে আর বাড়ি ফেরেনি। সেদিন সন্ধ্যার দিকে থানা রোডের বৌবাজারের সামনে পীঠে বাম দিকে গুলিবিদ্ধ হয় সে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেবার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে রফিকুল ইসলামের লাশ তার নানা বাড়ি জামালপুর সদর থানার বানারেরপাড় কবরস্থানে দাফন করা হয়।
অপর মামলা
অপরদিকে একই তারিখে শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে ১৩০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ১৫০-২০০ জনের বিরুদ্ধে আরেক মামলা করা হয়েছে।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে মামলার তদন্তকার কর্মকর্তা (এসআই) মো: রাজীব সিকদার মামলার বিষয়টি নিশ্চত করেন।
মামলাটি করেন নিহত ছাত্রদল নেতা মো: আরিফুর রহমান রাসেলের (৩২) বড় ভাই সাইদুর রহমান। এ নিয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় ১৫টি হত্যা মামলা হয়েছে।
মামলার অপর আসামিরা হলেন শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহেনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাভার উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম রাজীবসহ আওয়ামী লীগ ও অংগ সংগঠনের নের্তৃবৃন্দ।
মামলার এজহারে উল্লেখ করেন ৫ আগস্ট বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটের সময় ক্রমিক নম্বর ১ হইতে ৪৫-এর আসামিদের নির্দেশে ও উস্কানিতে অন্য আসামিরাসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ‘সন্ত্রাসীদের হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া করিয়া এলোপাথারী পিঠাতে থাকে এবং আগ্নেয়াস্ত্র দিয়া হত্যার উদ্দেশে উপুর্যপরী গুলি বর্ষণ করিতে থাকে। আমার ভাই মো: আরিফুর রহমান ওরফে রাসেল সাভার থানাধীন রেজিস্ট্রেশন অফিস চৌরাস্তা মোড়ে বুকের বাম পাশে গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়লে এনাম মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে নেয়া হলে সন্ধ্যা পৌনে ৭টার সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে তার লাশ বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ থানার গ্রামের বাড়িতে পারিপারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।