রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি ঃ রাণীনগরে চলতি মৌসুমে সোনালী আঁশ খ্যাত পাটের দাম ও ফলন ভালো পাওয়ায় চাষিরা খুশি। কৃষি উপকরণের দাম কিছুটা কম পাওয়া গেলে এই লাভের পরিমাণ আরো বাড়বে বলে পাট চাষিরা জানান। ৮০দশকে সোনালী আঁশ খ্যাত দেশী পাটের চাহিদা জমজমাট ছিলো। ঠিক সেই সময় খুলনা ক্রিসেন্ট জুট মিলের একটি ক্রয় কেন্দ্র রাণীনগরে ছিলো। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনসহ নানা কারণে গত আওয়ামী লীগ সরকার রাণীনগরে এই পাট কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেওয়ার এক পর্যায় ওই প্রতিষ্ঠানের স্থাবর-অস্থাবর জমিজমাসহ বিশাল অবকাঠামো বিক্রয় করে দেওয়া হয়। এর পর থেকে এই অঞ্চলের পাট চাষিরা পাটের আবাদ করলেও বিক্রয় করার সময় মৌসুমি ফরিয়াদের কাছে জিম্মি হয়ে পরে। ফলে তারা আশানূরুপ দাম কখনো পেতেন না। কিন্তু চলতি মৌসুমে হঠাৎ করে পাটের মূল্য ভালো পাওয়ায় চাষিরা খুশি। ধারণা করা হচ্ছে আগামী মৌসুমে এই অঞ্চলের পাট চাষের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে। এর মধ্যে উপজেলার মাঠে মাঠে পাট কাটা, জাগ দেয়া, আঁশ ছাড়ানো এবং শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে চাষিরা। কয়েক দিনের বৃষ্টি পাতে পাট শুকানো নিয়ে কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে চাষিদের। হাট-বাজারে পুরোদমে উঠতে শুরু করেছে নতুন পাট। এই এলাকায় দুই জাতে পাট মাঠ পর্যায় চাষ করতে দেখা যায়। তোষা ও মেস্তা জাত। গত বছরের তুলনায় এবছর পাটের দাম বেশি হওয়ায় খুশি চাষিরা। মঙ্গলবার উপজেলার ত্রিমোহনী হাটে মানভেদে প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ২শ’ টাকা থেকে শুরু করে ৩ হাজার ৬শ’ টাকা দরে। উপজেলার কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এই মৌসুমে ৮টি ইউনিয়নে প্রায় ৫৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে ভালো বাজার মূল্য না পাওয়ায় চাষিরা পাট চাষের জন্য বেশি মনোযোগ ছিলোনা। এবারে পাটের দাম ও ফলন ভালো পাওয়ায় আগামী মৌসুমে পাট চাষ বাড়বে বলে এমনটাই ধারণা করছেন কৃষি বিভাগ। উপজেলার দূর্গাপুর গ্রামের পাট চাষি রতন খান জানান, আমি ধান চাষের পাশাপাশি প্রায় ৬বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। পাটের ফলন বাজারদর ভালো পেয়েছি। এর ধারাবাহিকতা থাকলে আগামীতে আরো পাট চাষের পরিমাণ বৃদ্ধি করবো। নওগাঁ সদর উপজেলার গাংজোয়ার গ্রামের মৌসুমি পাট ব্যবসায়ী লিটন জানান, আমি বেশ কয়েক বছর আগে থেকে পাটের ব্যবসা করি। বিগত দিনের পাটের মূল্য চাষিরা ভালো পায়নি। এবারে পাটের বাজারদর ভালো আছে। রাণীনগর কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ফারজানা হক জানান, পাটের চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমরা বিনামূল্যে উন্নতমানের পাটবীজ দিয়েছি। আমাদের পরামর্শে চাষিরা সঠিক সময়ে পাটচাষ শুরু করেছে। আবহাওয়া অনূকুলে থাকায় রাণীনগরে পাটচাষ ভালো হয়েছে। পাটের ফলন ও দাম বেশি পাওয়ায় চাষিরা আগামীতে আরো পাট চাষ বৃদ্ধি পাবে। এই মৌসুমে প্রায় ৫৫ হেক্টর জমিতে পাটচাষ হয়েছে।